ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় এক কেন্দ্রের তিন বুথে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েনি একটিও। উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুজাপুর আর এম হাট কে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। অপরদিকে ভোট দিয়ে ব্যালট নিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করেছেন সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মিশুক। সকালে তিনি দক্ষিণ চরসাহাভিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন।
এদিকে জালভোটে সহযোগিতা ও জালভোট দেয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ ১০ জনকে আটক করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ফেনীর তিনটি উপজেলায় বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকালে সোনাগাজী সুজাপুর আর এম হাট কে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে ভোট শুরু হলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রে তেমন ভোটার উপস্থিতি ছিল না। কেন্দ্রটিতে মোট ১০টি বুথের মধ্যে দুই ঘণ্টায়ও তিনটি বুথে কোনো ভোট পড়েনি। অন্য ৭টি বুথে ১৮টি ভোট পড়েছে।
ভোটার না থাকায় ওই কেন্দ্রে অলস সময় পার করছেন ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোনাগাজী সুজাপুর আর এম হাট কে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. আবু সায়েম বলেন, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ১৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ছ’টি ও মহিলাদের জন্য চারটি বুথে ভোটগ্রহণ হয়।
এদিকে এই কেন্দ্রের মতো কম-বেশি প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে এ উপজেলার অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও।
নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। অপরদিকে সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট নিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করেছেন সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মিশুক। বুধবার সকালে তিনি উপজেলার দক্ষিণ চরসাহাভিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ছবি তুলে পোস্ট করেন। দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটনের এজেন্ট তিনি। পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটনকে ও টিউবওয়েল প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাখাওয়াতুল হক বিটুকে ব্যালটে সিল মেরে ভোট দিয়েছেন। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন তিনি। এ বিষয়ে ইয়াকুবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভোট দিয়ে খুশিতে ছবি পোস্ট করেছি।
বিষয়টি নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই ভোটার কোন কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সেটার খবর নিচ্ছেন তিনি। তবে এভাবে ব্যালটের ছবি প্রচার করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (কুমিল্লা অঞ্চল) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত জালভোট দেয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ ১০ জনকে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় পিটিআই কেন্দ্রে জালভোট প্রদানের সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও একজন পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়। ফেনী সদরে সরকারি বালিকা কেন্দ্রে ছ’জনকে আটক করা হয়। দাগনভূঞা উপজেলার গজারিয়া কেন্দ্রে মারুফ হোসেন (১৮) ও সোনাগাজী উপজেলার রাজাপুর মাস্টার মুজিবুল হক একাডেমি কেন্দ্রে জালভোট দেয়ার অপরাধে আরও একজনকে আটক করা হয়।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনে ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। ফেনী সদরে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছ’জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সোনাগাজী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন, দাগনভূঞা উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ছাড়া নির্বাচনে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী থাকায় ইতিপূর্বে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।