রাজধানীতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি অনেক পুরনো। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নাগরিকদের জলাবদ্ধতায় চলাফেরা করাও সয়ে গেছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই জলাবদ্ধতায় নাগরিকদের ভোগান্তি আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অন্যদিকে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটির নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগও কাজে আসছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে এবার আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে সংস্থা দুটি। ড্রেন, নালা, খাল পরিষ্কারে কাজ চলছে। যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়, তা সমাধানে পৃথক প্রকল্প নিচ্ছে সংস্থা দুটি।
যদিও বিদ্যমান জনবল দিয়ে সব এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা কঠিন বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
একই সঙ্গে আলাদা জলাবদ্ধতা নিরসন বিভাগ চেয়ে তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।
উত্তর সিটির জলাবদ্ধতা
চলতি বছর ১১ মে সকালে টানা এক ঘণ্টায় ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অর্ধশতাধিক সড়ক-গলিতে বৃষ্টির পানি জমে। এর মধ্যে ভাটারার সোলমাইদ ছাপরা মসজিদ এলাকায় হাঁটুপানি জমেছে।
নতুনবাজারে প্রগতি সরণিতেও পানি জমেছিল। দক্ষিণখান, উত্তরখান, মিরপুর-১০ থেকে ১৪ নম্বর, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কালশী রোড, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, মোহাম্মদপুর, ইসিবি, নূরের চালা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত পানি জমে ছিল। পল্লবীর কালশী রোডে কোথাও বুকসমান পানি, আবার কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। এর মধ্যে কালশী রোডের ২২ তলা গার্মেন্টসের সামনে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে যান চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়।
ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, এই এলাকায় থাকা এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।
ইব্রাহিমপুর, লাউতলা, কল্যাণপুর, রূপনগর, আবদুল্লাহপুর, সিভিল এভিয়েশন, বাইশটেক, বাউনিয়া, প্যারিসসহ ২৯টি খালের বর্জ্যও অপসারণ করা হয়েছে। কোথাও জলাবদ্ধতা হলে তাৎক্ষণিক ডিএনসিসির কুইক রেসপন্স টিম কাজ করবে। তবে খাল, ড্রেন, নালায় প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয় বলে দাবি সংস্থাটির।
দক্ষিণ সিটির জলাবদ্ধতা
গত ১১ মে বৃষ্টিতে নিউ মার্কেট, পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমণ্ডি ২৭, সায়েদাবাদ, শনির আখড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা হয়েছে। এর মধ্যে বংশাল ও নিউ মার্কেট এলাকায় সবচেয়ে বেশি পানি জমেছিল।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে নেওয়া ১১টি খাল থেকে সব বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। খালগুলোতে পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া বক্স কালভার্ট ও নর্দমা পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।
নিউ মার্কেটের জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন একটি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। নিউ মার্কেট থেকে পিলখানার ভেতর দিয়ে হাজারীবাগ সেকশনের দিকে লাইনটি যাবে। পরে তা বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে গিয়ে মিলবে। তবে কবে নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এবারে বেশি বৃষ্টি হলে নিউ মার্কেট তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
গত বছরের ১৪ জুলাই ডিএসসিসি ‘জলাবদ্ধতা নিরসন শাখা’ নামের নতুন একটি বিভাগে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে মোট ১১৪টি পদ এবং বাজার, বিপণিবিতান নির্মাণ ও সংস্কার শাখার রাজস্ব খাতে ১৪টিসহ মোট ১২৮টি পদের একটি প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আর ডিএনসিসি ‘ড্রেনেজ সার্কেল’ নামের একটি বিভাগে ২৬৫টি ও সিটি স্যানিটেশন সেলে ৬৯টি পদ তৈরির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায় গত অক্টোবরে। এরপর গত ১৪ মার্চ ডিএনসিসি ড্রেনেজ সার্কেলে ১৯৬টি এবং সিটি স্যানিটেশন সেলে ৬৬টি পদ তৈরির সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। তবে এখনো তা চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/05/29/1392394