অতীতের মতো এখন আর আগের রাতে স্টেশনে গিয়ে কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কাটতে হয় না। কারণ, সব টিকিট এখন বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। তাই অনলাইনে যাঁরা টিকিট পাচ্ছেন, তাঁদের ঈদযাত্রার শুরুটা হচ্ছে স্বস্তি দিয়েই।
যাত্রীরা স্টেশনে যাচ্ছেন, গন্তব্যের ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালে তাতে উঠে পড়ছেন। ট্রেন ছাড়তে খুব বেশি দেরিও হচ্ছে না। তবে ওই স্বস্তিতে যেন বাগড়া দিচ্ছে বাড়তি ভাড়া বা জরিমানার টিকিটের যাত্রী।
যাত্রীদের অভিযোগ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আন্তনগর ট্রেনে সাধারণ শ্রেণির আসনের ২৫ শতাংশ আসনবিহীন (স্ট্যান্ডিং) টিকিট বিক্রি করছে। এই যাত্রীরা মূলত বগির ভেতরে মাঝখানে যে হাঁটার রাস্তা রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রা করেন। এর পরেও ভ্রমণকালীন টিকিট পরীক্ষকেরা (টিটিই) স্টেশনে যাত্রীদের কাছে বাড়তি ভাড়ার টিকিট বিক্রি করছেন। কোনো হিসাব ছাড়াই যত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে, তত টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের সময় মানবিক দিক বিবেচনায় বাড়তি ভাড়ার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। কারণ, অনেক সময় একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেন, এক-দুজন হয়তো পান না। সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হয়।
রেল কর্তৃপক্ষের এমন ভাষ্য হলেও গতকাল শনিবার দিনভর ওই টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে যেন ‘লুকোচুরি খেলেন’ টিটিইরা। সাংবাদিকেরা ভিডিও নিতে গেলে কিংবা ছবি তুলতে গেলেই বন্ধ রাখা হচ্ছিল ওই টিকিট বিক্রি। তখন টিকিট–প্রত্যাশীদের টিটিইরা বলছিলেন, ‘টিকিট নাই পরে আসেন’। বাড়তি ভাড়ার টিকিট বিক্রি নিয়ে টিটিইরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ক্যামেরা বন্ধ হলে কিংবা সাংবাদিকেরা দূরে সরে যেতেই আবার আগের মতোই চলে বিক্রি।
একেকটি ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর কিছুটা ফাঁকা হয়ে আসে প্ল্যাটফরম। কমলাপুর, ঢাকা, ১৫ জুনছবি: প্রথম আলো
চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে। ছাড়ে দেড় ঘণ্টার বেশি দেরিতে সাড়ে তিনটার পরে। ওই ট্রেনের যাত্রী তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেড়টার দিকে কমলাপুর পৌঁছে দেখি, ট্রেনটি ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো। আমাদের আগেই অনেক যাত্রী ট্রেনে উঠে গেছেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ ব্যাগপত্র নিয়ে আমাদের নির্ধারিত আসনে বসতে অনেক কষ্ট হয়েছে।’
প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এ ট্রেনের ছাড়ার কথা ছিল ২টা ৪০ মিনিটে, কমলাপুর ছেড়ে যায় ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে। এর আগেই ওই ট্রেনের ভেতরে উপচে পড়া ভিড় ছিল। ট্রেনটির যাত্রী মহসীন আলী প্রথম আলোকে জানান, টিকিট কাটা থেকে স্টেশনে আসা পর্যন্ত সবকিছু ভালোই ছিল। কিন্তু ট্রেনে রীতিমতো যুদ্ধ করে উঠতে হয়েছে। ভিড় ঠেলে দরজা থেকে নিজের আসনে পৌঁছাতে ১০ মিনিটের বেশি লেগেছে।
এর আগে বেলা সোয়া একটার দিকে কথা হয় নেত্রকোনাগামী ট্রেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী আনিসুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অনলাইনে যারা টিকিট পায় না, তাদের জন্য দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হয়। অতিরিক্তি ওই যাত্রীদের কারণেই ঈদযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে যায়।
লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট পেতে অপেক্ষা যাত্রীদের। কমলাপুর, ঢাকা, ১৫ জুনছবি: প্রথম আলো
অনলাইনে টিকিট কিংবা স্টেশনে গিয়ে আসনবিহীন টিকিটের যাত্রীদের এ নিয়ে অভিযোগ থাকলেও বাড়তি ভাড়ায় যাঁরা টিকিট কাটছেন, তাঁদের চোখেমুখে ঘরে যেতে পারার আনন্দ দেখা গেছে। তাঁদের অনেকে জানান, বাড়তি ৫০ টাকা দেওয়া যাওয়ার টিকিট পাচ্ছি, এটাই আনন্দের। এখন কষ্ট হলেও বাকি পথ দাঁড়িয়ে বাড়ি পৌঁছা যাবে।
এদিকে গতকাল সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে ছেড়ে যাওয়া ২০টি ট্রেন দেরি করেনি। নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে পাঁচ মিনিট পরেই ট্রেনগুলো কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। স্টেশনে খুব বেশি ভিড় দেখা যায়নি। কিছু ট্রেনের ভেতরে উপচে পড়া ভিড় ছিল। এসব ট্রেনে উঠতে যাত্রীদের বেগ পেতে হয়ে। এ ছাড়া বেলা দুইটার পর কয়েকটি ট্রেন এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। ট্রেনগুলো ঢাকা পৌঁছাতে দেরি হওয়াতেই ছাড়তেও দেরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে বাড়তি ভাড়ার টিকিট বিক্রির বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিটের বাইরে কিছু টিকিট ঈদের সময় মানবিক কারণে বিক্রি করা হয়। ট্রেন প্রতি এই সংখ্যা হবে ৫০ থেকে ৬০টি। এ নিয়ে যাত্রীদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। কারণ তাঁরাও ব্যাপারটা বোঝেন।