কোরবানির ঈদে মসলার অন্যতম অনুষঙ্গ এলাচ। এবার এলাচের বাজার সবচেয়ে চড়া। গত বছর এক কেজি এলাচ মানভেদে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায় কিনতে পেরেছেন ভোক্তারা। তবে একই মানের এলাচের দাম এবার পড়ছে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকা। গতবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণের বেশি দাম কেবল এলাচের নয়, প্রায় সব মসলার। যে কারণে গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে মসলা কিনতে হবে ভোক্তাকে। ঈদ ঘনিয়ে এলেও দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেড়েই চলেছে জিরা, গোলমরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচসহ প্রায় সব মসলার দাম। অথচ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য বলছে, চলতি বছর পর্যাপ্ত মসলা আমদানি হয়েছে। ফলে জোগানও সন্তোষজনক। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বেশির ভাগ মসলার দাম এবার ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি, এলসি খুলতে অনীহা ও সরবরাহ ঘাটতিকে দায়ী করছেন। তবে কোরবানিতে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজি করে মসলার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে দাবি ক্যাবের। আর ভোক্তার মহাপরিচালকের দাবি, মসলার দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তিন মাস আগেই পর্যাপ্ত মসলা আমদানি করা হয়েছে। সেসব মসলা এখনও গুদামে রয়েছে।
কোরবানির ঈদের আগের এই সময়ের সঙ্গে গতবারের মসলার দাম পর্যালোচনা করে বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। গত বছর প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। একই হলুদ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। একইভাবে গতবার মানভেদে এক কেজি আদা ভোক্তারা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় কিনতে পারলেও এবার এর দাম পড়ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। গত বছর প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। একই মানের রসুন বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। বাজারে এবার ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা; যা গতবার ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ভোক্তারা গতবার এক কেজি শুকনা মরিচ মানভেদে ২২০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনতে পেরেছেন; এবার একই মরিচের দাম পড়ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকার ওপরে।
দেশে সাধারণত তিন ধরনের এলাচ আমদানি করা হয়। এর মধ্যে বড় দানার উন্নত মানের এলাচ আসে ভুটান থেকে। আর মাঝারি সাইজের এলাচ আসে গুয়েতেমালা থেকে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও কিছু এলাচ আমদানি হয়। এখন বড় দানার ভালো মানের এক কেজি এলাচের দাম পড়ছে চার হাজার টাকার ওপরে; যা গতবার ছিল ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা। গতবার মাঝারি সাইজের মধ্য মানের প্রতি কেজি এলাচের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা; যা এখন পড়ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ছোট সাইজের এলাচের দাম পড়ছে এখন প্রতি কেজি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এসব এলাচের দাম গত বছর ছিল ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া দাম বেড়ে এবার প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, জয়ত্রি ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার, জিরা ৭৫০ থেকে ৮০০, গোলমরিচ ৭৮০ থেকে ৮৫০ টাকা, জায়ফল ৭০০ থেকে ৭৬০ টাকা এবং কিশমিশের দাম মানভেদে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাজারে মসলার দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ, বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা তিন মাস আগে থেকেই এলসি খুলে পর্যাপ্ত মসলা আমদানি করেছেন। যা এখনও বাজারে মজুত রয়েছে। তাই এখন ইচ্ছা করলেই ডলারের মূল্য বৃদ্ধি বা এলসির অজুহাতে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। এর পরও কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।