বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও ডিএনসিসি নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বিরামহীনভাবে নির্বাচনী তৎপরতা ও মতবিনিময় সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলমান মতবিনিময় সভার অংশ হিসেবে তিনি আজ রামপুরা ও কাফরুল এলাকায় পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। নির্বাচিত হলে তিনি সকল সমস্যা সমাধান করে ডিএনসিসিকে একটি শ্রমিকবান্ধব, শিক্ষানুকুল; জানজট-জলাবদ্ধতা, শব্দ-বায়ুদূষণমুক্ত সর্বাধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করার আশ্বাস দেন এবং নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে তার আশাবাদের কথাও প্রকাশ করেন। মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারুল করিম, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, সাইয়্যেদ হাসান ঈমাম, আব্দুল মতিন খান, ফজলে আহমদ ফজলু, আব্দুস সবুর ফরহাদ, আ্ব্দুল হালিম আলমগীর, এস এম মনিরুজ্জামন, তারেক রেজা তুহিন, খান হাবীব মোস্তফা, সাইদুর রহমান, আতিকুল ইসলাম ও গোলাম মতুর্জা প্রমূখ।
মতবিনিময় সভায় মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত ঢাকা নগরীর গোড়া পত্তন হয়েছিল মধ্যযুগে। সে থেকেই এ নগরীর ক্রমবিবর্তণের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলেই ঢাকা নগরীর ক্রমবিকাশ সূচনা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং ভারত বিভাজিত হয়ে পূর্ববাংলা পাকিস্তান রাষ্ট্রে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকার জন্য তৈরি হয় ‘ঢাকা মাস্টারপ্ল্যান’। কিন্তু এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবরূপ লাভ করেনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ঢাকা নগরীর যে উন্নয়ন হয়েছে যার প্রায়ই সাধারণ জনগণের অনুকুলে নয় বরং অধিকাংশই ছিল রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। তাই ঢাকা এখনো আধুনিক নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন জনবান্ধব নগরীতে পরিণত করা সম্ভব হয়নি। আর ডিএনসিসি তো আরও বেশি উপেক্ষিত।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানজটের পাশাপাশি নগরীতে বায়ু ও শব্দ দূষণ অন্যতম মৌলিক সমস্যা। এই সমস্যাগুলো নাগরিক জীবনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মূলত মানহীন ও চলাচল অনুপযোগী যানবাহনের তীব্র ধোঁয়া, পরিবেশ বান্ধব জ্বালানীর অভাব, নগরীর অভ্যন্তরে ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা, সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতা ও সেবার নিম্মমান থেকেও বায়ুদুষণ হয়ে থাকে। জাতিসংঘের সর্বশেষ বায়ু দূষণের যে ডাটাবেজ প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক ও হাঁপানির মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বায়ুদূষণ রোধে নগরীতে মানহীন যানবাহন প্রত্যাহার, পরিবেশ বান্ধন জ্বালানীর ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া দরকার। এছাড়াও পরিচ্ছন্ন প্রক্রিয়াকে সময়োপযোগি করাও জরুরি।
তিনি বলেন, শব্দ দূষণও ডিএনসিসির জন্য গুরুতর সমস্যা। আমাদের দেশে রয়েছে শব্দ দূষণ নীতিমালা। ২০০৬ সালে প্রণীত এই নীতিমালা অনুযায়য়ি আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একই ভাবে, নীরব এলাকার জন্য এই শব্দসীমা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উপরে শব্দ সৃষ্টি করা দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু ডিএনসিসিতে এই বিধিমালা মানা হচ্ছে না। মূলত ডিএনসিসির উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা ও নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই ঢাকা নগরীসহ ডিএনসিসি এলকার শব্দদূষণ রোধ করা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে প্রায় ৩০টি কঠিন রোগের উৎস ১২ রকমের পরিবেশ দূষণ। মূলত বাস, ট্রেন, জাহাজ, শিল্প-কারখানা থেকে বের হওয়া শব্দ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকারের শব্দের তীব্রতা নির্দেশিত মাত্রায় বা তার নিচে বজায় রাখা উচিত এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান থাকা প্রয়োজন। যানবাহন থেকে বের হওয়া শব্দের ব্যাপকতা এবং তীব্রতা হ্রাসের জন্য আইন করে উন্নত প্রযুক্তির ডিজেল ইঞ্জিন এবং এক্সসট গ্যাস পাইপে সাইলেন্সারের ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। নগরবাসী তাকে নির্বাচিত করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সহায়তা নিয়ে উল্লেখিত সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে ছাত্র ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে জোরালো আশ^াস দেন এবং তার পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।