গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারের পোশাক কারখানাগুলোয় শুক্রবার থেকে ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এদিন গাড়ির বাড়তি চাপ দেখা যায়। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও থেমে থেমে চলে যানবাহন। এতে ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, সড়কের পাশে গরুর হাট, গরুবাহী গাড়ির চাপসহ নানা কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। কুমিল্লার চান্দিনায় বেতন-বোনাসের দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে এ মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশে যানজট দেখা গেছে। যুগান্তর প্রতিবেদন ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাজীপুর : শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর থেকে চন্দ্রা, কবিরপুর থেকে কালিয়াকৈর খাড়াজোর পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট দেখা দেয়। সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকার মো. মমিন মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার কারখানা ছুটি হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে বের হইনি। আজ (শুক্রবার) সকালে বের হয়েছি। সড়কে অনেক যানজট। বাস পাওয়াই যাচ্ছে না, অনেকেই ট্রাক ও পিকআপে যাচ্ছে। আমি ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে যাব না। যাত্রীরা জানান, গাবতলী বাসটার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পরপরই আমিনবাজার পর্যন্ত যানবাহনের প্রচুর চাপ। এরপর সাভার, নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর, কবিরপুরসহ মহাসড়কটির প্রতিটি মোড়ে যানবাহনের ধীরগতি। একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। মহাসড়কের সালনা, রাজন্দ্রেপুর, হোতাপাড়া, ভবানীপুর, বাঘেরবাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী, মাওনা চৌরাস্তা পার হয়েই পল্লী বিদ্যুৎ মোড়, এমসি বাজার, নয়নপুর ও জৈনাবাজার এলাকার মোড়গুলোয় যানবাহনের তীব্র চাপ।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈর নবীনগর সড়কের জিরানী ও সফিপুর আনসার একাডেমি পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট দেখা দেয়। সরেজমিন চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহনের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। এ কারণে চন্দ্রা উড়ালসড়কের পর থেকে খাড়াজোড়া পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন বলেন, মহাসড়কে যানজট নিরসনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। র্যাকার মজুত রাখা হয়েছে যাতে কোনো যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়।
টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুর : সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, পিকআপ ও মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ। গাইবান্ধার হাসান আলী বলেন, ভোরে সাভার থেকে বাসে উঠেছি। এলেঙ্গা এসে যানজটে পড়ে গাড়ি। পোশাককর্মী জাহানারা সুলতানা বলেন, আমি বগুড়া যাব। চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। কিন্তু এরপর বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত আসতে লাগে দুই ঘণ্টার মতো। উত্তরবঙ্গগামী লেনের পুংলী থেকে আশেকপুর বাইপাস পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, ভোরে সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক পুংলী এলাকায় উলটে যায়। এতে যানজট সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জ : ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রূপগঞ্জের ওপর দিয়ে গেছে। এ দুই মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কের রূপগঞ্জের অংশ পার হতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ২০-৩০ মিনিট। যানজটের কারণে এখন লাগছে ৪-৫ ঘণ্টা।
চান্দিনা (কুমিল্লা) : বেতন ও বোনাসের দাবিতে চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কে অন্তত ২০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। ফেনীর দাগনভূঞার বিদেশগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, দুপুর ২টার মধ্যে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে। দ্রুত পৌঁছার জন্য প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু যানজটে আটকে চান্দিনাতেই দেড়টা বেজেছে। কখন পৌঁছাতে পারব, কিছুই বুঝতে পারছি না। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা গরুবাহী ট্রাক চালক আনোয়ার হোসেন জানান, গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাব। প্রচণ্ড রোদে যানজটে আটকে আছি।
ঢাকা উত্তর : ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিএমবি থেকে নবীনগর, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, গেন্ডা ও আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে শুক্রবার দুপুর থেকে তীব্র যানজট দেখা যায়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যানজট নিরসনে পুলিশের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। বাসযাত্রীরা জানান, সাভার ও আশুলিয়ায় পোশাক কারখানা ছুটির পর মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। মৌমিতা পরিবহণের একটি বাসের চালক জানান, গাবতলী থেকে সাভার-নবীনগর পর্যন্ত আসতে তার দুই ঘণ্টা লেগেছে।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে শুক্রবার ভোর থেকে ৬ কিলোমিটার যানজট দেখা যায়। মাওয়ার পদ্মা সেতু টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর উপজেলার ফেরিঘাট পর্যন্ত ছোট-বড় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ বলছেন, এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সাতটি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে।