আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর। এটি কার্যকর হলে ব্যাংকে টাকা রাখার খরচ সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এদিকে কর ফাঁকি রোধে ফার্নেস, বেইজ ও লুব্রিকেন্ট তেলের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য দ্বিগুণ পর্যন্ত করা হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছিল সরকার। দুই অর্থবছর বিরতি দিয়ে এ শুল্ক আবারও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এক বছরের মধ্যে যে কোনো সময় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ টাকা জমা টাকার ওপর কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। এক লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত স্থিতির ওপর ১৫০ টাকা দিতে হয়, যা আগামী বাজেটে ২০০ টাকা হতে পারে। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা হতে পারে।
১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর বর্তমানে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এই ধাপকে দুটি ভাগে ভাগ করা হতে পারে। প্রথম ভাগে ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা এবং ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার ওপর ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হতে পারে। অর্থাৎ, এই স্তরে শুল্ক বাড়ছে প্রায় ৬৭ শতাংশ।
বর্তমানে বছরে যে কোনো সময়ে কোনো ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে স্থিতি থাকলে তার ওপর এক্সাইজ ডিউটির পরিমাণ ১৫ হাজার টাকা। এই শ্রেণির ব্যাংক হিসাবধারীদের দুটি ভাগে ভাগ করা হতে পারে। ১ কোটি টাকা থেকে ২ কোটি টাকার হিসাবধারীদের অপরিবর্তিত রেখে ২ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হিসাবধারীদের ওপর তা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হতে পারে। আর ৫ কোটি টাকার ওপরে জমা থাকা অর্থের ওপর বিদ্যমান ৫০ হাজার টাকার এক্সাইজ ডিউটি অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে।
প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ যদি একবার এক লাখ টাকা বা তার ওপরের স্তরগুলোর সীমা স্পর্শ করে, তাহলে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। একাধিকবার স্পর্শ করলেও একবারই আবগারি শুল্ক কাটা হয়।
বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমিন সমকালকে বলেন, বর্তমানে ব্যাংক আমানতকারী থেকে ছয় ধরনের চার্জ কাটা হয়। এ অবস্থায় নতুন করে আবগারি শুল্ক বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক। ব্যাংক আমানত থেকে সহজেই রাজস্ব কেটে রাখা সম্ভব। তাই এভাবে শুল্ক বাড়ানো হলে জনগণ ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে করে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে যারা এক্সাইজ ডিউটির আওতায় আসবে অর্থাৎ ২ লাখ টাকার ওপরে হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় ৯৯ লাখ। আর এক কোটির ওপর হিসাবধারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার।
এদিকে কর ফাঁকি এড়াতে ফার্নেস, বেইজ ও লুব্রিকেন্ট তেলের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়াতে যাচ্ছে এনবিআর। ফলে আমদানিকারকদের মিথ্যা ঘোষণার কারণে বর্তমানে হাতছাড়া হওয়া প্রায় ৯০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহের আশা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ফার্নেস অয়েলের ট্যারিফ মূল্য দ্বিগুণ হতে পারে। অন্যদিকে বেইজ তেল ও লুব্রিকেন্ট তেলের ট্যারিফ বিদ্যমান স্তর থেকে ৫০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। বর্তমানে ফার্নেস তেলের ট্যারিফ মূল্য প্রতি টনে ২৬৫ ডলার। বেইজ তেল (লুব্রিকেন্ট তেল তৈরির একটি কাঁচামাল) ও লুব্রিকেন্টে তেলের ট্যারিফ মূল্য যথাক্রমে ৭০০ ও দুই হাজার ডলার। এ ছাড়া এ তিন ধরনের তেলের মোট করহার যথাক্রমে ৩৪ শতাংশ, ৩১ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ।
ফার্নেস অয়েল প্রধানত ভারী জ্বালানি তেলচালিত (এইচএফও) বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। শিল্প, পরিবহন ও অন্যান্য খাতে বিভিন্ন ইঞ্জিনে লুব তেল ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৬০টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস তেল ব্যবহার করে।