দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে গ্যাসের সংকট চলছে। গত দুই দিন সেই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাসাবাড়িসহ সিএনজি স্টেশনগুলোতেও ঠিকমতো গ্যাস মিলছে না। অনেক স্টেশন বন্ধ থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেগুলো চালু থাকছে, সেগুলোতে গ্যাস নেওয়ার জন্য গাড়ির দীর্ঘ সারি লেগে যাচ্ছে।
অনেক সময় লাইনে থেকেও চালকরা পরে যখন স্টেশনে পৌঁছাচ্ছেন, তখন অল্প গ্যাস পাচ্ছেন। আবার কেউ পাচ্ছেনই না। এ অবস্থায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অ্যাপভিত্তিক প্রাইভেটকারগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করা শুরু করেছে। তাদের অনেকে স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আনোয়ারুল হক। গতকাল বুধবার সকালে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালককে জিজ্ঞেস করেন তেজগাঁও যাবেন কিনা। চালক রবিউল জানান, তিনি যাবেন না। এই দূরত্বের ভাড়ায় তাঁর পোষাবে না। কারণ গ্যাস না পেয়ে তাঁকে অকটেনে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ১৫ মিনিট অপেক্ষার পরও ন্যায্য ভাড়ায় অটোরিকশা না পেয়ে ২৫০ টাকায় আরেকটি অটোরিকশা নিতে বাধ্য হন আনোয়ারুল।
একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও উবারের প্রাইভেটকার চালক জানান, স্টেশনগুলোতে চাপ কম থাকায় গাড়িতে গ্যাস ভরতে অনেক সময় লাগছে। তাও আশানুরূপ গ্যাস মিলছে না। ফলে যাত্রী বহনের সুযোগ কমে গেছে। তাই ভাড়া বেশি রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কয়েকটি সিএনজি স্টেশন ঘুরে প্রতিটিতেই প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তেজগাঁও সাতরাস্তার পাশে থাকা আকিজ সিএনজি স্টেশন নামে দুটি পাম্প রয়েছে। গ্যাস না থাকায় একটি পাম্প গত মঙ্গলবার রাত থেকে বন্ধ। আরেকটিতে দেখা যায় দীর্ঘ যানবাহনের সারি। হাসান নামের এক প্রাইভেটকারচালক জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৭টা থেকে তিনি গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়ান। দুই ঘণ্টা পর যখন স্টেশনে পৌঁছেন, তখন গ্যাস পাননি।
খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন– সর্বত্রই গ্যাস নিয়ে হাহাকার চলছে। গত দুই দিন সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোকেয়া সরণি, খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশন ঘুরে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি পাম্পে অপেক্ষায় থাকা অটোরিকশাচালক সোহাগ জানান, যখন সংকট কম ছিল, তখন ২৩০-২৫০ টাকার গ্যাস নেওয়া যেত। সময় লাগত দু-তিন মিনিট। ২৫০ টাকার গ্যাস নিলে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা আয় হয়। এখন গ্যাসের চাপ এত কম, ১০০ টাকার বেশি নেওয়া যাচ্ছে না। দিনে একাধিকবার গ্যাসের জন্য লাইন দিতে হচ্ছে। একবার লাইন ধরে গ্যাস নিতে লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সঠিক চাপে গ্যাস মিলছে না। যখন সরবরাহ পরিস্থিতি একটু ভালো ছিল, তখন চাপ থাকত ৬-৭ পিএসআই পর্যন্ত। এখন নেমে এসেছে ১-২ পিএসআইয়ে। চাপ না থাকায় অনেকে স্টেশন বন্ধ রাখছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে গড়ে ২৫৫ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি প্রায় ১৬৫ কোটি ঘনফুট। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দিন দিন উৎপাদন কমছেই।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।