দেশের নদীবেষ্টিত জেলাগুলোতে দেখা দিয়েছে বন্যার পদধ্বনি। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু অঞ্চল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকাতে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে সিলেট-মৌলভীবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা তলিয়ে গেছে। এবার রংপুরের তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীবেষ্টিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। এতে নদীপাড়ের মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ছে। দেশের চারটি সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের চারটি বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেইসঙ্গে দুই বিভাগে ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে বর্ষার শুরুতেই পানি বেড়ে যাওয়ায় ও টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে গবাদি পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা। অনেকেই বন্যার আভাস পেয়ে গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। নিজেরাও নিরাপদে আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাউবো রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত থেকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বাড়ছে। যা এখন বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ডালিয়া পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। ভাটি অঞ্চলে নদীপাড়ের মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতিও রয়েছে।
এ ব্যাপারে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, তিস্তার পানিপ্রবাহ বাড়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই পরিমাণ পানি চরাঞ্চলে প্রবেশ করেনি। তারপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে।
নদী বিধৌত গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়াসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোলরুম থেকে জানানো হয়, বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র ১২০, ঘাঘট ১৭৭ ও করতোয়ার পানি ২৬৩ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এই কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে থাকা শাহীনুর রহমান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইতোমধ্যে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে বেশ কিছু স্থান প্লাবিত হয়েছে। একইসাথে সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া এলাকায় পানি বৃদ্ধির ফলে কিছু সংখ্যক ঘর-বাড়িতে পানি জমেছে। এছাড়া নদীভাঙনও দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি অস্বাভাকিভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর তীরবর্তী ও নিচু এলাকার বেশ কিছু ঘর-বাড়ি ও বিভিন্ন ফসলাদি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
নদ-নদীগুলোর পানিবৃদ্ধির কারণে কামারজানি, কাপাসিয়া, এরেন্ডাবাড়ী, ঘাগোয়া, হরিপুর, ফজলুপুর ও তারাপুর এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল রাজ্জাক মিয়া জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পানিবন্দী মানুষেরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, টয়লেট, ও আবাসনের অভাব।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ইতোমধ্যে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে নদীভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, প্লাবিত এলাকাগুলো খতিয়ে দেখে ভুক্তভোগী মানুষদের সহযোগিতা করা হবে।
ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে দুই পাড়ের মানুষ। এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার অববাহিকার চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার ভোর থেকে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে থাকে। পরে সকাল ৯ টায় ব্যরাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং দুপুর ১২ টায় ব্যারাজ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্ট ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তার পানি সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে এরপর কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি বাড়ায় তিস্তা অববাহিকার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও নদীভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন। বিশেষ করে সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন এবং আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নগুলো বসতবাড়ি ও ফসলি জমি বন্যার পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। সময় যত যাচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। ১ হাজার ১৮টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় পানি বেশি উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বেড়ে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। জেলার মোট ৫৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন, ব্যক্তিমালিকানা ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ছাতক উপজেলায়। এই উপজেলা এক সপ্তাহ ধরে বন্যাকবলিত। এখানে ৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। শহরের প্রায় সব কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি অফিস, ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন, বাড়িঘরেও মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ শহরের বেশির ভাগ এলাকাই বন্যাকবলিত। অনেক রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িতে বন্যার পানি রয়েছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় মানুষ চরম দুর্ভোগে আছেন। আজ সকালেও মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি দেখা গেছে। শহরের ষোলঘর, নবীনগর, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, ফিরোজপুর, উকিলপাড়া, মুক্তারপাড়া, হাজীপাড়া, আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, নতুনপাড়া, কালীপুর সমবায় সুপারমার্কেট, মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার এলাকাতেও বন্যার পানি রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা নদীর পানি কোনো কোনো স্থানে সামান্য কমেছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী, অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পানি আরও বাড়তে পারে। যদি উজানে বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী
সিলেট ব্যুরো : সিলেটে বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ইতোমধ্যে সিলেটের ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে বুধবার (১৯ জুন) সিলেট অঞ্চলে ফের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুধবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সিলেট বিভাগে বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘন্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সময়ে রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভুমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দিনভর বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশেনের ২১টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩ উপজেলার ১১৬ ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৩২৩টি গ্রামের প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘন্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট জানায়, কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে মঙ্গলবার ১৫ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। আজ বুধবার সকাল ছয়টায় এক পয়েন্ট কমে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল নয়টায়ও অবস্থা অপরিবর্তি রয়েছে। তবে এই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার আরও বেড়েছে। মঙ্গলবার পানি বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার সকাল ৬টায় তা বেড়ে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল নয়টার প্রতিবেদনে অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
মঙ্গলবার সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার সকালে তা অনেকটা কমে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল নয়টায় আরও দুই পয়েন্ট কমে ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার সকালে আরও বেড়েছে। মঙ্গলবার এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার সকালে তা বেড়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল নয়টায় এক পয়েন্ট কমে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে নদনদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশেনের ২১টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩ উপজেলার ১১৬ ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৩২৩টি গ্রামের প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জেলা প্রশাসন আরও জানায়, বন্যাদূর্গত এলাকার ১৭ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। আগামী তিনদিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
