ব্যাংক খাতে মোট ঋণের ৭৫ শতাংশই কোটিপতিদের। পাশাপাশি মোট আমানতের ৪২ শতাংশ রয়েছে কোটিপতিদের। বাকি ৩৩ শতাংশ ঋণ তারা বাড়তি নিয়েছেন। ঋণের বিপরীতে কিছু জামানত বা গ্যারান্টি রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ঋণেই জামানত বা গ্যারান্টি নেই। ব্যক্তিগত বা করপোরেট গ্যারান্টির আলোকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ ব্যাংক খাতে কোটিপতিদের আমানত কমলেও ঋণের স্থিতি বেড়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের সার্বিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে মোট ঋণের স্থিতি মার্চ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে কোটিপতিদের দেওয়া হয়েছে ১১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশই নিয়েছেন কোটিপতিরা। এর মাধ্যমে ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৌশল নিয়েছে ঋণ কেন্দ্রীভূত বা কোনো একক গ্রুপ বা ব্যক্তিকে মাত্রাতিরিক্ত না দিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশিসংখ্যক গ্রাহককে দিতে। এতে ঋণের বিপরীতে ঝুঁকির মাত্রা কমবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সে লক্ষ্য সফল হচ্ছে না।
ব্যাংকগুলোয় মোট ঋণগ্রহীতা রয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ। এর মধ্যে এক কোটি টাকার কম ঋণ রয়েছে এমন হিসাব ১ কোটি ১৫ লাখ ২৯ হাজার, যা মোট হিসাবের ৯১ শতাংশ। এ হিসাবে ঋণের স্থিতি মাত্র ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৫ শতাংশ। অথচ এক কোটি টাকার বেশি ঋণ স্থিতি রয়েছে-এমন হিসাব ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৯টি, যা মোট হিসাবের ৯ শতাংশ। এগুলোয় ঋণের স্থিতি ৭৫ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর হিসাব ছিল ১৫ কোটি ৭১ লাখ। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানতের স্থিতি ১৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টি হিসাবে, যা মোট হিসাবের ২ শতাংশ। এসব হিসাবে জমা ৭ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ, আমানতের অর্ধেকের কম কোটিপতিদের। অথচ ঋণের ১৬ শতাংশই তাদের দখলে।
এক কোটি টাকার কম আমানতের হিসাব রয়েছে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার, যা মোট হিসাবের ৯৮ শতাংশ। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ১০ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৬৮ শতাংশ। মূলত বড় গ্রাহকরাই বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে থাকেন। তারা সবাই কোটিপতি ঋণগ্রহীতা। এ কারণে কোটিপতিদের ঋণ বেশি। কোটিপতিরা আমানত ব্যাংকে রাখেন কম। তারা আমানতের বড় অংশই বিনিয়োগ করেন। তবে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীদের বড় অংশই ব্যবসায়ী নন-ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।