সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। অনেক জায়গায় পানি কিছুটা নেমে গেলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে বেশিরভাগ নদী। সিলেট বিভাগের চার জেলায় এখন ১৬ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন তাদের বেশিরভাগই পড়েছেন খাবার সংকটে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আশ্রিতদের। তাই একরকম মানবেতর পরিস্থিতিতেই দিন কাটছে বানভাসি পরিবারগুলোর। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে দুর্ভোগ আরও বেশি। এদিকে পানিতে ডুবে মৌলভীবাজার সদর ও বড়লেখা এবং সিলেটের গোয়াইনঘাটে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী, দুই শিশু ও এক যুবকসহ চারজন মারা গেছে। বন্যা পরিস্থিকতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামি ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নদীভাঙনে অনেক বাড়িঘর বিলীন হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো
খবর :
সিলেট : সিলেটে বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকায় অনেক এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভাটি এলাকায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে এবং কোনো কোনো এলাকায় পানি বাড়ছে। প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১৬ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কিছুটা কম হলেও এখনো দুটি নদীর ছয়টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়িঘরে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী সিলেট জেলায় প্রায় ৯ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন প্রায় ২২ হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকালে ১৩ উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন। জেলার ৬৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ হাজার ৭৮৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ জন। এর মধ্যে ওসমানীনগরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ও গোয়াইনঘাটে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২০০। সিটি করপোরেশনের ২৩টি ওয়ার্ডে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ৫৫ হাজার। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২০ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। এদিকে সিলেট জেলায় বুধবার রাতে কোনো বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি। তবে উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত থাকায় জেলার প্রধান নদী সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায়ও।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট নগরীর তালতলা, জামতলা, মাছুদিঘীরপাড়, উপশহর, যতরপুর, সোবাহানীঘাট, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, তোপখানা, বেতেরবাজার এলাকার রাস্তাঘাটে হাঁটুসমান পানি রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পানি আগের থেকে কিছুটা কমলেও বৃষ্টি শুরু হলে আবার বেড়ে যাবে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, কোথাও পানি কমেছে, আবার কোথাও বেড়েছে। জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
এদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। বৃহস্পতিবার নগরীর ৩৯নং ওয়ার্ডের টুকেরবাজার এলাকার শাদীখাল পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নগরকে আগাম বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সুরমা নদী ড্রেজিং করা হবে। এজন্য দেশের ৯টি স্থানে ড্রেজিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীতে পলিমাটি থাকার কারণে এর আগেও ড্রেজিং কাজ ব্যাহত হয়েছিল। উজান থেকে আসা পানির সঙ্গে পলিমাটিও আসে। এগুলো নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। আলাপ করে দ্রুত সুরমা নদী ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে নদী ভাঙন, পলিমাটি অপসারণে নিয়মিত নদী খনন করা হবে বলেও জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন সড়ক দিয়ে পানি প্রবাহের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। মিঠামইনে পানি আটকে থাকেলে এগুলোও দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নৌকা ডুবে নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার কাপনা নদীতে ঘুরতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হওয়া যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদ সাদাত হোসেন নামের এই যুবককে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তিনি মারা গেছেন। সাদাত উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের শিব্বির আহমদের ছেলে।
সুনামগঞ্জ : টানা প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভারত সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন ১৯ হাজার জন। তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বুধবার রাতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি উজানে কিছুটা কমেছে। কিন্তু ভাটির দিকের নদীগুলোর পানি বেড়েছে। হাওড় উপচে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে দিরাই পয়েন্টে।
বুধবার রাতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জ সদরের হাওড়াঞ্চল ও পৌর শহরের পাড়া-মহল্লায় পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিত অপরিবর্তিত রয়েছে। বেসরকারি হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলার ৮৮ ইউনিয়নের কমপক্ষে আট লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। ছাতক গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, দোয়ারাবাজার ছাতক সড়ক, জামালগঞ্জ সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা সড়ক ডুবে জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার চারটি পৌরসভা এলাকাসহ ৭৮ ইউনিয়নের ১০১৮ গ্রামের ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৭ জন মানুষ বন্যা ভোগান্তিতে আছেন। ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যার্ত মানুষ। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বন্যার্তদের জন্য জেলায় ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের জন্য ১০ মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দ ও বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে।
