ঢাকা–রংপুর মহাসড়কে ঈদযাত্রায় এবার ১২টি স্থান দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত এবং ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ঈদের আগের দিনগুলোতে বড় ধরনের যানজটের আশঙ্কা করছেন এই সড়কে চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহনের চালকেরা।
গত ঈদুল ফিতরে মহাসড়কের অন্তত ৩৫টি স্থান এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের প্রায় ৮ কিলোমিটার অংশ যানজট ও দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এবারের ঈদের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সেতুর পূর্ব প্রান্তের সেই ৮ কিলোমিটার অংশ এবং সড়কের ১৮টি সেতুতেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। বগুড়ার মাটিডালী বিমানমোড় থেকে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত লেন সম্প্রসারণকাজের কারণে এক লেনে যানবাহন চলাচল করছে।
হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহন মালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সাধারণ সময়ে দিনে ২০ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করে। ঈদ ঘিরে এ সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ফলে বাড়তি গাড়ির চাপের পাশাপাশি সড়ক উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় পুরোনো ভোগান্তির আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না।
ভোগান্তি নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ঈদের আগে একটি ওভারপাস খুলে দেওয়া ও মহাসড়কে বন্ধ লেন চালু এবং কিছু সংস্কারকাজ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
যানজটপ্রবণ ১২টি স্থানের মধ্যে আছে নির্মাণাধীন সেতুর কারণে মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের ঝাঐল, চার লেন নির্মাণকাজের কারণে মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল,হাটিকুমরুল থেকে রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের ভূঁইয়াগাতী, রায়গঞ্জ উপজেলার ওমরের স মিল, বগুড়ার চান্দাইকোনা (বগুড়া বাজার), ধনকুন্ডি ফুড ভিলেজের সামনে, ছনকা বাজার, বনানী লিচুতলা থেকে ফুলদীঘি, মাটিডালী মোড় থেকে টিএমএসএস, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শহরের অংশ ও পলাশবাড়ী শহরের অংশ এবং শঠিবাড়ী বাজার।
এবারের ঈদের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সেতুর পূর্ব প্রান্তের সেই ৮ কিলোমিটার অংশ এবং সড়কের ১৮টি সেতুতেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রসারণ কাজ ছাড়াও ওভারপাস নির্মাণের কারণে মহাসড়কের ১২টি স্থানে ধীরগতিতে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এতে মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট দেখা দিচ্ছে। ঈদের আগে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেলে যানজটপ্রবণ স্থানে ভোগান্তি বাড়বে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, চার লেন সম্প্রসারণ কাজের কারণে বগুড়া শহরতলির বনানী লিচুতলা থেকে ফুলদীঘি পর্যন্ত মহাসড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশে থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। বগুড়ার মাটিডালী বিমানমোড় থেকে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত লেন সম্প্রসারণকাজের কারণে এক লেনে যানবাহন চলাচল করছে। এতে থেমে থেমে যানজট তৈরি হচ্ছে। মহাসড়ক সম্প্রসারণকাজের কারণে এক লেনে গাড়ি চলাচল করায় যানজট দেখা গেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ বাজার এলাকাতেও।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল হয়ে মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে ‘সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২’ প্রকল্প এবং সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান
রংপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বাসের চালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রংপুরের শঠিবাড়ী থেকে সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১২টি স্থানে লেন সম্প্রসারণের কাজ চলমান থাকায় এক লেনে ধীরগতিতে যানবাহন পার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যানজটপ্রবণ এলাকা এখন গোবিন্দগঞ্জ বাজার। গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে এসব স্থানে যানজটও বাড়বে।
বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রায় এবার সিরাজগঞ্জ থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৮০ কিলোমিটার অংশে ১০-১২টি স্থানে ভোগান্তির বড় শঙ্কা রয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ বেশির ভাগ স্থানে বন্ধ লেন চালু করা হয়েছে জানিয়ে হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল হয়ে মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে ‘সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২’ প্রকল্প এবং সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।
যানবাহনের চাপ বেশি হলে এলেঙ্গা থেকে উত্তরবঙ্গগামী সড়ক একমুখী (ওয়ানওয়ে) করে দেওয়া হচ্ছে। তখন উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) রফিকুল ইসলাম সরকার
জানতে চাইলে সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ওয়ালিউর রহমান গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বগুড়ার ধুনকুন্ডি ওভারপাস সাময়িক খুলে দেওয়া ছাড়াও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (আজ) সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে যেখানে উন্নয়নকাজ চলমান থাকার কারণে লেন বন্ধ আছে, সেখানে লেন খুলে দেওয়া হবে। সুতরাং ঈদযাত্রায় কোনো ভোগান্তি হবে না।
সংযোগ সড়ক ও ১৮ সেতু নিয়ে দুর্ভাবনা
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল জেলার অংশের মধ্যে পড়েছে ৬৫ কিলোমিটার সড়ক। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন চার লেনের সুবিধায় কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পের আওতায় সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের এলেঙ্গা থেকে সেতুর দিকে আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মিত হয়েছে। অপরদিকে সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর থেকে জোকার চর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক চার লেন হয়েছে। মাঝে প্রায় আট কিলোমিটার রয়ে গেছে দুই লেনের সড়ক। আর এই আট কিলোমিটারে কয়েক দিন ধরে যানজট হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের ১৩ কিলোমিটারে মোট ১৮টি সেতু রয়েছে। এ সেতুগুলো প্রস্থে দুই লেন সড়কের সমান। কিন্তু সেতুগুলোর দুই পাশেই তিন ফুট করে পায়ে হাঁটার লেন রয়েছে। এতে দুই লেনের সড়ক সেতুতে গিয়ে ৬ ফুট চেপে গেছে। পাশাপাশি দুটি যানবাহন সেতুগুলো ধীরগতিতে অতিক্রম করতে হয়। এটিও যানজটের অন্যতম কারণ মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মহাসড়কের মির্জাপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ঘুরে চার লেন সড়ক এবং এর দুই পাশে সার্ভিস লেন রাস্তায় দেখা যায়, কোথাও কোনো সমস্যা নেই। চার লেন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মিজান সারওয়ার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে, তাতে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার চার লেনের সুবিধা নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) রফিকুল ইসলাম সরকার জানান, যানবাহনের চাপ বেশি হলে এলেঙ্গা থেকে উত্তরবঙ্গগামী সড়ক একমুখী (ওয়ানওয়ে) করে দেওয়া হচ্ছে। তখন উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।