বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন চতুর্মুখী সংকট। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানি কমে গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এরপরও ব্যাংকগুলো এলসির দায় পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কঠিন, চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিকূল একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে একটি বিশেষ ধরনের বাজেট প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু নতুন মেয়াদে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট পেশ করলেন তাকে অতীতের মতোই উচ্চাভিলাষী ও কল্পনাপ্রসূত বাজেট হিসেবেই অর্থনীতিবীদরা আখ্যায়িত করেছেন।
বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালাতে হয়, যারা সরকারের পক্ষে কাজ করেন তাদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট বানানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়। একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, ঐ পরিকল্পনারই আনুষ্ঠানিক নাম বাজেট। বিগত কয়েক বছর যাবৎ আয়-ব্যয়ের বিপুল ঘাটতিসহই বাজেট দিচ্ছে সরকার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাজেটের আকার প্রতি অর্থবছর বাড়লেও, ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের কোনো সামঞ্জস্যও থাকছে না।
ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়ে মানুষকে যেমন আয় ও ব্যয়ের হিসাব করে জীবন-জীবিকা চালাতে হয়, রাষ্ট্রকেও তাই। তবে ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের বাজেটের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। ব্যক্তি জানেন তার আয় কত এবং সে অনুযায়ী ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে তারপর কোন কোন খাত থেকে আয় করা যায়, তা ঠিক করে থাকে। তবে, নির্বাচনের মতো বাজেট নিয়েও মানুষের আগ্রহ বিগত বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে।
অধিকাংশ মানুষেরই বাজেট নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। বাজেট থেকে তারা নতুন কিছু প্রত্যাশাও করেন না। এর কারণও আছে। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ খুবই সীমিত। ফলে, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো প্রতিফলন বাজেটে দেখা যায় না। প্রতি বছর পার্লামেন্টে বাজেট সেশনে এত ঘটা করে বাজেট প্রকাশ করা হচ্ছে, তারপরও সাধারণ মানুষের তেমন কোনো আগ্রন না থাকার বড়ো একটি কারণ হলো, মানুষের ওপর কর বাড়ছে অথচ এর প্রতিদান হিসেবে তারা নাগরিক অনেক সুবিধা থেকেই বঞ্চিতই রয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে, স্বাভাবিক সৌজন্যতা প্রকাশ করার মতো মানসিকতা বা ইচ্ছেও মানুষের মধ্য থেকে হারিয়ে গেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় এতটা বেড়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে। সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য নানা উদ্যোগ নিলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। উল্টো বেড়েই চলছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে আরও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা এপ্রিলে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে অর্থনীতির অন্যান্য সূচকগুলোও এখন নি¤œগামী। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে সেভাবে মানুষের আয় বাড়ছে না। ফলে, নজিরবিহীন ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এই বাস্তবতায় অনেকেই আশা করেছিলেন, বাজেটে গণমানুষের ভোগান্তি কমাতে কার্যকর কোনো নির্দেশনা থাকবে। কিন্তু আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ কমানোর তেমন উদ্যোগ নেই, বরং বাজেটের কিছু কর প্রস্তাব নি¤œ আয়ের মানুষগুলোকে বাড়তি চাপে ফেলতে পারে। এতে পদে পদে ভোগান্তি বাড়বে, খরচও বাড়বে। এই মুহূর্তে মানুষ যখন ১০ শতাংশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন অর্থমন্ত্রী তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর আশ^াস দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছেন। কিন্তু একই বাজেট প্রস্তাবনায় আবার ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে অসংখ্য নিত্যপণ্য, পণ্যের কাঁচামালে শুল্ক-কর বসানো হয়েছে। পার্কে ভ্রমণ থেকে পানের জর্দা-জুস-বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্য ও সেবায় বাড়তি কর আরোপ করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে রেয়াতি হারে ভ্যাট এবার কিছু খাতে তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য এই ছাড় কমে যাচ্ছে। আগে শূন্য শুল্ক থাকলেও শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এছাড়াও অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে শূন্য শুল্ক সুবিধা থাকছে না। এসব অঞ্চলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এর প্রভাবও সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে।
কাগজ-কলমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিলেও কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে কমানো হবে সে বিষয়ে বক্তৃতায় বিস্তারিত বলেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের ভ্যাট-আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও সংকুচিত হয়ে যাবে।
লক্ষনীয় বিষয় হলো, যে বিষয়গুলো একদমই নাগরিক জীবনযাত্রার সাথে সম্পৃক্ত, বেছে বেছে সেখানেই যেন করারোপ করা হয়েছে। যেমন লন্ড্রিতে কাপড়চোপড় পরিষ্কার বা আয়রন করতে এখন বাড়তি টাকা গুণতে হবে কারণ প্রস্তাবিত বাজেটে সেখানেও ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে অল্প আয়ের মানুষেরা যেহেতু বিত্তশালীদের মতো অহরহ দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে পারেন না, তাই তাদের জন্য স্থানীয় পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রগুলোই ছিল ভরসা। অথচ আগামীতে পার্কে প্রবেশ ও রাইডে চড়ার খরচ বাড়তে পারে, কারণ সেখানেও ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়েছে। অনেকে আবার দেশে-বিদেশে ঘুরতে পছন্দ করেন। এজন্য ট্যুর অপারেটরদের সাহায্য নেন। এই সাহায্য নিতেও এখন বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে। কারণ ট্যুর যারা পরিচালনা করবেন সেই সব সংস্থার ওপরও নতুন ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