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জগন্নাথপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘরসহ তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ। গ্রামীণ ও নিুাঞ্চলের সড়ক ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ১৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৮টি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জগন্নাথপুরের স্বেচ্ছাসেবী টিম ‘ফেয়ারফেইস’ শুকনো খাবার ও মোমবাতি নিয়ে উপজেলার প্রত্যন্ত স্থানে বন্যার্তদের পাশে থেকে কাজ করছে। বন্যার্তদের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজারে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু : মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠলেও অধিকাংশ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। কোথাও সামান্য ত্রাণ পৌঁছালেও এখনো বরাদ্দ অপ্রতুল। মানুষের সঙ্গে একইভাবে বিপাকে পড়েছে গবাদিপশুও। সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলাসহ জেলার সাতটি উপজেলার সিংহভাগ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই এখন পানিতে নিমজ্জিত। মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বেড়ে দুদিন ধরে এসব গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ। তাই শুকনো চিড়া-মুড়ি দিয়েই
ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা। দুই বছর ধরে পঙ্গু জুলেখা বেগম। ছেলে দিনমজুর। বন্যায় বন্ধ হয়ে গেছে কাজ। তাই ঘরে নেই খাবার। বৃহস্পতিবার সারাদিন চুলা জ্বলেনি। অসুস্থ মাকে নিয়ে কোথায় যাবে সেই চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছেন ছেলে নুরুল মিয়া। হামরকোনা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল মিয়া বলেন, আমার অসুস্থ মাকে খাবার দিতে পারিনি। কাজে যেতে পারিনি। সরকারি কোনো ত্রাণও আসেনি। আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি। দাউদপুর আশ্রয়কেন্দ্রে আসা রহিমা বলেন, সাঁতার দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি। আশ্রয়কেন্দ্রে এসে এখন আমরা খাদ্যের অভাবে পড়েছি। এদিকে সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পশ্চিম শ্যামেরকোনা এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে এক কিশোর ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো চাঁদনিঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের জমির আলীর ছেলে হৃদয় (১৫) ও ফয়ছল মিয়ার ছেলে সাদি (১০)। মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন চৌধুরী বলেন, মারা যাওয়া দুই শিশুর পরিবারকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, জি.আর. চাল ৪২২ মে.টন ও ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৪৬৫ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১২০০ প্যাকেট রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগরের বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যদুর্গত এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ত্রাণের মজুত আছে। ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।
বড়লেখায় পানিতে ডুবে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে এক স্কুলছাত্রী। তার নাম আয়শা বেগম (১২)। সে উপজেলার ভাগাডহর গ্রামের মো. সমছ উদ্দিনের মেয়ে এবং স্থানীয় গল্লাসাঙ্গন উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী ছিল। স্থানীয় বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বন্যার পানিতে ডুবে স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিছু স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। পানি আরও বাড়লে কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে পানি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে নবীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক ডুবে দ্রুত গতিতে পানি প্রবেশ করছে কসবা গ্রাম, কসবা বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে। পারকুলে অবস্থিত কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এবং বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২-৩ হাত নিচে বর্তমানে পানি রয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ ১৬ নদীর পানি বেড়েই চলছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ১৫ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক। ডুবে গেছে সবজি খেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল। কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ-সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বৃহস্পতিবার যাত্রাপুর ও পাঁচগাছি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জিঞ্জিরাম, ধরনী ও কালজানি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ১৯৮টি গ্রামের মধ্যে ৬৫টি গ্রামে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টি বিদ্যালয় ও ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ভেলায় করে চলাচল করছে প্লাবিত এলাকার মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে গবাদিপশু নিয়ে। অনেক পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে স্থলবন্দরসহ এলাকার দরিদ্র মানুষ। ব্রহ্মপুত্র নদীতে পানি বৃদ্ধি ও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়ে নদীতে বিলীন হয়েছে ৪০টি বাড়ি। তলিয়ে গেছে ফসলের খেত। কোনো জনপ্রতিনিধি খোঁজখবর নিতে আসেননি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বন্যার্তদের জন্য ৩ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী আসছে।
বগুড়া : জেলার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়ায় উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে চরে বসবাসকারীরা বন্যার আতঙ্কে রয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
নেত্রকোনা : টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দা উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে ঢুকে যাওয়ায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। নেত্রকোনা-১ আসনের সংসদ-সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহী বলেন, আমি দুর্গাপুর, কলমাকান্দার বেশকিছু গ্রামের প্লাবিত মানুষের বাড়িঘরে গিয়েছি। তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীর পাড় ভাঙন। বিগত দিনে ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল বেঁচে ছিল, সেটিও ভাঙনের আশঙ্কায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন নদীপারের শত শত ভাঙনকবলিত মানুষ। নদীপারের মানুষের অভিযোগ, গেল বছর ভাঙনরোধে খানুরবাড়ী, চিতুলিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে নামমাত্র নিম্নমানের জিও ব্যাগ ফেলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেগুলো এখন ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিজ বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ফেলে। দরিদ্র পরিবারের বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ফেলা হয় না।
এছাড়া মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদীর ৩টি পয়েন্টে ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুলাউড়ায় ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৪৩০টি পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং বানভাসি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।