ঈদযাত্রায় শতভাগ অনলাইনে টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সে অনুযায়ী আগাম ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় অনলাইনে চাপ পড়ছে যাত্রীদের। গতকালও সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই পৌনে ২ কোটি হিট পড়েছে রেলের ওয়েবসাইটে। আর দুপুর ২টায় পূবাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম ৩০ মিনিটে হিট পড়েছে দেড় কোটি। বিপরীতে ঢাকা থেকে বহির্গামী দুই অঞ্চলের আসন সংখ্যা ৩০ হাজার ৮০টি। এতে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ আবার টিকিট বিক্রি শুরুর মুহূর্তেও টিকিট কাটতে পারছেন না। সার্ভারে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা। এতে টিকিট কাটতে অনলাইনেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।
ঢাকা থেকে জামালপুর যেতে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলেন মোহাইমেনুল আলম পিয়াস।
দুপুর ২টায় পূর্বাঞ্চলগামী ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে দুপুর দেড়টার পর থেকেই টিকিট কাটার জন্য অ্যাপসে অপেক্ষা করছিলেন পিয়াস। কিন্তু ২টা বাজতেই টিকিট বুক করতে খালি আসন থেকে কাঙ্ক্ষিতটিতে সিলেক্ট করে ক্লিক করতে চেয়েও পারেননি। মোহাইমেনুল বলেন, জামালপুর এক্সপ্রেসে ১৭০টা সিট খালি দেখাচ্ছিল। কিন্তু সেগুলো সিলেক্ট করার সময় একটাও সিলেক্ট হচ্ছিল না। নিচে দেখাচ্ছিল সিট এভেইবল নেই। মাত্র ৩০ সেকেন্ডে সব টিকিট কীভাবে শেষ হলো। তখন সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপ থেকে বের হয়ে আবার ঢুকেছি। তখন দেখায় কোনো সিট খালি নেই। তিনি বলেন, ঈদে ট্রেন ছাড়া বাসে গ্রামে গেলে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হয়।
দুপুর দু’টোর দিকে তিস্তা এক্সপ্রেসে ৪টা টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলেন তাহমিদ হাসান। কিন্তু সেটাতে কাটতে না পেরে অগ্নিবীণা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও জামালপুর এক্সপ্রেসেও চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনোটাতেই ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেননি তিনি। তাহমিদ হাসান বলেন, যেই বগিতে সিট সবচেয়ে বেশি দেখাচ্ছিল ওই বগিতে চারটা সিট সিলেক্ট করি। ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর নট এভেলেবেল দেখায়। এরপরে অন্য বগিতে সিলেক্ট করি। কিন্তু দেখি অলরেডি সব টিকিট শেষ দেখাচ্ছে। পরে অন্য ট্রেনগুলোতেও দেখি একই অবস্থা। ইকবাল নামের একযাত্রী বলেন, আমি চট্টগ্রাম থেকে ভানুগাছের ৪টি টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেখানে দু’টো টিকিট পেয়েছি। পূর্বাঞ্চল এলাকার ট্রেনের টিকিট দুপুর দুইটায় অনলাইনে ছাড়ে। অথচ দুই-তিন মিনিটের মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। পরে আর বাকি দুইটা কাটতে পারিনি।
রেলের ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদযাত্রায় গত ২রা জুন ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সেদিন ওয়েবসাইটে তুলনামূলক কম চাপ থাকলেও ৩রা জনু ও গতকাল প্রচুর চাপ পড়ে। সোমবার সকালে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটে ১ কোটি ৯০ লাখ হিট পড়ে। এই সময়ের মধ্যে টিকিট বিক্রি হয় ১২ হাজার। আর দুপুরে পূর্বাঞ্চলের প্রথম আধা ঘণ্টায় ১ কোটি ১০ লাখ হিট পড়ে। গতকাল বিক্রি হয়েছিল ১৪ই জুনের টিকিট। সেদিন ঈদের ছুটি শুরু থাকায় গতকালও ওয়েবসাইটে চাপ বেশি ছিল। এদিন পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে এদিন মোট টিকিট ছিল ৩০ হাজার ৮০টি। এরমধ্যে বিক্রি দুপুর আড়াইটার মধ্যে বিক্রি হয়েছিল ২৬ হাজার ৬৩১টি টিকিট। অনেকে অভিযোগ করে বলছেন, টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার মধ্যে নিমিষেই উধাও হয়ে যাচ্ছে টিকিট। অনেকে আবার টিকিট কাটার সময় পর্যাপ্ত দেখালেও সেটি বুকিং দিতে পারেননি। টিকিট না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ জানিয়ে পোস্টও দিয়েছেন। ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ গন্তব্য দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলেন সুমন আহমেদ। তবে ২টা ৩ মিনিটে টিকিট শেষ দেখাচ্ছে। তার একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে দিয়ে সুমন লেখেন, অনেক সাধনা করেও পাইলাম না। দেখা যায় আছে। চাপ দিলে বুকিং দেখায়। অনেক আগে ঢুকেও পাইলাম না। সেকেন্ডে টিকিট শেষ হইয়া যায়! রুবেল নামের একজন রেলের ওয়েবসাইটের ২টা ৩ মিনিটের একটা স্ক্রিনশট দিয়ে লেখেন, মোবাইল নিয়ে বসে রইলাম তাও টিকিট করতে পারলাম না। এসব অনলাইন ভুয়া করে লাভ কি।
এসব প্রসঙ্গে সহজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার সন্দীপ দেবনাথ বলেন, সবকিছু মিলিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩৩ হাজার টিকিট রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন প্রথম আধাঘণ্টাতেই হিট পড়ছে ৩ কোটির বেশি। চাহিদার চেয়ে টিকিট অনেক কম টিকিট। যে পরিমাণ হিট পড়ছে তাতে মুহূর্তেই টিকিট শেষ হয়ে যাবে।