সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলাই বন্যাকবলিত হয়েছে। তবে উজানের উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। একইসঙ্গে নগর থেকেও নামছে পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি জেলা জুড়ে বিস্তৃত হওয়ায় বেশি কবলিত এলাকা থেকে পানি নেমেছে। তবে নতুন করে বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি না হলে আগামী দু’একদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথে বন্যা পরিস্থিতি বিস্তৃতি হয়েছে। অন্যান্য স্থানে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের ৮৪২টি গ্রামের ৬ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। ৫৭১টি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে ৪ হাজার ৫০০ বন্যার্ত মানুষ।
পাউবো তথ্য মতে, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় সুরমার পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জ উপজেলায় ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সিলেটে সুরমা নদীর পানি বিদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে। এ কারণে সিলেট নগরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। উপশহরের গলি সড়ক থেকে পানি নামছে। তবে এখনো প্লাবিত রয়েছে ডি,ই ব্লকের কয়েকটি সড়ক। বাসার নিচতলায় পানি রয়েছে।
গতকাল দুপুরে ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম আহমদ জানিয়েছেন, তার এলাকায় এখনো পানি রয়েছে। সুরমার পানি উপচে এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানান তিনি। উপশহরের অবস্থান সুরমা নদীর নিচে অবস্থিত। এ কারণে সুরমার পানি বাড়লে উপশহর তলিয়ে যায়। তিনি জানান, উপশহরকে বাঁচাতে হলে সুরমা নদী খননের পাশাপাশি বেড়িবাঁধও নির্মাণ করতে হবে। এজন্য দ্রুত উদ্যোগ না নিলে উপশহরে বসবাস করা দায় হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি। সিলেট নগরে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কমেছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিসুর রহমান কামরান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে এখন কাজ হচ্ছে নগরকে পরিষ্কার করা। এজন্য কয়েকশ’ পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টাই নগর পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেট নগরের অধীনে ২০ কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষা করা হচ্ছে। এটি অনুমোদিত এলে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তিনি আগামী শনিবার লন্ডন থেকে সিলেটে আসছেন। সিলেটে ফিরে তিনি ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি নগর রক্ষায় কাজ করবেন। এদিকে সিলেটে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে- রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বজ্রবৃষ্টিও হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে- বর্তমানে সিলেট মহানগরের ১৩ ওয়ার্ডে বন্যার পানি রয়েছে। শুরুতে অন্তত ৩০টি ওয়ার্ড পানিবন্দি ছিল। গত দুদিন থেকে ধীরে ধীরে নামছে পানি। মহানগরে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে ৪ হাজার মানুষ আশ্রয়ে আছেন। সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা বিস্তৃতি ঘটেছে। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাসহ জেলার অন্যান্য উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে অব্যাহত রয়েছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম।