আসন্ন ডিএনসিসি নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত মেয়র প্রার্থী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহম্মদ সেলিম উদ্দিন পুরোদমে নির্বাচনী কর্মকান্ড, গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। সে ধারাবাহিকতায় তিনি আজ নগরীর ভাটারায় মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। নির্বাচিত হলে তিনি ডিএনসিসির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন এবং উন্নত বিশ্বের নগরজীবনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দুর্নীতি ও অপরাধমুক্ত, সর্বাধুনিক জীবন উপকরণ সমৃদ্ধ, জনবান্ধব ও দূষণমুক্ত নগরীতে পরিণত করার আশ্বাস দেন।
মতবিনিময় সভায় মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, নানা সমস্যায় জর্জরিত ডিএনসিসির আবাসন সমস্যাও বেশ প্রকট। নিয়ন্ত্রণহীন বাড়ী ভাড়াও নগর জীবনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ডিএনসিসির ৬০ শতাংশের বেশি জনগোষ্ঠী অস্থায়ী আবাসনে বসবাস করেন। এমনকি নগরীর ৪০ শতাংশ মানুষের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বস্তিতে বসবাস। কিছু সংখ্যক মানুষের আবার বস্তিতেও স্থান হয় না বরং তারা খোলা আকাশের নীচে রাস্তাঘাটে মানবেতর জীবন যাপন করেন। বর্ষা মওসুমে এসব ভাগ্যাহত বনি আদম বৈরি প্রাকৃতিক অবস্থার সম্মূখীন হন। আবার শীতকালে তাদেরকে তীব্র শীতের কবলে পড়তে হয়। ফলে নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে এবং শীতবস্ত্রের অপ্রতুলতার কারণেই অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে। যা কারো কাম্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে অনুমোদিত বাসস্থান ও তার সরবরাহ মোট প্রয়োজনের ১ শতাংশের বেশি নয়। তাই নগরীর আবাসন সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। আর সে লক্ষ্যে শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য মানসম্মত এবং স্বল্প ভাড়ার আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। এমনকি একান্ত মানবিক কারণে ছিন্নমূল ও ভাসমান লোকদের পূনর্বাসন করাও খুবই জরুরি। তিনি নির্বাচিত হলে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে নগরীর আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণহীন বাড়ীভাড়ার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করবেন বলে জোরালো অঙ্গীকার করেন।
তিনি আরও বলেন, গণপরিবহণে অব্যবস্থাপনা এবং রাস্তায় যানবাহণের ধীরগতিও নগরবাসীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে রাস্তায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন নতুন যানবাহণ। ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহণ খাতে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য অতীতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। ১৯৯২-৯৪ সালে ইউএনডিপির অর্থায়নে ঢাকার পরিবহণ সমস্যা ও সমাধান বিষয়ক গবেষণা সম্পন্ন করা হয়। যার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক Dhaka Urban Transportation Project নামের প্রকল্প হাতে নেয়। পরে ২০০৫ সালে Dhaka Transportation Coordination Board (DTCB) বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় তৈরি করে Strategic Transportation Plan. উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান ও ভবিষ্যতে পরিবহণ খাতে টেকসই বিনিয়োগের জন্য একটি সুষ্ঠু কাঠামো নিশ্চিত করা।
সেলিম উদ্দিন বলেন, নেতিবাচক রাজনীতি ও সদিচ্ছার অভাবেই পরিবহণ খাতে কোন উদ্যোগই সফলতার মুখ দেখেনি। মূলত নগর জীবনে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেই নগরীর পরিবহণ সমস্যার স্থায়ি সমাধান হওয়া প্রয়োজন। নগরবাসী তাকে নির্বাচিত করলে গণপরিবহণের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সকল প্রকার অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ও পরিবহণ খাতকে অধুনিকীকরণ সহ এ ক্ষেত্রে সকল প্রকার বাধা-প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি সকলকে আশ্বাস দেন।
মতবিনিময় সভায় ৩৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাওলানা আবুল কাসেম বলেন, অতীতে জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের কথা বলে জনগণের কাছে ভোট নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর তারা গণমানুষের কল্যাণে খুবই কমই কাজ করেছে। ওয়ার্ডবাসী তাকে নির্বাচিত করলে মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
৪০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উন্নয়নের কথা বলে অতীতে জনগণের সাথে অনেক প্রতারণা করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ তার ওপর আস্থা রাখলে তিনি সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের সেবায় কাজ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউথ সোসাইটির উপদেষ্টা নাজিম উদ্দীন মোল্লা, প্রবীন পরিচালক এ কে মজুমদার, সহকারি পরিচালক এ কে বাশার খান, ডা. আনোয়ার হোসেন মোল্লা, সিরাজুল ইসলাম, মুন্সী আশরাফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার কামাল উদ্দীন, মো. আব্দুল হালিম, মেহেদী হাসান, এইচ এম সোহেল, তরিকুল ইসলাম, রেজাউল করিম ও নিয়াজ মোর্শেদ প্রমূখ। এছাড়াও মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও ৩৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রাথী মাওলানা আব্দুল কাসেম এবং স্বনামধন্য সমাজসেবী ও ৪০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।