ঈদযাত্রায় মহাসড়কে বেড়েছে গাড়ির চাপ। সরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরুর পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে ধীরগতিতে চলতে দেখা যায় যানবাহন। এতে ভোগান্তি বাড়িয়েছে বৃষ্টি।
আগের দিনের মতো গতকালও ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে কয়েকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পর যাত্রা করে। যদিও পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম দাবি করেন, যাত্রীসেবায় রোজার ঈদের মতো এবারও ‘গোল্ডেন এ’ পাবে রেলওয়ে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি যখন এ দাবি করছিলেন, তখনও কমলাপুর থেকে যাত্রা করেনি রাজশাহী রুটের দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের সিল্কসিটি এক্সপ্রেস।
গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যানজট হয়নি। তবে গাড়ির চাপ ছিল যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে। আজ যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামীকাল শনিবার কলকারখানা ছুটির পর যাত্রীর ঢলে অন্য বছরের মতো ভোগান্তিও হতে পারে। এ শঙ্কা আরও বাড়িয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। গতকাল বিকেলের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যায়। এতে বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনমুখী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দু’দিন বৃষ্টি হলে গাড়ির গতি কমে মহাসড়কেও দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারের আশপাশের কয়েকটি কারখানায় ছুটি হওয়ায় গতকাল দুপুরের পর উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রাসহ কয়েকটি মোড়ে মহাসড়কে যাত্রীচাপ বাড়ে। বাসগুলো মহাসড়কের কয়েকটি লেন আটকে যাত্রী তোলায় বিকেল থেকে যানজট হয়।
সন্ধ্যায় চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দেখা যায়, গাজীপুরের বাইপাস-চন্দ্রা এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে যাত্রীর ভিড় থাকলেও যানবাহন কম। দিনাজপুরগামী আনোয়ার হোসেন ও তাঁর স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে চন্দ্রা ত্রিমোড়ে আসেন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়ও তারা বাস পাননি।
বিনিময় পরিবহনের চালক মোখলেছ উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই যাত্রী বাড়বে তিনি ধারণা করতে পারেননি। হাইওয়ে পুলিশের নাওজোড় থানার ওসি শাহাদত হোসেন বলেন, যাত্রীর চাপ বাড়লেও যানজট নেই। ধীরগতিতে হলেও চলছে উত্তরবঙ্গমুখী গাড়ি।
নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর, কবিরপুরসহ মহাসড়কের প্রতিটি মোড়ে যানবাহনের ধীরগতি। একই অবস্থা ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী এলাকায়। টঙ্গী কলেজ থেকে সালনা পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার অংশে মোড়গুলোতে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) ফ্লাইওভার থেকেই বাস আটকে পড়ছে অটোরিকশাসহ বারোয়ারি যানবাহনের জটলায়।
যানজট নিরসনে গতকাল দুপুরে চন্দ্রায় ড্রোন পরিচালনা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেন, ড্রোনের মাধ্যমে জানা যাবে কোথায় কেন যানজট হচ্ছে। নিরসন সহজ হবে। ঈদযাত্রাও স্বস্তির হবে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় দেখা গেছে, মোটরসাইকেল ও খোলা ট্রাকে যাত্রীরা বাড়ি ফিরছেন। ঢাকামুখী পশুবাহী গাড়ির চাপও রয়েছে। ঝড়ের কারণে গতকাল বিকেল ৫টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
বরাবরের মতো এবারও বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু বাস্তবতা আগের মতোই, অতিরিক্ত হারেই চলছে ভাড়া আদায়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে নজরদারি হচ্ছে। নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কের পাশে হাট বসালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে প্রথম দিনের মতো গতকালও কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় যাত্রীদের। স্টেশনের আশপাশের সড়ক ডুবে যাওয়ায় ভারী ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে স্টেশনে পৌঁছাতে দুর্ভোগে পড়েন তারা।
পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ঈদযাত্রায় যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনে বগি সংযোজন করতে হচ্ছে। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে। এ ছাড়া পথে ক্রসিংসহ নানা কারণে ট্রেন আসতে দেরি হয়। ৬৪ ট্রেনের মাত্র দু-তিনটি দেরিতে ছেড়েছে। এ সময় তাঁর সঙ্গে রেল সচিব হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল ছুটির পর চাপ বেড়েছে পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে। তবে দীর্ঘ সারি নেই গাড়ির। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার কলকারখানা ছুটির পর ভিড় বাড়বে।
ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা কুষ্টিয়াগামী ঈগল পরিবহনের চালক আরিফ হোসেন জানান, গাবতলী থেকে দুপুর আড়াইটায় বাস ছেড়ে তিনি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছেন। এখানে চাপ না থাকায় সরাসরি ফেরিতে ওঠেন।