বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে সরবরাহ করা পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘ওয়াসা আইন ১৯৯৬’-এর ২২ ধারা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের লক্ষ্যে পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এ নিয়ে ২০০৯ সালের পর গত ১৬ বছরে ১৬ বার পানির দাম বাড়াল ঢাকা ওয়াসা।
গতকাল ঢাকা ওয়াসার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওয়াসা আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করেছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগে ছিল ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য একই পরিমাণ পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, যা আগে ছিল ৪২ টাকা। এই সিদ্ধান্ত মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন ও ন্যূনতম বিলসহ সব ধরনের (পানি ও পয়োনিষ্কাশন) অভিকরের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে টানা তিন বছর ৫ শতাংশ করে পানির দাম বাড়িয়েছে ওয়াসা। সরকারের অনুমোদনের পর ২০২০ সালে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য পানির দাম এক লাফে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এর পর ২০২১ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসা আবারো পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল। ২০২২ সালেও পানির দাম বাড়াতে চেয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু তখন পানির দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। বিধি প্রণয়ন না করে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এর পর পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত ছিল। এ কারণে এবার দিগুণ দাম বাড়িয়েছে ওয়াসা।
পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ মাহমুদুর রহমান মান্নার : ঢাকা ওয়াসার পানির দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট জনগণের ওপর নতুন বোঝা চাপানোর ব্যবস্থা করছে সরকার। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস আর জ্বালানি তেলের দাম। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী ভর্তুকি কমানোর নামে বছরে ৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকার তার অলিগার্কদের পকেটে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়ে সেই বোঝা চাপাচ্ছে জনগণের ঘাড়ে। অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস এবং জ্বালানি তেলের দাম। সরকারি হিসাবেই গত এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। সত্যিকার হিসেবে এই হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এই পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে পানির দাম বৃদ্ধি জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়াবে।
মান্না আরো বলেন, আওয়ামী লীগ মাফিয়াদের নিয়ে সংসদ বানিয়েছে। দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের সর্বোচ্চ আসনগুলোতে বসিয়েছে। এভাবে পুরো দেশকে একটা মাফিয়া, লুটেরা সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। আর লুটপাটের খেসারত দিচ্ছে সাধারণ জনগণ। দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ না করে সরকার দফায় দফায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল, পানির দাম বৃদ্ধি করছে। অবিলম্বে পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানান তিনি।