রাজনীতি ও অর্থনীতি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা পৃথিবীর মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিশেষভাবে বিবেচিত। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, রাজনীতি ভালো না চললে অর্থনীতিও ঠিকমতো চলতে পারে না। রাজনীতিতে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরলে সবল হয় অর্থনীতির ভীত। তা না হলে সময়ের ব্যবধানে অর্থনীতির চরম বিপর্যয়ের কারণে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমন কী দেশ দেউলিয়া হয়ে এক সময় সার্বভৌমত্বও বিলীণ হয়ে যেতে পারে।
বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা এবং জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধিজনিত এবং দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষীণ হওয়া, সততার অভাব, মানবাধিকার বিষয়ে অনিশ্চয়তা, আইন শৃংখলার চরম অবণতি, খাদ্য ঘাটতি, ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, মুদাস্ফীতি, তারল্য ইত্যাদি কারণে একে একে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে ধীরে ধীরে কূটনৈতিক অবণতি জনিত কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি দেশের অর্থনৈতিক ভীত।
২০২৪ সালে রিজার্ভের পরিমাণ নেমে এসেছে অর্ধেকে। এনিয়ে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ১লা সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি: দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের সার্বিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ৯০ কোটি মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় কনভার্ট করলে মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ কোটি টাকা। বিনিয়োগবিহীন এত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার স্ফীত রিজার্ভ দেশের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আমদানি রপ্তানির আড়ালে লোপাট হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকা। ২০২০ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ স্মরণকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। যদিও আয়তনের হিসেবে এ দেশ বিশে^ও ৯৪ তম, তবে ঘনবসতির হিসেবে এ দেশ বিশে^র মধ্যে ৯ম। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ক্ষুদ্রয়াতন দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। যে কারণে প্রতি বর্গমাইলে জনবসতি প্রায় ২৫ হাজারের বেশি। এদেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৬.২০ শতাংশ, অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১১.৯০ শতাংশ। তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত দেশে ৪ কোটি ১৯ লাখ লোক দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে অকর্মণ্য, পঙ্গু, অন্ধ, পক্ষাঘাত, থ্যালাসেমিয়া, অটিজম, এইডস, জন্ডিস, যক্ষ্মা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগিসহ নানাবিধ জটিল রোগে-শোকে আক্রান্ত দেশের তিন কোটির কাছাকাছি।
অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হয়ে দেশ বাসযোগ্যতা হারাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পানি আর নদীকেন্দ্রিক অধিকার নিয়ে বিশে^ যে পরিমাণ যুদ্ধ হয়েছে তা অন্য কোন বিষয়ে হয়নি বলে ভূ-তাত্বিক, অর্থনৈতিক ও রাজনীতিবিদদের ধারণা। বাংলাদেশ সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে কারণ- ১৯৭১ সালে দেশ বিভাগের সময় এ ভূখন্ডে নদ-নদীর সংখ্যা ছিল এক হাজার তিনশত। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর কৃত্রিম পানি সংকট সৃষ্টিকারীদের অরাজগতায় বাংলাদেশ দিন দিন এক মহা সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বন্যা, খরা, নদী ভাঙন, ঝড়, ও অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সাগরের উত্তাল, প্রখর রোদ,দাবদাহ ইতাদি অভিঘাত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করছে প্রতিনিয়ত। এবার ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে অতিমাত্রায় দাবদাহে সারাদেশের জনপদে জীবনযাত্রায় নেমে এসছিল এক মারাত্মক অচলাবস্থা।
অপরদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, এসব নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। সূদ, ঘুষ, হুন্ডি, খুন, গুম, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ ইত্যাদিও পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিংিসা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতি গোলামী, আইন শৃঙ্খলার অবণতি, জননিরাপত্তার অভাব, আইন ও বিচার বিভাগে আস্থাহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, গণতন্ত্রের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি, আদর্শ রাজনীতির পরিবর্তে স্বার্থসিদ্ধি ও অতিমাত্রায় ক্ষমতার লিপ্সা এবং স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতার মানসিকতার অভাব হলে দেশে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রার (এসডিজি)আশায় গুড়েবালি মিশ্রিত হয়।
আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবেনা যে, দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলা অঞ্চলসহ ভারত বর্ষের প্রায় ৪০ লাখ বণিআদমের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হয়। আর ১৯৭১ সালে যুদ্ধ বিদ্ধস্থ দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে তলাবিহীন ঝুঁড়ির খেতাব নিয়ে। সেময় খাদ্য ঘাটতিছিল ২৫-৩০ লাখ টন। এই ঘাটতি মোকাবেলায় দেশে যে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয় তা অনেকাংশেই আজ অনেকটা সফল। সে সময় শ্লোগান ছিল “কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে” এই চিন্তার আলোকে দেশের অর্থনৈতিক সামাজিক ও গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এত কাদ্য চাহিদা মেটাতে খাদ্য উৎপাদনে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এতে দেশে ও মানুষের খাদ্য ঘাটতি দিনে দিনে কমে আসে।
লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুতের ভর্তুকি, শিক্ষা, চিকিৎসা, বস্ত্র ও গণপরিবহনে ভাড়ার চাপে এবং একশেণির মুনাফাখোর- সুদখোরদের কবলে বাজার সিন্ডিকেটের কারণে আজ দেশের মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষ দিশেহারা। সাধারণ মানুষের অভাব আর দারিদ্র্যতার সুযোগে এ দেশের এক শ্রেণির বস্তুবাদী মতাদর্শের ধারক-বাহকরা অর্থনৈতিক মুক্তির মিথ্যে আশ^াসে সভা সমাবেশে বলিষ্ঠ কন্ঠে ফাঁকা বুলি প্রচার এবং লেখনির মাধ্যমে নিজেদের জনদরদী সাজতে চায়, অন্যদিকে জান্নাতের আশা আর জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে একশ্রেণির ইসলাম নামধারী তাগুতের তাবেদার সংগঠনগুলো সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে, সে ব্যাপারেও সাবধান থাকতে হবে।
আমাদের পার্শবর্তী বন্ধু প্রতীম দেশ ভারত বাংলাদেশের উজানে ফারাক্কা, টিপাইমুখ ও গজলডোবাসহ ৫২টি বাঁধ নির্মাণ করে এ দেশকে গত ৫২ বছরের ব্যবধানে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে। দেশে এখন নামকাওয়াস্তে ৪০৫মতান্তরে ২৩০টি নদ-নদী কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নদী আছে মাত্র ৫-৭ খান। দেশের বৃহত্তর নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ হাতেগোনা নদীগুলিতে ৯মাস থাকে পানিশূণ্য মরুভূমি আর তিন মাস ভয়াবহ বন্যার তান্ডব। ১৯৭৭ সালের গঙ্গা চুক্তি এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে গঙ্গা সহ অন্যান্য নদীর পানি ভাগাভাগির চুক্তি কাগুজে কলমেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে তার ভিন্ন চিত্র আয়নার মতো স্বচ্ছ হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। সেই সাথে সীমান্ত হত্যার নজীরবিহীন ঘটনাতো একটি চলমান ঘটনা।
দেশের চা, চামড়া, চিনি, ও পাট শিল্প ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। বস্ত্র ও কাগজশিল্পসহ ছোট বড় শিল্প কারখানা চরম চাপ, জটিলতা, ঝুঁকি ও হুমকির মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। বিগত ৩০ বছরে এসব শিল্প কারখানার লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, অনেকে ইতোমধ্যে জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের পরিবার পরিজন এখন চরম দারিদ্র্যতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেই সাথে রাজনৈতিক জটিলতায় দেশ আজ ও দেশের মানুষ তিনভাগে অর্থাৎ শাসক, শোষক ও শাসিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে আমদানি-রপ্তানিতে চরম ধস নেমে এসেছে। দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবের কারণে গণতান্ত্রিক সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে চলছে চরম অস্থিরতা। ব্যাংকের আমানতের হার কমে গিয়ে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে মাথাপিছু ঋণের পরিমান বেড়েছে দুইগুণ থেকে তিনগুণ। জীবন বাঁচাতে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ এর মধ্যে প্রায় পাঁচকোটি মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত। দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ তিনবেলা দূরের কথা দুবেলা পুষ্টিকর খাবার যোগার করতে হিমসিম খাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রির আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার প্রেক্ষিতে জীবন বাঁচাতে দেনা-দফা, ঋণ করে খাবার যোগার করতে হচ্ছে অনেকের। চক্রবৃদ্ধিহারে সুদেও দেনা শোধ করতে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে শুরু করতে হয়েছে অনেকের। যাদেও কোন সম্পদ নেই তাদেও কেই কেই ঋণের ও সুদের টাকা পরিশোধের চাপ সহ্য করতে না পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহননের জঘণ্যতম পথ বেছে নিয়েছেন।
গত মার্চ ২০২৪ দেশে জাতীয় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাড়িঁয়েছে ১০ শতাংশে। আর খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁিড়য়েছে ১২ শতাংশে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিবিএস খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যাণ ২০২৩ এর চূড়ান্ত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে- দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ ঋণ করে জীবন বাঁচাতে খাদ্যের যোগার করছে। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে দেশে গরীব হয়েছে ২৭ লাখ মানুষ। সূত্র- সাপ্তাহিক একতা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ সংখ্যা।
অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিক সংগঠন ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর এক আলোচনায় ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, দেশের দুষ্টুচক্র তৈরি করেছে ব্যাংক খাত খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচারসহ সব অপরাধ এক যায়গায় নিয়ে এসেছে ব্যাংক। তিনি বলেন, এই সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সময় ২০০৮সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এরপর পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল এর পরও তা ১লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এটি অস্বাভাবিক এ অবস্থা মোকাবিলায় তিনি সামষ্টিক অর্থণীতির চাপ মোকাবিলায় সংস্কার জরুরি বলে মন্তব্য করেন। দৈনিক দেশ রুপান্তরে গত ৪ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রি: এক প্রতিবেদনে জানা যায়, যোগ্যদের ঋণ দিতে সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান ব্যাংকিং আইনে ঋণ পাওয়ার অযোগ্য হলেও সেসব ঋণ গ্রহিতা বা গ্রাহকরা ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে ব্যাংক থেকে, এইমর্মে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। বর্তমানে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ৮লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে একলাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এসময় মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৯ শতাংশই খেলাপি। তারল্য সংকটে বাণিজ্যিক ব্যাংক, একদিনে ধার গ্রহণ করেছে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ জ্বালানি স্বল্পতা। দ্বিতীয় ঝুঁকি হলো মুদ্রস্ফীতি। এছাড়া আয়-ভ্রয়ের বৈষম্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি)-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পিছিয়ে থাকা, এবং সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। ঐ প্রতিবেদনে বৈশ্বিক পরিসরে আগামী দুই বছরের জন্য ১০টি প্রধান ঝুঁকির সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে গুলো হলো-ভূল ও অপতথ্য, সাইবার নিরাপত্তাহীনতা, দেশে অভ্যন্তরীণ সশস্ত্রসংঘাত, অর্থনৈতিক সুযো-সুবিধার অভাব, মুদ্রাস্ফীতি, অনিচ্ছাকৃত অভিবাসন, প্রবৃদ্ধিও গতি কমে যাওয়া এবং দূষণ বিপর্যয়।
বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ালাড ইকোনমিক ফোরামের অংশীদার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, দেশের ব্যাংকখাত এখন ব্যক্তিস্বার্থেও হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, “উচ্চ মুদ্রস্ফীতির কারণে দেশে বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে। অর্থনীতিতে এতগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা আগে পড়িনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএম এফ)জানিয়েছে, বাংলাদেশে আমদানি, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, কর্মসংস্থান, রাজস্ব আদায়সহ প্রধান সূচকগুলো দিন দিন কমছেই। কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ ও এডিপি বাস্তবায়ন, ফলে ছোট হয়ে আসছে দেশের অর্থনীতি।
২০২৩ সালে সিপিডি আয়োজিত অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা বিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, সরকারি -বেসরকারি ব্যাংকে ২৪ টি ছোট-বড় অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে গত ১৫ বছরে লুট করা হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা।
গত ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রি: দেশের একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে গত ২০২৩ এর জুলাই-ডিসেম্বরে ৬ মাসে রাজস্ব খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। গত ২০ ডিসেম্বও ২০২৩ এ এক দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, সে বছর তৃতীয় প্রান্তিকে ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যংকসহ ১৪ ব্যাংক রেকর্ড পরিমাণ মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই এই ব্যাংকগুলো ন্যূনতম সিএআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। বলা হয়েছে, অভিভাবক ছাড়াই চলছে অর্থনীতি, আর্থিক অরাজগতার কারণেই উন্নয়ন সূচকগুলোর পতন অব্যাহত রয়েছে।
অথচ গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে দেশের নামকরা পাটকল আদমজিসহ ২২-টি বড় ধরনের পাটকল বন্ধ করা হয়েছে। এতে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিক ছাটাই হয়েছে। এছাড়া দেশের ছোট ও মাঝারী ধরনের শতাধিক টি কাঁচা পাটকল ও পাটক্রয় কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এত করেও প্রায় লক্ষাধিক পাট শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, অনেকে জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়ে পুষ্ঠিহীনতা ও রোগে শোকে কাতর হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কোথাও কোথাও এই সব শ্রমিক ঋণের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহননের মতো জঘন্য পথ বেছে নেয়ার খবরও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। মোট কথা শিল্প বাজার পরিবেশ বিপয়র্যয়ের কারণে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে। কমেছে টেকসই অর্থনীতি। (চলবে)