টানা কয়েক সপ্তাহ দেশজুড়ে বয়ে গেছে দাবদাহ। এর মধ্যে আবার ঘূর্ণিঝড় রিমালে বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছেন দেশের ৪৮ জেলার কৃষক ও খামারিরা। কৃষি উপকরণের দাম বাড়ার কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষক ও খামারিরা বাজেটে কার্যকর প্রণোদনা ঘোষণার প্রত্যাশা করেছিলেন।
তবে প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকি যেমন কমানো হয়েছে, তেমনি মোট বরাদ্দও কমানো হয়েছে। ফলে কৃষক ও খামারিরা আরো উৎপাদন খরচ বাড়ার চাপে থাকবেন।
প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ বিশেষ শ্রেণির হিমায়িত মাংস আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। কুমড়া, স্কোয়াশ, লাউ মোড়ানো বা টিনজাত ২.৫ কেজি পর্যন্ত পণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে।
কাজুবাদাম আমদানিতে ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানো হয়েছে। আগে এটি আমদানি করতে শূন্য শুল্কহার ছিল।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। তবে শুধু কৃষি খাতে বরাদ্দ যথেষ্ট কমেছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুধু কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্র্রস্তাবিত বাজেটে তা কমিয়ে ২৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে কৃষিতে বরাদ্দ কমেছে ছয় হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ছিল ১৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটে ছিল ২৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।
ফলে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে আট হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বা প্রায় ৩৩ শতাংশ কমে গেছে।
এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজেটে বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি কমানো হয়েছে। বিশ্ববাজারে যদি কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি পায়, তাহলে ভর্তুকি আরো বেশি লাগতে পারে। এ ছাড়া নানা কারণে দেশে কৃষি উপকরণ খরচ বাড়ছে। এ অবস্থায় ভর্তুকি না দিলে কৃষকের উপকরণ খরচ আরো বাড়বে। এটি কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ আরো বাড়িয়ে দেবে। ফলে এক পর্যায়ে এটি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। মনে রাখতে হবে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শস্য উৎপাদন কমার আশঙ্কায় আছি আমরা। এ অবস্থায় আমাদের শস্য আমদানি নির্ভরতায় না গিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোয় নজর দিতে হবে। এ কারণে কৃষকের জন্য ভর্তুকি বাড়ানোর ঘোষণা দিলে কৃষকরা আস্থা পেত।’
এদিকে কৃষিতে ভর্তুকি ও বরাদ্দ কমানো হলেও সরকারের নানান উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় সহায়তার আওতায় ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যগুদাম নির্মাণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে খাদ্যগুদামের ধারণসক্ষমতা ৩৭ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে যা ২১ লাখ ৮৬ হাজার টন রয়েছে।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/06/08/1395623