বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম বলেছেন, ৫ জানুয়ারির একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনকে কলঙ্কিত করা হয়ছে। সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার দিবাস্বপ্নে বিভোর। কিন্তু দেশপ্রেমী জনতা সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। তিনি জনমত ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবিলম্বে অবৈধ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের জোর দাবি জানান।
তিনি আজ রাধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর ১০নং গোলচত্তর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বেনারসী পল্লীর সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য মুকুল পাটোয়ারী, মো. জোবায়ের, শাহ আলম তুহিন, মিজানুল হক, মো. নাসির উদ্দীন, আশরাফুল আলম, আলাউদ্দীন মোল্লা, আব্দুস সাকী, মোস্তাফিজুর রহমান ও ডা. শফিউর রহমান, ছাত্র শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল আলীম, সেক্রেটারি জোবায়ের, প্রায়ভেট বিশ^বিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি আবু নাহিদ, পরিকল্পনা ও সাহিত্য সম্মাদক মাসুদুর রহমান ও বায়তুলমাল সম্পাদক আব্দুজ জাওয়াদ প্রমূখ।
লস্কর তসলিম বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারা দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। তারা ২০০৮ সালে ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে দলীয় আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তারা ৫ জানুয়ারির তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। গণরায়ের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তনের সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার হরণ করে গোটা দেশকে ফ্যাসীবাদী ও স্বৈরাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই ব্যর্থ ও অগণতান্ত্রিক শক্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, মূলত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না। ১৫৪ সংসদীয় আসনে সরকার দলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ছিল বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। কিন্তু অবশিষ্ট আসনে একদলীয় নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে দেয়া হয়নি। সারাদেশে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৫ শতাংশেরও কম। রাজধানীর ২৯টি কেন্দ্রে কোন ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখিয়েছে। প্রহসনের এই নির্বাচনে জাল ভোট প্রদান, গণহারে সিল মারা ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। তাই কথিত এই নির্বাচন যেমন জাতীয়ভাবে প্রত্যাখাত হয়েছে ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কিন্তু সরকার পেশীশক্তির জোরে ক্ষমতায় থেকে জনগণের ওপর দলন-পীড়ন চালাচ্ছে। কিন্তু এসব করে অতীতে কোন অগণতান্ত্রিক শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি, আর আওয়ামী লীগেরও হবে না।
বাড্ডায় বিক্ষোভ মিছিল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মসলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেছেন, সরকার ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। জনগণ বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। তাই এই অবৈধ ও গণবিরোধী সরকারকে আর সময় দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি সরকারকে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার জোর দাবি জানান। অন্যথায় সরকারকে গণরোষের মুখোমুখী হতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীতে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি একথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি উত্তর বাড্ডা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হুসাইন মার্কেট সংলগ্ন স্বাধীনতা সরণিতে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, হোসাইন আহমদ, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ইব্রাহিম খলিল ও মহবুবুর রহমান, জামায়াত নেতা কুতুব উদ্দীন ও আতাউর রহমান সরকার প্রমূখ।
নাজিম উদ্দীন মোল্লা বলেন, সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এখন জনগণের উপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের বিরোধী দল দমনের কাজে নিয়োজিত করেছে। তারা সভা-সমাবেশে বাধা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে জনগণের গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করছে। দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুপ্তহত্যার মহোৎসব চলছে। মূলত এসব জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তিনি জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানান।