মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হলেও মশা নিধন কার্যক্রম দু’মাস ধরে বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বর্ষার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে শঙ্কিত। তবে, চসিক বলছে, মশা নিধন কার্যক্রম শিগগির শুরু করা হবে। মশা নিধনে পর্যাপ্ত ওষুধ মওজুদ ও জনবল রয়েছে। শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
চসিক সূত্রে জানা যায়, বর্ষা শুরু হলেও অগ্রাধিকার ছিল কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ। জুন থেকে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাবের মৌসুম শুরু হলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই প্রবণতা বিবেচনায় রেখে মশা নিধনের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মশা নিধনের ওষুধ, লোকবলসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই। কুরবানির ছুটির পর মশা নিধনের বিশেষ কর্মসূচিতে নামবেন বলে জানান চসিক কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল ১৪ হাজার ৮২জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৭ জন। যারা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা তালিকাভুক্ত হলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজারের ওপরে হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৩জন।
২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীদের ৬৫ শতাংশ পুরুষ, প্রতি পাঁচজনে একজন শিশু। আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগই শহরে বাস করে।
গতবছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ভয়ংকর আকার ধারণ করে। এবারও নগরবাসী মশার ব্যাপক উপদ্রবের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে শঙ্কিত। ডেঙ্গুর প্রকোপ চরম আকার ধারণ করলেই মশা নিধনের তোড়জোড় শুরু করে চসিক। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমলে তারা আবার ঝিমিয়ে হয়ে পড়ে। ডেঙ্গুর মৌসুম চলে গেলে নামমাত্র কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকে চসিক। নগরবাসীকে স্বস্তিতে রাখতে পুরো বছর মশা নিধনের কর্মসূচি চালু রাখা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গু রোগের শঙ্কা জানিয়ে চসিকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এবার ডেথ রেট নিয়ে বেশি শঙ্কা আছে। গতবার যারা আক্রান্ত হয়েছে, তারা আবার আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, গত দুই মাসে চসিকের মশা নিধনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে নালা-নর্দমা আর ভবনের আশপাশে ওষুধ ছিটানো হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে কম। রুটিন কাজের অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে। এতে কমছে না মশার উপদ্রব।
ডেঙ্গুর প্রভাব মোকাবিলায় মশা নিধনসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, গত বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি একেবারে সব ধারণাকে পাল্টে দেয়। সবাই সচেতন না হলে এ বছর কী পরিস্থিতি হবে, সেটা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে। তবে ভালো কিছু যে হবে না, সেটা সহজেই সবার বুঝা প্রয়োজন।
চসিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী জানান, কুরবানির আগে আগের জমে থাকা বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। মশা নিধন কাজের জন্য যে লোকবল আছে, তাদের বর্জ্য অপসারণের কাজে নিয়োগ করা হয়। এখন বড় আঙ্গিকে মশা নিধনের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করবে চসিক।
চট্টগ্রামে ২০২১ সালে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২৭১ জন। মারা গিয়েছিলেন ৫জন। ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রাম জেলা ও শহরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল ৫ হাজার ৪৪৫ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের। ডেঙ্গু রোগের চিত্র ভয়ংকর আকার ধারণ করে ২০২৩ সালে। ওই বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল ১৪ হাজার ৮২জন। এই সংখ্যা আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৭ জন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন রানা বলেন, মশা নিধনে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগে জনসচেতনতা কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রত্যেক কাউন্সিলরের নেতৃত্বে এলাকায় এলাকায় শুরু করা লিফলেট বিলি ও মাইকিং। চসিক জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মশা নিধনের কার্যক্রম চালাবে পরিচ্ছন্ন বিভাগ।