চার দশকেরও বেশি সময় আগে জুবেদা খাতুনের কেনা জমি ভোগদখল করে আসছিলেন তাঁর ছেলেমেয়েরা। কিন্তু হঠাৎই সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে তাদের ১০২ শতাংশ জমি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দখল করে নেয় ভাওয়াল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষমতাকে পুঁজি করে ভাওয়াল রিসোর্টের ২৫ শতাংশের মালিক হয়েছেন সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ।
গাজীপুরের বারইপাড়া মৌজার নলজানি গ্রামের ওই জমি উদ্ধারে নানাজনের দ্বারস্থ হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল হক ও তাঁর ভাইবোনেরা। কিন্তু সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের ক্ষমতার কাছে বারবার হেরে গেছে পরিবারটি। জমি উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা করারও সাহস পাননি তারা।
অবশেষে গতকাল রোববার ভাওয়াল রিসোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারিরও নির্দেশ দিয়েছেন। গাজীপুরের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ নাজমুন নাহারের আদালতে এই মামলা করা হয়।
মামলার বাদী হয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন– ঢাকার কলাবাগান থানার সার্কুলার রোডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল হক, তাঁর ভাই ডা. সিরাজুল হক, বোন সামসুন্নাহার এবং ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা জাহিদুল হক, নিশাত তসলিম ও পারভীন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন সরকার বলেন, এ মামলায় বিবাদীরা হলেন– ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার প্রতিষ্ঠাতা ও আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেল, স্থানীয় উত্তর বানিয়ার চালা গ্রামের রফিকুল ইসলাম মাস্টার, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার ম্যানেজার সুমন ও কামরুল ইসলাম। একই সঙ্গে বিবাদী করা হয়েছে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে।
জানা যায়, সিএস রেকর্ড মূলে ওই জমির মালিক ছিলেন জনৈক সৈয়দ আলী। ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে তাঁর কাছ থেকে এ জমি কিনে নেন আব্দুল হাই ও তাঁর মেয়ে জুবেদা খাতুন। কেনার পর থেকেই পরিবারটি জমি ভোগদখল করে আসছিল। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভাওয়াল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জমিটি জবরদখল করে নেয়।
স্থানীয়রা জানান, মা ও নানার কেনা জমি উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে যান জুবেদার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কোথাও পাত্তা পাননি। জমি উদ্ধারের চেষ্টা করলেও সাবেক আইজিপি বেনজীরের ভয় দেখানো হতো।
বাদী পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন সরকার সমকালকে বলেন, আদালত শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৬ নভেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলেছেন।
বিশাল ভাওয়াল রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে বন বিভাগের ৬.৭০ একর জায়গা। খুব শিগগিরই বেদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধারে অভিযানে নামবে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ।
বন বিভাগ সূত্র বলছে, বন বিভাগের জমি দখল করে নেওয়ার সময় বনের কর্তারা ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। অবশ্য তখন থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছিলেন। এক পর্যায়ে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এক মামলায় এ জমির বিষয়ে জেলা জজ আদালত থেকে ‘স্টে অর্ডার’ নেয়। ফলে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি বন বিভাগ। তবে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ আইনি লড়াই চালিয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা জজ আদালতের স্টে অর্ডারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে আপিল করে। গত বৃহস্পতিবার আদালত আপিলটি গ্রহণ করে স্টে অর্ডার খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, এখন বনের ওই জমি উদ্ধারে আর কোনো আইনি জটিলতা নেই, কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই জমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।