নানা অজুহাতে রাজধানী ঢাকার বাজারে বেড়েই চলেছে কাঁচা মরিচের দাম। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি। ছোট জাতের দেশীয় কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিতে। তবে হাইব্রিড মরিচের দাম কিছুটা কম। হঠাৎ করে দাম বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। ওদিকে আবারো অস্থির চালের বাজার। সরবরাহ ঠিক থাকলেও কেজিতে ৮ টাকা বেড়েছে সরু চালের দাম। পাশাপাশি মুরগির দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা মরিচের মৌসুম শেষের দিকে।
এ ছাড়া ঈদের বন্ধের কারণে সরবরাহ কম হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাক ভাড়াও বেড়েছে। এজন্য কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, দেশি ছোট জাতের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া হাইব্রিড জাতের বড় আকারের মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকায়। তবে অপেক্ষাকৃত কম দরে বিক্রি হচ্ছে কাওরান বাজারে। এখানে পাইকারি বাজার থাকায় দাম কিছুটা কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ বাজারে দেশি ও হাইব্রিড উভয় জাতের মরিচের কেজি ৩০০ টাকার একটু কম। গত বুধবারও রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি ও হাইব্রিড জাতের কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। সেই হিসাবে দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা। তবে মহল্লার দোকান ও ছোট বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর মালিবাগ কাঁচা বাজারে এসেছেন সাব্বির মিয়া। কাঁচা মরিচ কিনতে গিয়ে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছেন তিনি। কারণ বাজারে তার কাছ থেকে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ টাকা চাওয়া হয়েছে, আর হাইব্রিড মরিচের দাম চাওয়া হয়েছে ৩২০ টাকা। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। তবুও বাধ্য হয়ে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় কিনতে হলো। কাঁচা সবজি বিক্রেতা ওবায়দুর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম, পাইকারি বাজারেই আমাদের অতিরিক্ত বাড়তি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। ফলে সেই প্রভাব এসে পড়েছে খুচরা বাজারে।
আরেক বিক্রেতা খায়রুল বলেন, কিছুদিন আগে কাওরান বাজারে পাল্লাপ্রতি (৫ কেজি) কাঁচা মরিচের পাইকারি দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। এখন সেই মরিচের দাম পড়ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আর দেশি মরিচ প্রতি পাল্লার দাম পড়ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। যে কারণে খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ ৩২০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমের মূল কারণ মৌসুম শেষ। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। নতুন করে কাঁচা মরিচ ওঠার আগ পর্যন্ত এ দাম বাড়তিই থাকবে। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া বলেন, ঈদের সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় যানজট, পরিবহন ভাড়া অনেক বেশি হওয়ায় ঢাকায় কাঁচা মরিচ তুলনামূলক কম আসছে।
এদিকে আবারো অস্থির চালের বাজার। সরবরাহ ঠিক থাকলেও কেজিতে ৮ টাকা বেড়েছে সরু চালের দাম। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ আগে যে সরু চাল ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৮ টাকা। এ ছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভালোমানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮৫ টাকায়। সঙ্গে প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায়, যা গত বছর একই সময় ৪৮-৫০ টাকা ছিল। মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ও বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, যা গত বছর ঠিক একই সময় ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিলাররা আবারো চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাজার তদারকি সংস্থার এ বিষয়ে নজর দেয়া দরকার।
শুধু চাল নয়, ডাল ও ময়দার দামও বেড়াছে। প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা, যা সাতদিন আগেও ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ও খোলা ময়দা কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে সাধারণত কোরবানির ঈদের পরপর মুরগির বাজার কিছুটা নিম্নমুখী থাকে। তবুও বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির সংকটের অজুহাতে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে বাজারভেদে দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা। বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। মুরগি বিক্রেতা তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা। এ ছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায়। ঈদের আগেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা ৭৮০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন। আর প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।