মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের জিম্মি করে বিমান ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে। ৩১শে মে’র মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে যেসব শ্রমিককে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তারা যেকোনো উপায়ে দেশটিতে ফিরতে চাইছেন। তাদের কাছ থেকেই অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এই রুটে অফ সিজনে ভাড়া ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সময়ে স্বাভাবিক ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু শ্রমিকদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এয়ার লাইন্সগুলো বলছে, ফিরতি ফ্লাইটে যাত্রী না থাকায় বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে ভাড়া নেয়া হচ্ছে তা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এটি যাত্রীদের জিম্মি করে নেয়া হচ্ছে।
টিকিট বাণিজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন ফারিয়েল ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইথার ফারিয়েল হামিদ। অভিযোগে বলা হয়, কর্মীদের সুবিধার্থে চারটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে একমাত্র সরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা বাংলাদেশ বিমান।
বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি ইউএস- বাংলাসহ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে এই জিম্মি তালিকায়। এসব ফ্লাইটের টিকিট নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতি টিকিটের দাম প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে থাকলেও সেটা কয়েকগুণ বেড়ে এখন ১ লাখ টাকা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে (জিডিএস) ফ্লাইটের টিকিট না দেখানোর সুযোগে বিমানের কর্মকর্তারা দুর্নীতি করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ফারিয়েল ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইথার ফারিয়েল হামিদ মানবজমিনকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন পাইলট। আমি জানি কোন দেশের বিমান ভাড়া কতো। শ্রমিকদের আমরা মুখে বলছি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। কিন্তু তাদেরকে জিম্মি করে এভাবে ২০ হাজার টাকার টিকিট ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় আমাদের একটি শ্রমবাজার চালু আছে। মালয়েশিয়ার সরকার কোনো কারণে একটি ঘোষণা দিয়েছে ৩১শে মে’র পরে তারা নতুন করে কোনো ভিসা ইস্যু কিংবা গ্রহণ করবেন না। অনেক শ্রমিক আছেন যাদের আগে থেকে ভিসা করানো আছে। তাদের হয়তো জুনের মাঝামাঝি কিংবা শেষে যোগদানের তারিখ ছিল। এই ঘোষণার সুযোগ নিয়ে সবক’টি এয়ারলাইন্স যে যার মতো একচেটিয়া টিকিটের দাম বৃদ্ধি করে ভাড়া আদায় করছে। এবং এই জিম্মিকারীদের তালিকায় বাংলাদেশ বিমানও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ বিমান কিছু বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। এক্ষেত্রে আমরা যারা টিকিট ব্যবসায়ী আছি তারা একটি সিস্টেমে দেশে টিকিট করে থাকি। যে জিডিএস থেকে আমরা টিকিট ক্রয় করি সেই জিডিএস-এ এই টিকিটগুলো দেখাচ্ছে না। শো করার সঙ্গে সঙ্গে এটি ভ্যানিস হয়ে যায়। ফলে এখান থেকে যে কেউ চাইলেই টিকিট ইস্যু করতে পারবে না। তাহলে এই টিকিটগুলো কোথায় যায়? বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে শ্রমিকদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট ক্রয় করতে হচ্ছে। এটা সিস্টেমে দেখায় ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
এ বিষয়ে বিদেশে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, নিঃসন্দেহে বিষয়টি যৌক্তিক নয়। আমাদের কথা হচ্ছে সবচেয়ে মিনিমাম খরচে আমরা লোক পাঠাতে পারি। যেখানে টিকিটের মূল্য ছিল ৩৫ বা তার কিছু বেশি। সেখানে এই ক্রাইসিসটি শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ করছে না। প্রত্যেক বেসরকারি বিমান সংস্থা করছে।
উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রি করার এজেন্সিগুলোর সংগঠন এসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম আরেফ মানবজমিনকে বলেন, এয়ারলাইন্সগুলো বিভিন্ন রুটে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করে। তারাই ভাড়াটা নির্ধারণ করে। এরপর ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো ওই নির্দিষ্ট ভাড়ায় টিকিটগুলো বিক্রি করে। এখন এই যে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। এবং টিকিটগুলো তারা যে বৈধভাবে ডিস্ট্রিবিউশন করছে এমনটা না। টিকিটগুলো সব এজেন্সি পাচ্ছে না। বিমান বাংলাদেশ বলছে তারা সব টিকিট জিডিএস সিস্টেমে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোনো এজেন্সি এই জিডিএস সিস্টেম থেকে টিকিটগুলো পাচ্ছে না। তাহলে টিকিটগুলো গেল কোথায়? কারা নিয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অন্যায় এবং অযৌক্তিক। বিমানের বিপণন ও বিক্রয় পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া কোনো সময়ই ১ লাখ টাকা ছিল না। এখনো ১ লাখ টাকা না। ঢাকা-মালয়েশিয়া আমরা যে এডিশনাল ফ্লাইট পরিচালনা করছি সেটার প্রকৃত ভাড়া ৬৯ হাজার টাকা। সাধারণত অন্য সময়ে এই ভাড়াটা ৩৫ হাজার টাকা। এখন যেহেতু এডিশনাল ফ্লাইটগুলোর ক্ষেত্রে ফিরতি ফ্লাইট পুরোটাই খালি আসবে তাই অতিরিক্ত ভাড়াটা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।