শিক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া। শিক্ষার মাধ্যমে জাতির উন্নতি, সভ্যতা ও সমাজ তার মূল্যবোধ প্রজন্মের পর প্রজন্মে বিকশিত হয়। সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষার ধারণা, বিষয়বস্তু, শিক্ষা কারিকুলাম, শিক্ষাদান পদ্ধতি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। প্রাচীনকাল থেকে ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বহু উত্তরণ ঘটেছে। মানব সভ্যতা পূর্বে যেমন ছিল, বর্তমানে তেমন নেই। মানবসভ্যতার অন্যতম একটি নিয়ম হলো ক্রমবিকাশ লাভ। আর এই ক্রমবিকাশের মূলে রয়েছে শিক্ষা। সভ্যতার শুরুতে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার রূপ যেমন ছিল তা পর্যায়ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান আধুনিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানবসভ্যতার বিবর্তনের মূলে যেমন শিক্ষার ভূমিকা রয়েছে, তেমনই শিক্ষার বিবর্তনেও মানুষের ভূমিকা রয়েছে।
মানুষ নিজের প্রয়োজনেই শিক্ষা গ্রহণ করে এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়। আর উত্তম শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থাই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যুগে যুগে শিক্ষাবিদগণ পরিবর্তন হওয়া সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত প্রয়োজন, সামাজিক কাঠামো, অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা, জাতীয় উন্নয়ন, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করেছেন। এই প্রবন্ধে পাঠক প্রাচীন ভারত থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার ঐতিহাসিক বিকাশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারবেন।
বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে ইতিহাসের বাধাবিপত্তির পথ বেয়ে বহু পিছনে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। নিম্নে শিক্ষার ইতিহাসকে চার আমলে ভাগ করে আলোচনা করা হলো :
১. প্রাক-মুসলিম এবং মুসলিম আমলের ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
২.ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা।
৩. পাকিস্তান আমলের শিক্ষাব্যবস্থা।
৪. বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
১) প্রাক-মুসলিম এবং মুসলিম আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা : প্রাক-ইসলামী যুগেই চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলিম আরবদের বসতি গড়ে উঠেছিল। ড. আব্দুল করীম তার ‘চট্টগ্রামের ইতিকথা’ গ্রন্থে বলেন, খ্রিষ্টীয় অষ্টম/নবম শতাব্দীতে সিলেট ও চট্টগ্রামের সাথে আরবীয় মুসলমান ধর্মপ্রচারক ও বণিকদের যোগাযোগ ছিল। আরব ধর্মপ্রচারক ও বণিকরা সিলেট, চট্টগ্রামে স্বাধীন রাজ্য গঠন না করলেও আরবদের আসা যাওয়ার কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচার ও মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এমনকি মুসলিম ভূস্বামীগণ তাদের নিজেদের খরচে প্রতিবেশী দরিদ্র ছাত্রদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য শিক্ষক নিযুক্ত করতেন। তারা শিক্ষার্থীদের কুরআন, হাদীস, ইসলামী শিক্ষাদান করাতেন। মুসলমান ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সরাসরি অথবা দান, ওয়াকফ বা ট্রাস্টের মাধ্যমে ইসলাম শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা রাখতেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে মুসলমান জাতির ধর্মীয় ও নৈতিক মান উন্নয়ন করা। তারা ওহি ও জাগতিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করাতো। ফলে এ শিক্ষার মাধ্যমে ঘরে ঘরে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন নৈতিক চরিত্রের অধিকারী আদর্শ মানুষ তৈরি হয়। এছাড়াও মুসলমান সন্তানদের ওহি ও জাগতিক শিক্ষা তাদের বৈঠকখানা, বাংলোয়, খানকার দরগায়, বাড়ির আঙিনা ইত্যাদি জায়গায় চালু হয়েছিল। ফলে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে তখন তাদের ঘরে ঘরে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন নৈতিক চরিত্রের অধিকারী আদর্শ ও আলোকিত মানুষ তৈরি হতো।
প্রাক-মুসলিম এবং মুসলিম আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা বলতে ভারতের প্রাথমিক শিক্ষার ইতিহাসকেই বুঝিয়ে থাকে। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, সভ্যতা ও সংস্কৃতি এবং ধন সম্পদের দিক থেকে ভারতবর্ষ ছিলো বিত্তশালী। ফলে দ্রাবিড়, আর্য, মঙ্গোলিয়া, তুর্কি, পাঠান, মুঘল, ইংরেজ প্রভৃতি জাতি ভারতে আগমন, বসবাস ও শাসন করেছে যুগ যুগ ধরে।
