ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে ৩-৪ কিলোমিটারের যানজট। এই জট পার হয়ে ঢাকা থেকে বের হতেই যত ঝক্কি ঝামেলা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায় টার্মিনালে যেতেই। তারপরও মানুষ ছুটছেন নাড়ির টানে। দীর্ঘ লাইন দিয়ে অনেকে টিকিট সংগ্রহ করছেন। কেউ যানবাহনের টিকিট না পেয়ে ভাড়ার মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামে।
সড়ক-মহাসড়কে এবারের ঈদযাত্রায় মানুষ ভোগান্তিতে না পড়লেও ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোর ভোগান্তি চরম পর্যায়ে। কোনোভাবেই প্রবেশদ্বারের যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীর জ্যাম মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গত দু’দিন ধরে যাত্রাবাড়ীর চারদিকে ৩-৪ কিলোমিটার জুড়ে যানজট। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দেখা যায়, কোনাপাড়া ড. মাহবুবুর রহমান কলেজ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত গাড়ির জট। ওই দিকে সানারপাড় থেকে জট। পোস্তগোলার ওপাড় কেরানীগঞ্জ থেকে জ্যাম পড়েছে। আর এদিকে কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় বিশাল যানজট। গুলিস্তান থেকে কেরানীগঞ্জের কদমতলা পর্যন্ত বিশাল জ্যাম। বরিশালগামী সাইদুর রহমান জানান, বাসা থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যেতেই তার লেগেছে তিন ঘণ্টা। যাত্রাবাড়ী থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি গাড়িতে চড়েন। সেখান থেকে বুড়িগঙ্গা সেতু পার হতেই লেগেছে আরো দেড় ঘণ্টা।
একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন নয়াবাজার হয়ে যারা মাওয়া রোডে গিয়েছেন তারাও। বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু পার হয়ে ফ্লাইওভার পর্যন্ত যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা কেটে গেছে অনেকের। সাইফুল নামের এক যাত্রী বলেন, ওই রাস্তাটুকু পার হতেই ঈদ আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। কেরানীগঞ্জ দিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠার পর আর কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি।
এদিকে, যাত্রাবাড়ী হয়ে যারা চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কিশোরগঞ্জ রুটে গিয়েছেন তারাও পড়েছেন চরম ভোগান্তির মুখে। যাত্রাবাড়ী মোড় পার হতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেছে তাদের। গতকাল সকালে সেখানে কয়েকজন বাসযাত্রীর সাথে কথা হয়। তারা জানান, যাত্রাবাড়ী মোড় এখন আজাবের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মোড়টি পার হতে হবে এমন চিন্তা করলেই শরীর শিউরে ওঠে।
অন্যদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের ঢাকার আব্দুল্লাহপুর ও আশুলিয়া এলাকায় ভয়াবহ যানজটে পড়েন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই একই স্থানে কাটিয়ে দিতে হয় যাত্রীদের। একই পরিস্থিতি গাবতলী এলাকাতেও। সেখানেও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। একাধিক যাত্রী গাবতলী এলাকা থেকে জানিয়েছেন, গাবতলীতে পরিবহন সঙ্কটও ছিল। কোনো কোনো পরিবহনের নির্ধারিত গাড়ির জন্য মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ সময় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া চাপ দেখা যায়। বাস, ট্রেন স্টেশন ও সদরঘাট টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। গতকাল সকালে এই চাপ আরো বাড়ে। সদরঘাট টার্মিনালে চাঁদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুরের যাত্রীরা ভিড় জমায়। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় বরিশাল ও ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। বিকেলে সদরঘাট পন্টুনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। লঞ্চেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চের ভেতরে সিট না পেয়ে অনেকেই লঞ্চের ছাদে চড়েছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে ট্রেনেও। ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে দেখা গেছে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ছাদেও কোনো জায়গা ছিল না ট্রেনগুলোর।
এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত যাত্রীরা বাড়তি ভাড়াই গুনেছেন। এমনকি, কোনো কোনো বাসে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। ৬০০ টাকার ভাড়া ১১০০-১২০০ টাকা রাখা হচ্ছে।