বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো। দেশে-বিদেশে সর্বত্র তার কর্মতৎপরতায় তার এই উদ্বেগের অভিব্যক্তি পরিলক্ষিত হতে দেখা গেছে। উন্নয়ন দু’প্রকারের; একটি হচ্ছে নিজস্ব সম্পদ, সামর্থ ও প্রযুক্তিভিত্তিক আরেকটি হচ্ছে বিদেশী সাহায্য-নির্ভর। বিদেশী সাহায্যের মধ্যে সম্পদ, প্রযুক্তি, কারিগরি সহায়তা প্রভৃতিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে বিদেশী সাহায্যের ব্যাপারে নিজস্ব ঘাটতি, সেটা জন ও জড়সম্পদ, প্রযুক্তি, কলাকৌশল প্রভৃতিই সাধারণত প্রাধান্য পায়। এজন্য নিজস্ব অবস্থান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। এটা না থাকলে দেশী-বিদেশী উভয় সম্পদেরই অপচয় হবার সম্ভাবনা থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন যে, বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান প্রযুক্তির প্রয়োগ আমাদের একরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা ও আশাবাদের বিষয়টি বিস্তারিত পর্যালোচনার দাবি রাখে।
প্রথমত, বিশ্বে যে কয়টি দেশ খাদ্যোৎপাদন ও কৃষি উন্নয়নে পথিকৃত হিসেবে পরিচিত তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান বিবেচ্য বিষয়। দ্বিতীয়ত, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ও তার সম্পদ এবং প্রযুক্তিগত চাহিদা নির্ণয় ও পর্যালোচনা করা জরুরি।
একটি বিষয় সবার কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, যে ভূখ- নিয়ে বাংলাদেশ গঠিত সেই ভূখ-টি সমুদ্রের বুক থেকে হঠাৎ জেগে উঠা নতুন কোনো অঞ্চল নয়। এই অঞ্চলের মানুষ এবং সরকার কৃষি ও গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে নবাগত বা শিক্ষানবিসও নয়। এসব ক্ষেত্রে তাদের শতাব্দি প্রাচীন সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন, গত শতাব্দিক তৃতীয় ও চতুর্থ দশকে তৎকালীন পূর্ব বাংলা সরকারের উদ্যোগে কৃষি ও গ্রামোন্নয়নকে সামনে রেখে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকা- বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে :
১। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ
২। মহাজনী আইন জারি ও ঋণসালিশী বোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামীণ ঋণের দায় নিয়ন্ত্রণ
৩। বিশ্বযুদ্ধোত্তর মন্দা মোকাবেলার জন্য ঋণদান সমবায় সমিতিসমূহের পুনঃপ্রবর্তন।
৪। ভূমি সংস্কার
৫। গ্রামোন্নয়নের লক্ষ্যে পল্লী মঙ্গল আন্দোলনের সূচনা ও তাকে জনপ্রিয়করণ;
বলাবাহুল্য উপরোক্ত কর্মসূচিসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রাক্কালে কর্মসূচিসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রাক্কালে উৎপাদনের উপকরণ (Factor of Production) হিসেবে Land
Labour, Capital & Organisation-কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল।
বলা বাহুল্য ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি ও পাকিস্তান হিন্দুস্তান প্রতিষ্ঠার পর পঞ্চাশের দগকে তৎকালীন পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানে নিম্নোক্ত কাজগুলো সম্পাদন করা হয়:
১। দেড়শ বছরের পুরাতন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত তথা জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করে কৃষকদের জমির মালিকানা প্রদান করা হয় এবং পূর্ববাংলা ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ত্ব আইন, ১৯৫০ (East Bangal Estate acquisition and Land Tenancy Act-1950) জারি করা হয়। এই আইন জারির আগে জমিদার/ তালুকদাররা ছিলেন জমির মালিক এবং কৃষকরা তাদের প্রজা ও জুলুম নির্যাতনের শিকার। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের ফলে ভূমি সংস্কার ও ভূমি মালিকানার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এতে কৃষি উৎপাদনের জন্য তারা নতুন প্রণোদনা পায়, মধ্যস্থতাভোগীদের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পায়।
২। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থানুকূল্য ও বিশেষজ্ঞ সহযোগিতায় এই দশকের মাঝামাঝি গ্রামভিত্তিক দুটি বিশাল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। এরমধ্যে একটি হচ্ছে ভি-এইড বা Village Agricultural and Industrial Development Programme গ্রামীণ কৃষি ও শিল্পোন্নয়ন কর্মসূচি এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির অধীনে জাপানী পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের সূচনা হয়, সূতা টেনে লাইন ধরে ধানের চারা রোপণ পদ্ধতি চালু করা হয়।