আনুমানিক ২০০০ বছরেরও পূর্বে প্রাচীন ভারতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে। প্রাচীন ভারতের এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ধর্মকেন্দ্রিক। তাই ধর্মের ভিত্তিতে প্রাচীন ভারতের এই শিক্ষাব্যবস্থাকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা : (১) বৈদিক শিক্ষা, (২) বৌদ্ধ শিক্ষা এবং (৩) মুসলিম শিক্ষা। প্রাচীন ভারতের এই তিন শ্রেণির শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো :
প্রিাচীন ভারতে বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থা : বেদ হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এবং এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত। বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান। বৈদিক চিন্তাধারা ও দার্শনিক মতবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাব্যবস্থা ‘ব্রাহ্মণ্য’ শিক্ষা নামে অভিহিত। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় বর্ণ বৈষম্য ছিল প্রকট। ফলে এ শিক্ষা সর্বজনীন না হয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। এ ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ শিক্ষার্থীরা ঢোল ও পাঠশালার উচ্চতর জ্ঞান লাভের সুযোগ পেত। ক্ষত্রিয় শিক্ষার্থীরা রাজগৌরব বা যুদ্ধবিদ্যা লাভ করতো। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা কৃষি ও ব্যবসার বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতো।
প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা : গৌতম বুদ্ধের অহিংস নীতির ভিত্তিতে বৌদ্ধ শিক্ষার আবির্ভাব ঘটে। নির্বাণ লাভ বৌদ্ধধর্মের শেষ লক্ষ্য। অষ্টমা বা অষ্টপন্থায় নির্বাণ লাভ ছিল বৌদ্ধ শিক্ষার মূল কথা। সৎ চিন্তা, সৎ বাক্য, সৎ বিশ্বাস, সৎ উপার্জন, সৎ ধ্যান, সৎ প্রচেষ্টা ও সৎ স্মৃতি হচ্ছে অষ্টমার উপাদান। শিক্ষার মাধ্যমে অষ্টমা চর্চা এবং তা ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে দুঃখময় পৃথিবী থেকে নির্বাণ ছিল বৌদ্ধ শিক্ষার লক্ষ্য। শিশুর ছয় বছর থেকে শিক্ষা শুরু হতো এবং চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত চলত। গণতন্ত্র ছিল বৌদ্ধ শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং শিক্ষার দ্বার সকলের জন্য খোলা ছিল।
প্রাচীন ভারতে মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা : মুসলমানরা প্রথমে বৈঠকখানায়, বাংলোয়, বাড়ির আঙিনায় ও মক্তবে শিক্ষার্র্থীদের শিক্ষাদান করাতেন। অতপর মুসলিম শাসনামলে প্রাথমিক শিক্ষা ছিল মসজিদ কেন্দ্রিক। মসজিদগুলো মক্তব হিসেবে ব্যবহৃত হতো। চার বছর বয়সে শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে কলেমা পাঠের মাধ্যমে মক্তবে ভর্তি হতে হতো। নামায পাঠের জন্য মক্তবে প্রয়োজনীয় সুরা-কেরাত শিক্ষা দেওয়া হতো এবং মূল পাঠ শুরু হতো ৭ বছর বয়সে। মুসলিম শিশুগণ মক্তবে কুরআন, আরবি ও ইসলাম শিক্ষা অর্জন করত। এর পাশাপাশি পড়ালেখা ও সাধারণ হিসাবনিকাশও শিক্ষা দেয়া হতো। মসজিদের ইমামগণ মক্তবে শিক্ষকতার কাজ করতেন।
বাংলার প্রথম সুলতান ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী ছিলেন অত্যন্ত বিদ্যোৎসাহী এবং তিনি দিল্লীর স¤্রাট কুতুবউদ্দীন আইবেকের অনুকরণে দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদরাসা, দরগাহ ও কলেজে কুরআন-হাদিস শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করেন। বিশেষ করে মুসলিম সুলতানগণ নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষাবিস্তারে অধিকতর মনোযোগী ছিলেন এবং শিক্ষা প্রসারের জন্যে তাঁরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করতেন। মুসলিম শাসকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মুসলিম জমিদার, মুসলিম ধনাঢ্য ব্যক্তিগণসহ মুসলিম প্রধানগণ নিজ নিজ এলাকায় মক্তব, মাদ্রাসা, কলেজ এবং দরগাহ কায়েম করতেন এবং এসবের ব্যয়ভার বহনের জন্য প্রভুত ধনসম্পদও জমিদান করতেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করার মাধ্যমে মুসলমান শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন আদর্শ মানুষ তৈরি করতেন।
২) ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা : মুসলমানদের হাত থেকে ইংরেজদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হওয়ার পর মুসলমানদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন যতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে শিক্ষাবিস্তারে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল তা সব ছিল তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অর্থাৎ এ দেশবাসীকে কেরানী ও তাদের অনুসারী গোলাম তৈরি করার জন্য কুরআনিক শিক্ষাকে ধ্বংস করা হয়েছিলো।