কক্সবাজারের টেকনাফে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ৮ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাহাড়ধসে প্রাণহানি রোধে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বেড়েছে, তবে এখন পর্যন্ত পাহাড়ে বসবাসকারীদের কোনো বাসিন্দা যায়নি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বাড়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।প্রবল বর্ষণে টেকনাফ উপজেলায় হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভার ৭টি গ্রাম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম, সাবরাং ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
পানিবদ্ধতার জন্য পানি নিষ্কাশনের সমস্যাকে দায়ী করেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের পানি মূলত স্লুইচগেট থেকে বের হতে না পারায় বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে তাঁর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ৪ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক সড়কের রঙ্গিখালী-আলীখালী নামক এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়াপাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কায়ুকখালীয়াপাড়া এলাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে বলে জানান টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, এই সাত গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সিলেটে বাড়ছে বানের পানি। উজানের ঢলের সঙ্গে হচ্ছে বৃষ্টি। এতে করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নগরসহ গোটা সিলেট। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে- সিলেটে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জেলার ১৩শ’ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৬২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ১৭ হাজার ২৮৫ জন বানভাসি মানুষ। এদিকে বুধবার ভোর রাত থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এই বর্ষণের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, জাফলং-গোয়াইনঘাট সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে- সিলেট জেলায় সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার অনেক উপরে অবস্থান করছে। ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে- সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় বিদ্যুতের সাব স্টেশন ঝুঁকিতে রয়েছে। সুরমা নদীর তীরবর্তী ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি ঢুকে গেলে গোটা দক্ষিণ সুরমা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর রায়হান আহমদ। এ অবস্থায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাতে পানি ঢুকতে না পারে সেজন্য সেনাবাহিনীকে কাজে নামানো হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন- দক্ষিণ সুরমার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাঠে রয়েছেন সেনা সদস্যরা। একই সঙ্গে কুমারগাও বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও নজর রাখা হচ্ছে। সুরমা নদীর তীরে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। সেনা সদস্যরা দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রক্ষায় কাজ করছেন। মেয়র জানান- বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিসিকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিসিকের তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করবো। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ যেন ভোগান্তি না পোহান সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। শুকনো ও রান্না করা খাবার তাদের দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। বন্যার্তদের দুর্ভোগ কমাতে যথাযথ সব করা হবে। মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত।
ছাতকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি
ছাতক (সুনামগঞ্জ): গত ৪দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ছাতক উপজেলায় বন্যার পানিতে ঘরবন্ধি রয়েছেন প্রায় লাখো মানুষ। বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে ছাতকের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীন সড়ক বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যার কারনে ইতিমধ্যেই নিচু এলাকার লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন। বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও ছাতক পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে। বন্যার পানি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার নারী-পরুষ পরিবার নিয়ে রয়েছেন। আকর্ষিক বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ম অঞ্চলের মানুষজন। ভারি বর্ষনের কারনে ছাতক বাজারের অধিকাংশ দোকান ও মার্কেটে পানিতে ডুকে পড়েছে। পৌরসভার মন্ডলীভোগ, ভাজনামহল, কুমনা লেবারপাড়া, তাতিকোনা, চরেরবন্দ, মঙ্গলপাড়া, বৌলাসহ কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে পানি ডুকে পড়ায় চরম জনদূর্ভোগের পড়েছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বাজারের বেশীর ভাগ দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। সুরমা তীরে ক্রাশার মিল গুলো বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ইসলামপুর, নোয়ারাই, ভাতগাঁও, সিংচাপইড়, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, জাউয়াবাজার ও চরমহল্লা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ধনীটিলা-ছনবাড়ী বাজার সড়কের উপর দিয়ে ভাতর থেকে আসা ঢলের পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। পানির প্রবল ¯্রােতে ভেঙ্গে গেছে এ সড়কের বিভিন্ন অংশ। ইউনিয়নের গনেশপুর, বাহাদুরপুর, জৈন্তাপুর, নোয়াকুট, রহমতপুর, বনগাঁও, দারোগাখালী, বৈশাকান্দি, ছনবাড়ীসহ ৮/১০টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। আউশ-আমন ধানের বেশ কিছু বীজতলা ও শাক-সবজীর বাগান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শহরের নিচু এলাকার বাসা-বাড়ির বাসিন্দারা অনেকেই আতংকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটে যেতে দেখা গেছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত বন্যার পানি অর্ধফিট পানি কমলেও সারা দেশের সাথে ছাতকের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরের মুল সড়কে কোথাও কোথাও ৩ থেকে ৪ ফুট পানি রয়েছে। যে কারনে জরুরী প্রয়োজনে অনেকেই শহরে সড়কে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করছেন। বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানি ডুকে পড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন। উজানের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গত ৪দিন ধরে চুনশিল্প কারখানা ও ক্রাশার মিল গুলো বন্ধ রয়েছে। সুরমা নদীতে নৌকা-কার্গো লোডিং-আনলোডিংও বন্ধ রাখা হয়েছে। যে কারনে কয়েক শতাধিক খেটে খাওয়া দিনমজুর এখানে বেকার। ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এড.সুফি আলম সুহেল জানান, আমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গনেশপুর, বাহাদুরপুর, জৈন্তাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন ইতিমধ্যেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে ১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে খুলে দেওয়ো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা মুন্না জানান, উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি দিকে রয়েছে। এখানে বন্যা দূর্গতদের জন্য মোট ৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা দূগর্তদের জন্য উপজেলায় এ পর্যন্ত ৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরন করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী
মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা: পাহাড়ি ঢল ও তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। বুধবার ১৯ জুন ২০২৪ ইং, সকালে জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী এই চারটি নদ-নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা যায়, ঈদের দিন ভোররাত থেকেই জেলাজুড়ে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণ এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। পাহাড়ি ঢল ও তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার ৭ উপজেলার ৫ পৌরসভাসহ ৩৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর এলাকা, রাজনগর ও সদর কুশিয়ারি নদীর পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় ভারি বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত জেলাজুড়ে ৪৩২টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রাম ও এলাকার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এছাড়া ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের জন্য ত্রাণও প্রস্তুত রয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, জেলার সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে কুলাউড়া, রাজনগর, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ৫৭১টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।