৩। সমবায় পদ্ধতি ও কৃষিঋণ ব্যবস্থা পুনর্গঠিত হয়।
৪। গ্রামীণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার পরিধি সম্প্রসারিত হয়।
একই সময়ে পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের পাটচাষী এবং পশ্চিম পাকিস্তানের তুলা চাষীদের প্রয়োজনীয় পুঁজি ও ঋণ সরবরাহের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। যে সমস্ত এলাকায় স্টেট ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা ছিল না সে সমস্ত এলাকায় ট্রেজারির দায়িত্বও এই ব্যাংককে দেয়া হয়। বর্তমানে এর নাম সোনালী ব্যাংক। বন্যা, খরা ও ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকার কৃষকদের ক্ষতি পোষণ ও পুনর্বাসনের জন্য সুদমুক্ত তাক্কাবী ঋণ নামে একটি ঋণ কর্মসূচিও চালু করা হয়।
ষাটের দশকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আরো সম্প্রসারণ ছাড়াও কৃষকদের জন্য সার, বীজ, কীটনাশক, বালাইনাশক ও সেচের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে বাঁধ নির্মাণ, খাল খনন ও সংস্কার এবং বিদ্যুৎ উন্নয়নের জন্য ওয়াপদা (WAPDA-Water and Power Development Authority) নামে একটি সংস্থা গঠন করে উপকূলবর্তী এলাকা ও বৃহৎ নদীসমূহের দু’কূলে বাঁধ দেয়া, সেচের জন্য পানি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে স্লুইস গেট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যাপক অবকাঠামো তৈরি করা হয়। গঙ্গা, কপোতাক্ষ বাঁধ ও সেচ প্রকল্প, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প, কর্ণফুলী সেচ প্রকল্প, মুহুরী সেচ প্রকল্প, মনু প্রকল্প প্রভৃতি হচ্ছে পানি নিষ্কাশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভূউপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ প্রকল্পের কয়েকটি উদাহরণ। বলাবাহুল্য বাংলাদেশ হবার পর ওয়াপদাকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়, এর একটি হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, আরেকটি হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও বিভাগ-পূর্ব বাংলার অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য একটি বোধগম্য কাঠামো তৈরি করে ভারত, চীন, তাইওয়ান ও জাপানের সমসাময়িক উন্নয়ন প্রচেষ্টার সাথে সংগতি রেখে প্রণীত কাঠামোর সংস্কার, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়। এই কাঠামোর আওতায় এই দশকে গঠিত চারটি প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি ছিল বাংলাদেশ অঞ্চলের অনন্য কীর্তি। এগুলোর মধ্যে ছিল:
১. থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র। (পরবর্তীতে উপজেলা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র (TTDC/UTDC)| । এটা ছিল পল্লী প্রশাসন বা উন্নয়ন প্রশাসনের সম্প্রসারিত একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতি আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় নিশ্চিত করেছে এবং সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও স্থানীয় পরিষদসমূহের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি করে গ্রামবাসীদের জন্য সরকারি সেবা, সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ সুবিধাবলীকে সহজলভ্য করে দিয়েছে। এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার আগে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও এজেন্সির দফতর/সেবা কেন্দ্রসমূহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার ফলে মানুষ সেগুলো থেকে বঞ্চিত হত। এই কেন্দ্র স্থাপন করে সকল বিভাগ ও এজেন্সির দপ্তর ও সেবা কেন্দ্র একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা হয় অনেকটা সেক্রেটারিয়েটের মতো।
