সিলেট নগরে এখন আর পানি নেই। দ্রুতই নেমে গেছে বানের পানি। নতুন করে পানি না বাড়লে পশুর হাট নিয়ে এখন আর কোনো শঙ্কা নেই। হঠাৎ বন্যায় দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজার কর্তৃপক্ষ। টানা এক সপ্তাহ বাজারে পানি ছিল। কিন্তু গত তিন দিন আগে বাজারের পানি নেমে গেছে। এতে পশুর হাটের প্রস্তুতি সেরেছেন বাজার কর্তৃপক্ষও। ২৭শে মে সিলেটের সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবল বেগে ঢুকেছিল উজানের ঢল। এতে এক রাতেই তলিয়ে যায় জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ। এরপর কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে গোটা জেলায়ই বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রশাসনের তথ্য মতে; এখনো জেলার কয়েকটি উপজেলায় পানি রয়েছে। নতুন করে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে পানি বেড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আশা করছেন; উজানে বৃষ্টি না হলে সিলেটের বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো থেকেও বন্যার পানি নেমে যাবে। এবারের বন্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন খামারি ও হাট কর্তৃপক্ষ। সিলেটের প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজার। এটি সুরমা নদীর তীরেই অবস্থিত। উজানে ঢল নামার দুই দিনের মাথায় কাজির বাজারে পানি ঢুকেছিল। এতে করে পশু বাজারের উঁচু স্থানে স্থানান্তর করতে হয়েছিল। পানি স্থায়ী হওয়ায় চিন্তা আরও বেড়েছিল। কিন্তুতিন দিন আগে বাজার থেকে পানি নেমে গেছে। সুরমার পানি বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে। কাজিরবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন; কোরবানির পশুর হাটের জন্য তারা টানা এক মাস ধরে প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন। বিক্রির জন্য পশু এনে রেখেছিলেন হাটে। কিন্তু বন্যার পানি উঠে যাওয়ার কারণে তারা পশু বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করেন। এ সময় বিকিকিনিও কমে যায়। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তারা। এখন পানি নেমে যাওয়ার কারণে তারা চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছেন। কাজির বাজার হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার কারণে স্বস্তি ফিরেছে। ব্যবসায়ীরা পশু আনা শুরু করেছেন। হাট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও বাজারকে পরিষ্কার করা হয়েছে। এখন রোদ থাকায় কাদাও থাকছে না। তিনি বলেন- হাট কর্তৃপক্ষ হিসেবে তাদের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। বাইরের ব্যাপারীরা এখনো সিলেটে আসেননি। তারা যোগাযোগ করছেন। এবার বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণ পশু সিলেটে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দামও কম হতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি। সিলেটের কাজিরবাজারে উত্তরাঞ্চল থেকে পশুর ব্যাপারীরা আসেন বেশি। এবারো রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গার ব্যাপারীরা সিলেট আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লোলন জানালেন; হাটে যদি নিরাপদে, নির্বিঘ্নে পশু আসতে পারে তাহলে পশুর সংকট হবে না। পথে পথে চাঁদাবাজি ও পশু ছিনতাই বন্ধে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। এদিকে- সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এবার নগরে বসানো হচ্ছে ৭টি পশুর হাট। এর বাইরে ট্রাক টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ তাদের মাঠে আরেকটি হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে এবার হাট বেড়েছে। ইতিমধ্যে ৭টি হাটের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। টেন্ডার জমা পড়ার পর প্রক্রিয়াগত ভাবে এসব হাট ইজারা দেয়া হবে। নগরে যাতে অবৈধ হাট না বসতে পারে সে কারণে প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এবার সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে নতুন টুকেরবাজারের তেমুখী বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, মাছিমপুর কয়েদির মাঠ, মেজরটিলা বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহী ঈদগাহ মাঠের পেছনের অংশ, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহপরান বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এসফল্ট মাঠে বাজার বসানোর জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। শিডিউল জমা দেয়ার শেষ তারিখ রাখা হয়েছে ১১ই জুন। সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- হাট শেষ হওয়ার পর যারা এসব হাট ইজারা নেবেন তারা নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেবেন। এ ছাড়া; নিরাপত্তা সহ সার্বিক বিষয় তারা মনিটরিং করবেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিসুর রহমান জানিয়েছেন; এবার সিলেটের খামারিদের কাছে পশুর সংখ্যা কম। এ ছাড়া জেলায় বন্যা থাকায় সংকটও চলছে। এখন বাইরের ব্যাপারীরা যত বেশি পশু নিয়ে আসবেন ততই ভালো। দামও কমবে। তবে বাজার এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ও হাট কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানান তিনি।