ঈদের ছুটিতে দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমলেও ব্যতিক্রম রাজধানী ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর)। পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত নিটোরের জরুরি বিভাগের তথ্য বলছে, ঈদের ছুটির তিন দিনে দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৯৫ জন আহত রোগী হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। এটি বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।
গত রবি, সোম ও মঙ্গলবার—এই তিন দিনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৮৮৪ জন।
অর্থাৎ প্রতি পাঁচ মিনিটের কম সময়ে একজন আহত রোগী এসেছে চিকিৎসার জন্য।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১২৭ জনের মধ্যে ৯৫ জনই মোটরসাইকেল আরোহী, যা মোট রোগীর ১০.৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া কোরবানি দিতে গিয়ে ১৫.৭২ শতাংশ, ওপর থেকে নিচে পড়ে ২৯.৭৫ শতাংশ, মেশিনারিজ সরঞ্জাম চালাতে গিয়ে ১৩.৪৬ শতাংশ ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় ৪০.২৩ শতাংশ আহত হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও কোরবানি দিতে গিয়ে আহত হয়েছে।
কেউ কোরবানির পশু জবাই দেওয়ার সময় ছুরি-চাপাতি চালাতে গিয়ে, আবার কেউ পশুর আঘাতে আহত হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টার দিকে নিটোরের জরুরি বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী। মিরপুর ১১ নম্বর এলাকা থেকে চিকিৎসার জন্য এসেছে আট বছর বয়সী মো. আবির। জানতে চাইলে তার মা আরিফা বেগম বলেন, ‘আবির তার মামার সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে গিয়েছিল।
বাসায় ফেরার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে থাক্কা লেগে পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পেয়েছে।’
এ সময় অস্ত্রোপচার কক্ষে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মোহাম্মদ নিয়াজ নামের এক ব্যক্তি। অস্ত্রোপচার কক্ষের বাইরে অপেক্ষারত তাঁর স্ত্রী জানান, ধানমণ্ডি এলাকায় গরু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত হন নিয়াজ। গরু শোয়ানোর সময় গরুর লাথি তাঁর বাঁ পায়ে লাগে।
নিটোরের অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৫০ জন রোগী এসেছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য।
কিছু রোগীকে সাধারণ চিকিৎসা দিলেই হয়। কাউকে কাউকে অস্ত্রোপচারও করতে হয়। মাইনর অপারেশন হলে অপারেশনের পর যেসব রোগী হাঁটাহাঁটি করতে পারে, তাদের আমরা রিলিজ দিই। গুরুতর রোগীদের ভর্তিও দিতে হয়।’
এই চিকিৎসক বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রতি শিফটে চারজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেছেন জরুরি বিভাগে। আরো চারজন জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি এক্স-রে ও বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীর স্বজনদের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। শয্যা না পেয়ে অনেক রোগীর হাসপাতালের মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি থাকছে না। পুরো হাসপাতাল রোগীতে ঠাসা। প্রতিবার ঈদে রোগীর সংখ্যা যেন বেড়ে যায়। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের সময়ও হাসপাতালে সারা দেশ থেকেই রোগী আসে। রোগীর চাপ কমে না।
ঈদে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীমউজ্জামান বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে সাধারণ সময়ের তুলনায় বাড়তি রোগীর চাপ থাকে। এ সময় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কম থাকে। তবে আমরা চেষ্টা করি সব রোগী যেন চিকিৎসাটা পায়। যেহেতু বেশির ভাগ রোগীর জরুরি চিকিৎসা দিলে হয়, তাই জরুরি বিভাগের জন্য বাড়তি জনবল রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসামগ্রী মজুদ রয়েছে।’
https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/06/20/1398761