সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানি কমতে শুরু করেছে উজানের উপজেলাগুলোতেও। জৈন্তা, গোয়াইনঘাটসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতেও পানি কমতে শুরু করেছে। রোববার নগরীর বন্যাকবলিত এলাকার পানি কমতে শুরু করে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। তবে পানি নেমে যেতে শুরু করলেও দুর্ভোগ বাড়ছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। সেই সঙ্গে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত।
সিলেট নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে বিভিন্নভাবে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ। সিটি মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে থাকায় মাঠে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরানসহ কর্মকর্তারা। আশ্রয়কেন্দ্র চালু এবং বানভাসিদের জন্য খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে নগরভবন। নগরীর বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ কর্মকর্তারা।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বেশির ভাগ এলাকার। সব ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে তাদের ওই আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। সুরমা তীরবর্তী বিদ্যুৎ সাবস্টেশনগুলো রক্ষার জন্য বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। ২৫ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর তাকবিরুল ইসলাম পিন্টু ও রায়হান আহমদের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তিনি জানান, নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী একটি ৫ তলা খালি ভবনে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার একটি চিকিৎসকদল সেখানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই দুটি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত ওয়ার্ডগুলোতে শুকনো খাবার, চিঁড়া, মুড়ি, গুড়, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন ও কিছু কিছু ওয়ার্ডে মোমবাতি সরবরাহ করা হয়েছে। গত শনিবার বিকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নদ-নদীগুলোর পানি কমলেও রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। পাহাড়ি ঢলে বন্যাকবলিত সীমান্তের উপজেলাগুলোতে পানি কমলেও ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত। বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে।
জানা গেছে, সিলেটের জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট এই ৫ উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। গোয়াইনঘাট-জাফলং ও সারি-গোয়াইনঘাট সড়কের অনেক জায়গায় ভেঙে বড় গর্তেরও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ সবগুলো সড়কই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা কানাইঘাটের পানিও শুক্রবার থেকে কমতে শুর করে। যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে, সেসব এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে অনেক এলাকায় ভেঙে পড়ছে কাঁচা ঘরবাড়ি।