চাল, ডাল, গম, খেজুরসহ ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে উৎসে কর এক শতাংশ কমিয়েই সরকার আশা করছে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বর্তমানের দুই অঙ্কের ঘরে থাকা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারবে। তবে ভ্যাটের মাধ্যমে প্রায় ১৫ শতাংশ আয় বাড়ানোর যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তাতে সরকারের এই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু আমদানি পণ্যে সামান্য শুল্ক কমানো হলেও এর সুবিধা প্রান্তিক পর্যায়ে পড়বে না বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। একদিকে সিন্ডিকেট, অন্যদিকে ভ্যাটের চাপে পণ্যমূল্য আরও বাড়বে। ফলে সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য নিলেও তা কতটা কার্যকর করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে সাধ্যানুযায়ী এসি কেনার স্বপ্ন দেখছিলেন যারা, এবারের বাজেট তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়নকে অনেকটাই কঠিন করে তুলেছে। কারণ এসি তৈরির মূল উপকরণ কম্প্রেসার ও অন্য উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি উৎপাদন পর্যায়ে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হয়েছে। এতে এসির দাম বাড়বে। একই অবস্থা ফ্রিজের ক্ষেত্রেও। ফ্রিজের কম্প্রেসার আমদানিতে শুল্ক এবং ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া খরচ বাড়বে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব, টিউব লাইটের। ফলে সংসারের ঘানি টানতে খরচ আরো বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্ল্যান্ট, ইকুইপমেন্ট ও ইরেকশন ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে জনজীবনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত বিদ্যুতের দাম আরো বাড়তে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে পণ্যের উৎপাদন খরচে।
আগামী দুই অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের পাঁচ হাজার, অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের চার হাজার এবং অন্য জেলা শহর ও পৌর এলাকার করদাতাদের তিন হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। আমরা বহু বছর ধরেই শুনে আসছি যে, এই বাজেটে বড়োলোকেরা আরো বড়োলোক হবে আর গরিবেরা আরো গরিব হবে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটও তার ব্যতিক্রম নয়। কেননা, করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখার পাশাপাশি ধনীদের সারচার্জ বা সম্পদ করে ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি পরিবেশ সারচার্জেও কোনো হাত দেওয়া হয়নি। ফলে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ থাকছে বিত্তবানদের।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলছেন, যা বৈধভাবে অর্জিত বা প্রদর্শিত নয় অথবা কালো টাকা হিসেবে বিবেচিত। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অবিশ^াস্য খবর যেমন সামনে আসছে তেমনি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়া সিংহভাগ প্রার্থীই কোটিপতি বলে জানা গেছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইউবিএস ব্যাংকের গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অর্থনীতির নানামুখী সংকট থাকার পরও দেশে বিলিয়নেয়ার বা শতকোটি টাকার মালিকের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে, যারা দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করছেন। এরই মধ্যে অপ্রদর্শিত সম্পদ বা কালো টাকাকে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে। তবে এ জন্য আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি আয়কর দিতে হবে। আগে এই হার ছিল ১০ শতাংশ, এবার তা হচ্ছে ১৫ শতাংশ। এ প্রক্রিয়ায় টাকা বৈধ করলে সরকারের কোনো সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোনো ধরনের প্রশ্ন করতে পারবে না। এ পদক্ষেপ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে আরো বাড়বে বলেই সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। বাজেটে বিশেষ গোষ্ঠীর অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকাকে বৈধ করার এত সুযোগ রাখা হলেও দেশের সাধারণ মানুষকে মূল্যস্ফীতিসহ বিদ্যমান সংকটগুলো থেকে বের করে আনার মতো বিস্তৃত দিকনির্দেশনা নেই।
আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা মুদ্রাপাচার, করখেলাপি ও ঋণখেলাপি। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানের কোনো দিক নির্দেশনা বাজেটে নেই। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু তিন মাস পর মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ পৌঁছেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এ খাতের বিতরণ করা ঋণের ১১.১১ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। অথচ খেলাপী ঋণ বা পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো নির্দেশনা স্পষ্ট করা হয়নি।
বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবীদরা অনেক মন্তব্য বা কলাম করছেন। বিভিন্ন সংস্থা নানাভাবে বাজেটের পর্যালোচনা বা মূল্যায়নও করছে। এগুলো ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হয়তো সামনে আসবে। তবে এটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায়, এবারের বাজেটটি জনবান্ধব বাজেট নয়। খাদ্যদ্রব্য, জ¦ালানী বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ পানিসহ ইউটিলিটির বাড়তি বিল, যাতায়াত খরচার ক্রমবর্ধমান গতি, মাসে মাসে দাম সমন্বয়ের নামে গ্যাস ও বিদুতের দাম বৃদ্ধি, প্রি-পেইড মিটারের নামে মানুষের পকেটের টাকা কেটে নেওয়ার মতো বাস্তবতায় পড়ে মানুষের জীবনে এমনিতেই নাভিশ^াস। এর ওপর প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন, সাংসারিক জিনিসপত্র, আসবাব কিংবা মেট্রোরেলের মতো গণ পরিবহণের ভাড়ার ওপর করারোপ করে নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনযাপনকে অসাধ্য করে ফেলা হয়েছে।
মানুষের জীবন চালিয়ে নেওয়াই যেন এখন বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতিদিন বাড়ছে। অথচ এর সাথে তাল মিলিয়ে আয় বাড়ছে না মোটেও। প্রশাসনের বাহাসে উন্নয়নের বুলি যেমন বাড়ছে, তেমনি মুখ ঢেকে, অপমান সহ্য করে টিসিবির খোলা ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো মানুষের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই করুণ বাস্তবতার মাঝেই করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার এই বাজেট প্রস্তাবনার প্রভাবে আরো বেশি বিপাকে পড়বে সাধারণ মানুষ।