১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর মুসলামানদের শিক্ষাদীক্ষা’তো দূরের কথা, সত্য কথা বলতে কী, ইংরেজ শাসনের শুরুর পর একশত বছর যাবৎ মুসলমান জাতির অস্তিত্বই ছিল প্রকৃতপক্ষে বিপন্ন। যেখানে তাদের শুধু বেঁচে থাকার প্রশ্ন, সেখানে তারা সন্তানদের শিক্ষাদীক্ষার চিন্তা করবে কী করে? ইংরেজদের আগমনের পর তৎকালীন ভারতে গোটা মুসলিম জাতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উলিয়াম হান্টার বলেন, “ভারতবর্ষের ঘটনাবলীর সাথে আমি বিশেষভাবে পরিচিত। আমি যতদূর জানি, তাতে ইংরেজ আমলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতবর্ষের মুসলমান অধিবাসীগণ।”
বাংলাদেশের শিক্ষানীতির ইতিহাস প্রসঙ্গে এ নিবন্ধে ব্রিটিশ আমলের ১১টি শিক্ষানীতি, শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ওহির শিক্ষা এবং নৈতিক ও ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধকে ধ্বংস করা।
নিম্নে ব্রিটিশ আমলের ১১টি শিক্ষা কমিশন বা শিক্ষানীতি উল্লেখ করা হলো :
১) ১৭৯২ সালের চার্লস গ্র্যানেন্টর শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশ মালা :
২) ১৮৩৫ সালের লর্ড মেকলের শিক্ষাবিষয়ক প্রতিবেদন : লর্ড মেকলে ছিলেন ব্রিটিশ আইন সভার সদস্য। তিনি শিক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ১৮৩৫ সালের মার্চ মাসে তা আইনে পরিণত করেন।
৩)১৮৪৪ সালের উইলিয়াম অ্যাডামসের শিক্ষাবিষয়ক জরিপ কমিটি গঠন করা হয়।
৪) ১৮৫৪ সালের ২১ জুলাই চালর্স উডের উডস ডেসপ্যাচ এর শিক্ষা কমিশন।
৫) ১৮৮২ সালের উইলিয়াম হান্টারের শিক্ষা কমিশন : উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে ১৮৩২ সালে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় এবং ১৮৮৩ সালে কমিশন প্রাথমিক স্তরে পাশ্চাত্য শিক্ষার সুপারিশ পেশ করেন।
৬) ১৮৯৮ সালের লর্ড কার্জনের নামে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। ১৯০১ সালে তিনি শিমলা সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
৭) ১৯০৪ সালের ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন শিক্ষা কমিশন।
৮) ১৯১৭ সালের স্যাডলার শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়।
৯) ১৯২৯ সালের হার্টিস শিক্ষা কমিশন ঘোষণা করা হয় এবং এই কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দেন।
১০) ১৯৩৪ সালের সাফ্রু শিক্ষা কমিশন এবং
১১) ১৯৪৪ সালের জন সার্জেন্ট শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় এবং এই কমিটি শিক্ষানীতির রিপোর্ট পেশ করে।
বৃহত্তর ভারতে ব্রিটিশ শাসকগণ কর্তৃক গঠিত এই ১১টি শিক্ষা কমিশন তৈরী করার মূল উদ্দেশ্য ছিল ৪টি :
১) ব্রিটিশ শিক্ষার মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের মানুষকে ইংরেজদের গোলাম বানানো।
২) ভারতবর্ষের মানুষকে সভ্যতায়, নম্রতায় ইংরেজদের ন্যায় নৈতিকতা ও চরিত্রহীন মানুষে পরিণত করা।
ররর) ওহির শিক্ষা তথা ইসলামী শিক্ষা ও কুরআনের শিক্ষাকে ধ্বংস করা।
৩) আধুনিক ও মাদরাসা শিক্ষা – এই দুই ভাগে মুসলমানদের শিক্ষাকে বিভক্ত করা হয়।
ফলে তাদের সকল উদ্দেশ্যই ভারতবর্ষে বাস্তবায়িত হয়েছিল। তাইতো লর্ড মেকলের শিক্ষাব্যবস্থাই বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে স্থায়ীভাবে চালু হয় এবং আজও উক্ত শিক্ষাব্যবস্থার আলোকেই ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে।
ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শিক্ষা নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং সেগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এ অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হতে থাকে। যদিও মেকলের শিক্ষানীতিকে এ অঞ্চলের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, ব্রিটিশ শাসনামলে তাদের রচিত শিক্ষাব্যবস্থার কারণে ধীরে ধীরে ইসলামী শিক্ষা ও স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষাকে ধ্বংস করা হয়। তারা মুসলিম শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করে এ অঞ্চলে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে প্রধান করে তুলেছিলো। ভারতবাসীও ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হয়েছে। কারণ সমাজ রাজনীতি ও অর্থনীতির যে কাঠামো গড়ে উঠেছিলো সেসময়ে সেগুলোর সঙ্গে শিক্ষার কাঠামোকে সেক্যুলার করে তৈরি করা হয়েছে। ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে গেলেও পাকিস্তান আমলে ব্রিটিশদের তৈরি করা নৈতিক ও ইসলামী মূল্যবোধ বিনাশকারী শিক্ষানীতির অনুকরণেই শিক্ষাব্যবস্থা চলতে থাকে। যা মুসলমানদের জন্য দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।