দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সূচকটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে রাষ্ট্রের অর্থায়নে ঘটিত ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে এসব ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে চলতি বছরের মার্চ শেষে এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে সরকারি এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, সরকারের সদিচ্ছা যদি থাকে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যদি শক্ত অবস্থান নেয়, তাহলেই খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বলে দেয়, খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারলে পারফরম্যান্স নেতিবাচক ধরে সব রকম সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হবে, তা হলেই খেলাপি ঋণ আদায় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো ঋণ খেলাপিদের আরও ছাড় দেওয়া, সময় বাড়িয়ে দেওয়া, সহজ শর্তে পুনঃতপশিল করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা যে কম তেমন নয়। ক্ষমতার প্রয়োগ করতে জানতে হয়। এ ক্ষেত্রে দরকার সৎ, যোগ্য এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব। সরকার যদি আর্থিক খাতের সংস্কার চায় তাহলে এদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।
তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধিতে নেতৃত্বে রয়েছে জনতা ব্যাংক। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিলো ১৭ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। কিন্তু মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১২ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা বা ৭৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ১৮ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ শতাংশ। গত মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। তিন মাসে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়েছে ১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বা ১৪ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে তিন মাসের ব্যবধানে ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে ৮৮ কোটি টাকা বা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।
গত ৩ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি কমেছে একমাত্র বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল)। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৯৮২ কোটি টাকা। কিন্তু মার্চ শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে ব্যাংকটির খেলাপি কমেছে ১০৮ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ। যদিও এই ব্যাংককেই জোর করে একীভূত করা হয়েছে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে।