অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ব্যাংকগুলোতে সরকারের আমানতের স্থিতি কমে গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের গত মার্চ পর্যন্ত এই ছয় মাসে ব্যাংকে সরকারের আমানত কমেছে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের সরকারের অংশও কমে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়া ও খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। তবে আগে সার্বিকভাবে আমানত কমলেও এখন বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের আমানত বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আগে প্রতিবছরই ব্যাংকগুলোতে সরকারের আমানত বাড়ছিল। অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সরকারের আমানত কমে যায়। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আমানত বাড়লেও আবার ২০২৪ সালের মার্চে তা কমে যায়। বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে। ফলে আমদানি খাতে রাজস্ব আয়ও কমেছে। দেশের ভেতরেও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য কমেছে। ফলে এ খাত থেকেও রাজস্ব আয় কমেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয় হচ্ছে না। অন্যদিকে মন্দার কারণে বিভিন্ন খাতে সরকারের চলতি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে সরকার আর্থিক সংকটে পড়ে। এ সংকট মোকাবিলায় সরকার ব্যাংকে থাকা আমানতের অর্থ খরচ করতে থাকে। অন্যদিকে রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক অনুদান কমার কারণে সরকারের কোষাগারে অর্থ জমার পরিমাণ কমে যায়। ফলে সরকারের ব্যাংকে থাকা আমানত কমতে থাকে। এর মধ্যে সরকার ঋণ করে কিছু আমানত বাড়ালেও তা স্থায়ী হচ্ছে না।
এদিকে ব্যাংকে সরকারের আমানত কমার পাশাপাশি ব্যাংক খাতে মোট আমানতে সরকারের অংশ কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে বেসরকারি খাতের অংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ব্যাংকে সরকারি খাতের আমানত কমেছে ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে আমানত কমেছে ৫ হাজার ৫৩৩ কোটি ৬৫ লাখ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এই ছয় মাসে ব্যাংকে সরকারের আমানত কমেছে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকে সরকারের আমানত ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ১৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। ওই সময়ে আমানত বেড়েছিল ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মোট আমানত বেড়েছিল ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি খাতের আমানত বেড়েছিল বেশি। রেকর্ড রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক অনুদান আসায় সরকারের হিসাবে আমানত বেড়েছিল।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকে সরকারের আমানত ছিল ২ লাখ ৬৭ কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ওই বছর আমানত বেড়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মোট আমানত বেড়েছিল ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই বছরে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছিল। যে কারণে আমানতও কমে গিয়েছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকে সরকারের আমানত ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। যা ছিল মোট আমানতের ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ওই সময়ে সরকারি আমানত কমলেও মোট বেড়েছিল ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সরকারের ব্যয় বেড়েছিল ও আয় কমেছিল। এ কারণে আমানত প্রবাহ কমেছিল।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সরকারের আমানত জমা ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। যা ছিল মোট আমানতের ১৭ দশমিক ০২ শতাংশ। ওই বছরে সরকারি আমানত বেড়েছিল ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। মোট আমানত বেড়েছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সরকারি আমানতের চেয়ে বেসরকারি খাতের আমানত বেশি বেড়েছিল।
২০২৪ সালের মার্চে ব্যাংকে সরকারের আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকায়। যা ছিল মোট আমানতের ১৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ওই সময়ে আমানত কমেছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মোট আমানত বেড়েছিল দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-মার্চের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। কিন্তু সরকারি আমানত কমেছে। এদিকে আলোচ্য বিষয় হলো প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয়ে ঘাটতি ছিল। অথচ এর বিপরীতে সরকারের খরচ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকে সরকারের আমানত কমেছে।