যানজট ঠেলে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে গত পাঁচ বছরে রাজধানীতে মোটরবাইকের ব্যবহার বেড়েছে অনেক গুণ। পেশা হিসেবে কয়েক লাখ মানুষ এই বাহন চালানোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বাইকচালকের ৫৮.৮ শতাংশ কোমর ব্যথায় ভুগছেন।
২০২৩ সালের ২০ মে থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর ৬৩৩ জন মোটরবাইকচালকের ওপর পরিচালিত ওই গবেষণায় এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মন্টানার ডক্টর অব ফিজিক্যাল থেরাপি বিষয়ের গবেষক ডা. মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে এবং জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাব বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে একদল চিকিৎসক এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
গত ৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান গবেষণা বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘সায়েন্স ডাইরেক্ট’-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, শতকরা ৫৮.৮ শতাংশ মোটরবাইকচালক কোমর ব্যথায় ভুগছেন। আর যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা ৭০.১ শতাংশ।
উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের ৮৮ শতাংশ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৭৬ শতাংশ বাইকচালক কোমর ব্যথায় ভুগছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণ বাইকারদের মধ্যে কোমর ব্যথার হার খুব কম হলেও পুরনো এবং দ্রুতগতির বাইকচালকদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি।
সপ্তাহে সাত দিন বা দিনের বেশির ভাগ সময় যাঁরা মোটরবাইক চালান, তাঁদের মধ্যে কোমরে ব্যথা অনুভব করেন শতকরা ৭১ জন।
ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘ সময় টানা বসে থাকা।
৯৮ শতাংশের ক্ষেত্রে কোমরের যতটুকু শক্তি আছে তার চেয়ে বেশি লোড নেওয়া এবং বেকায়দায় বসে থাকা ও আঘাতজনিত কারণে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি কারণ হলো বসার কাঠামোগত অসুবিধা। বেশি সময় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার কারণে মেরুদণ্ডের সামনের মাংসপেশি সংকুচিত এবং পেছনের দিকের মাংসপেশি প্রসারিত হয়। এ কারণে দেহে পেশির ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। তখন মেরুদণ্ডের মাঝখানে থাকা ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
এই চাপ থেকে ধীরে ধীরে ব্যথার সৃষ্টি হয়।’
ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাইকচালক নন এমন ২৫ শতাংশ মানুষ কোনো কোনো সময় কোমর ব্যথায় ভোগেন। তবে আমাদের গবেষণায় দেখেছি, বাইকারদের মধ্যে এ হার প্রায় ৬০ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ, গত ৫০ বছরে মানুষের কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, কায়িক পরিশ্রম যত কম হবে, মাংসপেশি তত দুর্বল হয়ে যাবে।’
গবেষকদলের প্রধান ডা. মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫০ সিসির বেশি বাইকচালকদের কোমর ব্যথার হার বেশি। আর যাঁরা পাঁচ বছরে বেশি সময় ধরে বাইক ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যেও কোমর ব্যথার হার বেশি।’
তিনি বলেন, ‘বাইক চালানোর সময় সঠিক ভঙ্গিতে বসতে হবে। কোনো অবস্থায়ই দীর্ঘ সময় একইভাবে বসে বাইক চালানো যাবে না। আধাঘণ্টা পর পর বসার ধরন পরিবর্তন করলে কোমর ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আর সপ্তাহে সাত দিনই বাইক ব্যবহার না করা ভালো। করলেও অল্প সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোমর ব্যথা হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।’
https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/06/15/1397795