কুরবানির ঈদের পর ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকলেও কৌশলে অস্থির করা হচ্ছে বাজার। সরবরাহ ঠিক থাকলেও কেজিতে ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে সরু চালের দাম। সঙ্গে মসুর ডাল ও ময়দার দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা। এ সময় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম থাকলেও সংকটের অজুহাতে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে বাজারেভেদে দাম হাকানো হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে আদার দামও। বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে এবং সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
টিসিবি বলছে, খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ আগে যে সরু চাল ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই একই চাল বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা। সাতদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৮ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভালোমানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮৫ টাকায়। সঙ্গে প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা, যা গত বছর একই সময় ৪৮-৫০ টাকা ছিল। মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ও বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ঠিক একই সময় ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কাওরান বাজারে আসা হুমায়েরা বেগম বলেন, ঈদের পর বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কম। প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা ছাড়া কেউ বাজারে আসছেন না। তবে এর মধ্যেও পণ্যের দাম কী করে বাড়ে? এগুলো সব বিক্রেতাদের কারসাজি।
কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে মিলাররা ফের চালের দাম নিয়ে কারসাজি করছে। মিল পর্যায় থেকে বাড়াচ্ছে দাম। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাজার তদারকি সংস্থার এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
এদিকে শুধু চাল নয়, চালের সঙ্গে ডাল ও ময়দার দামও বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা, যা সাতদিন আগেও ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ও খোলা ময়দা কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম না বাড়লেও মাসের ব্যবধানে কিছুটা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫২ টাকা, যা এক মাস আগেও ১৫০ টাকা ছিল। প্রতি লিটার বোতল সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ টাকা, যা আগে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। পাম অয়েল সুপার প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা। এছাড়া রাইস ব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৬ টাকা, যা এক মাস আগে ১৭৫ টাকা ছিল।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৮০-৯০ টাকা ছিল। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭৫ টাকা। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৮৫-৯৫ টাকা ছিল। এক মাস আগে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ছিল ৩০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০০০-১১০০ টাকা। নয়াবাজারের খুচরা মুরগি বিক্রেতা নাজমুল বলেন, কাপ্তান বাজারে পাইকাররা এক হয়ে ঈদের বন্ধের মধ্যে ফের ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়াচ্ছে। যাতে ঈদের পর সবার বাসায় গরুর মাংস শেষ হলে মুরগি বেশি দামে কিনতে হয়। এই ছক করে তারা আগে থেকেই কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়েছে। ফলে বাড়তি দাম দিয়ে কিনে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।