২. স্থানীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্কাশন খাল খনন, বাঁধ, রাস্তাঘাট ও পুল-কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামতের জন্য পল্লী পূর্ত কর্মসূচির (Rural works Programme) প্রবর্তন। এর ফলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি, ভূমিহীন ও দরিদ্র বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা, দক্ষতার বিকাশ ও পল্লী প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালীকরণের কাজ সহজতর হয়েছে।
৩. থানা সেচ কর্মসূচির প্রবর্তন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদসমূহের হাজার হাজার সদস্যের মেধা ও সামর্থ্যকে কাজে লাগানো হয়। থানা কেন্দ্রে স্থাপিত ওয়ার্কশপ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পরামর্শ সেবাকে কাজে লাগিয়ে থানার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ভূউপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানি চিহ্নিত করা হয় এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই পানি সেচের কাজে লাগানোর জন্য হাজার হাজার শক্তি-চালিত পাম্প ও টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উন্নত জাতের বীজ, রাসায়নিক সার, কীট ও বালাইনাশক এবং পানি সেচ একটি কম্পোজিট প্রযুক্তিতে পরিগণিত হয়। এটা দেশে সবুজ বিপ্লব সাধন তথা শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আগে প্রতি একর জমিতে ১০/১২ মণ ধান উৎপাদিত হতো। অধিক ফলনশীল জাতের বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচ প্রযুক্তি প্রচলন ও উপযুক্ত পন্থায় পরিচর্যা পদ্ধতি চালু হওয়ায় একর প্রতি ফলন ও ৫০/৬০ মণে উন্নীত হয়। এটা শুধু ধানের বেলায় নয়, আলু, গাজর, টমেটো ও অন্যান্য তরিতরকারীর বেলায়ও প্রযোজ্য।
৪. দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সমবায় পদ্ধতির প্রচলন। শতাব্দী প্রাচীন সনাতন পদ্ধতির সমবায় ব্যবস্থাকে সংস্কার করে স্থির হয় যে, প্রত্যেকটি গ্রামে একটি করে কৃষক সমবায় সমিতি গঠিত হবে এবং থানা পর্যায়ে এসব সমিতির সমন্বয়ে গঠিত হবে তাদেরই ফেডারেশনÑ থানা কেন্দ্রীয় সমবায় এসোসিয়েশন। থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র বা TTDC এর দুটি বাহু থাকবে, একটি থানা কাউন্সিল এবং অন্যটি থানা কেন্দ্রীয় সমবায় এসেসিয়েশন। থানা কাউন্সিল প্রশাসন, আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়, ইউনিয়ন পরিষদসমূহের কার্যক্রমে সহযোগিতা, অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত সংরক্ষণ, রাজস্ব আদায় প্রভৃতি কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। পক্ষান্তরে পুঁজি গঠন ও ইকুটির মাধ্যমে কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা, থানা কেন্দ্রে কৃষক সমবায়ের প্রতিনিধি বিশেষ করে আদর্শ কৃষক, ম্যানেজার, চেয়ারম্যানদের প্রশিক্ষণের আয়োজন, প্রযুক্তির বিচ্ছুরণ, থানা পর্যায়ে কর্মরত সরকারি বিভাগ ও এজেন্সির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে ব্যবহার, গ্রামীণ সমস্যাবলী তাদের গোচরীভূতকরণ ও তাদের কাছ থেকে সমাধান আদায় তথা পারস্পরিক সমন্বয়, সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি এবং কৃষকরা যাতে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে পারে তা নিশ্চিত করবে। এই লক্ষ্যে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি নামে ড. আখতার হামিদ খানের নির্দেশনায় ও কুমিল্লা একাডেমির তদারকিতে ৬টি নির্বাচিত থানার এর কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে এই কর্মসূচি ছড়িয়ে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার প্রাক্কালে আমাদের খাদ্যোৎপাদন ছিল মাত্র ৯৫ লক্ষ টন। বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টন।
উৎপাদন বৃদ্ধির এই কৃতিত্ব দ্বি-স্তর সমবায় পদ্ধতির প্রসার ও সমবায়ী কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও নিরলস পরিশ্রমেরই ফল।
পরবর্তী কিস্তিতে আমি উপরে বর্ণিত ও বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং কর্মসূচিসমূহের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছটা আলোকপাত করার চেষ্টা করব। এগুলো আমাদের সম্পদ, এই সম্পদ ও তার সম্ভাবনাকে কাজে না লাগিয়ে বৈদেশিক সম্পদ ও প্রযুক্তির আমদানি অপচয়ের দুয়ারই খুলে দেবে। দেশ ও জাতি তা থেকে কোনো প্রকার লাভবান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।