ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের পর দিন যত যাচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ততই ফুটে উঠছে। এই ঝড়ের তান্ডবে খুলনার উপকূলের মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক ঘরবাড়ি, গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে মাছের ঘের। নষ্ট হয়েছে ফসলের মাঠ। সর্বশান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯৬ জন কৃষক। ক্ষতি হয়েছে ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকার ফসলের।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের ১৩ হাজার ৭৯৬ জন কৃষকের ১৭ হাজার ৭৯৬ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। যারমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮ দশমিক ৪০ হেক্টর জমির ১৫ হাজার ৩৭৮ দশমিক ২০ মেট্রিকটন ফসল। যার মূল্য ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকা। এরমধ্যে ৭৭ জন কৃষকের আউশ ধানের বীজতলার ৫৪ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৭৮ হাজার ৮০০ টাকার, ৩৯ জন কৃষকের ১ হাজার ৭৫২ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির আউশের আবাদে ক্ষতি হয়েছে ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকার, ১৩৫ জন কৃষকের আক্রান্ত ১ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমির পাটে ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা, ৫ হাজার ৮৪৪ জন কৃষকের আক্রান্ত ৫ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির সবজিতে ক্ষতি ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৩৫ জন কৃষকের আক্রান্ত ২১ হেক্টর জমির টমেটোর ক্ষতি ১২ লাখ টাকা, ৭৯১ জন কৃষকের আক্রান্ত ৪৮৫ হেক্টর জমির তিলে ক্ষতি ৫৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৪৫১ জন জন কৃষকের আক্রান্ত ২৭০ হেক্টর জমির মুগ ডালে ক্ষতি ২২ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪০ টাকা, ২৮৫ জন কৃষকের আক্রান্ত ১৭৫ হেক্টর জমির মরিচে ক্ষতি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা, তবে ৩৩ হেক্টর জমির আদা, ২০৩ হেক্টর জমির হলুদ, ১১৮ হেক্টর জমির তরমুজ, ৭২ হেক্টরের আখ, ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির বোনা আমন ও ৩০ হেক্টর জমির চিনা বাদাম আক্রান্ত হলেও আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়নি।
এছাড়া ২ জন কৃষকের আক্রান্ত ১ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির ভূট্টায় ক্ষতি ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা, ৩ হাজার ৮৬৫ জন কৃষকের আক্রান্ত ১ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমির আম এর ক্ষতি ১০ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা, ৬০ জন কৃষকের আক্রান্ত ৭৭ হেক্টর জমির লিচুতে ক্ষতি ৪০ লাখ টাকা,৭৬৭ জন কৃষকের আক্রান্ত ৩১০ হেক্টর জমির পেঁপে এর ক্ষতি ১ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, ১ হাজার ২৩৯ জন কৃষকের আক্রান্ত ৫৪৫ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি ২ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ৮১ জন কৃষকের আক্রান্ত ৮৭৭ হেক্টরের পান এর ক্ষতি ১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং ১২৫ জন কৃষকের আক্রান্ত ১১৫ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ টাকার।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে খুলনা জেলার তিনটি উপজেলায় খাবার পানির চরম সংকট থাকলেও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ মতে ঝড় কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির আধার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের (ডিডি) নিকট নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতির তথ্য।
খুলনা জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আকমল হোসনে জানান, ঘুর্ণিঝড়ে খুলনার জেলার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হলেও মিষ্টি পানির আধারগুলো অরক্ষিত রয়েছে। কারণ জেলা পরিষদ কর্তৃক সংরক্ষিত পুকুরগুলো তারা পুনঃখনন করে তাতে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নে এবং দাকোপ উপজেলার বটবুনিয়া এলাকার মিষ্টি পানির আধারে সামান্য ক্ষতি হলেও তা তারা মেরামত করেছেন। তারা ঝড়ের পর মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে জেলায় ৩৪টি পুকুর বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা খাবারের উপযোগি করে রেখেছেন। এ জলধারাগুলো লোকালয়ে করা হয়। তবে নদীর কূলে যেসব মিষ্টি পানির আধার রয়েছে তা নস্ট হলেও তার হিসেব তাদের কাছে নেই। কারণ তারা ওই সব জলধারা তদারকি করে না। এছাড়া তারা এসব উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপন করেন না। তিনি আরো বলেন, ঝড়ের পর তারা জেলার তিনটি উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে কাজ করছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। যা এখনও চলমান।
অপরদিকে খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোসলেহ উদ্দীনের নিকট ঝড়ে কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে তার কোন তথ্য নেই। তিনি বলেন, এসব তথ্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সংগ্রহ করে সরাসরি ডিজির নিকট প্রেরণ করেছেন। খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আফিসার শেখ অহিদুল আলম ঢাকায় থাকার কারণে এ ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারেনি।