ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান ১০ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। একই কারণে ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে হিসেব দিয়েছেন মন্ত্রী। গতকাল সোমবার ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে তীব্র গতির বাতাস এবং জোয়ারের কারণে ফল-ফসল এবং মাছ ও গবাদিপশু ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন উপকূলবাসী। জোয়ারে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির ফসল। শাকসবজিসহ নানা ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের, কৃষকের সম্বল গবাদিপশু, বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে বহুসংখ্যক গাছ-গাছালি। এসময় তীব্র বাতাস, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয় এবং বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। ভোলায় ৩ জন, পটুয়াখালীতে ৩ জন, বরিশালে ২ জন, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মারা গেছেন। সর্বমোট অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার (২৬ মে) বিকেল থেকে গতকাল সোমবার (২৭ মে) দুপুর পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
ভোলা: জেলায় নারী, শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোররাতের দিকে লালমোহন, দৌলতখান ও বোরহান উদ্দিন উপজেলায় ঘর চাপায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- মনেজা খাতুন (৫৪), মাইসা (৪) ও জাহাঙ্গীর (৫০)।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, লালমোহন উপজেলার চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তীব্র বাতাসে ঘর চাপায় মনেজা খাতুন মারা যান। একই সময় দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের উপর গাছ চাপায় মাইশা (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। বোরহান উদ্দিন উপজেলার সাচরা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাথানবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর (৫০) এর মৃত্যু হয় ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে।
পটুয়াখালী
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে পটুয়াখালীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরের পর কলাপাড়ায় ফুফু ও বোনকে নিরাপদ স্থানে আনতে যাওয়ার পথে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করতেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর ২টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন ও ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। নৌকা না থাকায় সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর ওই স্থান থেকে শরীফের লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
বাউফলে ঝড়ো হাওয়ায় একটি পরিত্যক্ত টিনশেড দোতালা ঘরের নিচে চাপা পড়ে আব্দুল করিম নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাতে ঝড়ের সময় বৃদ্ধ করিম পরিত্যক্ত ওই ঘরে আশ্রয় নেন এবং রাতের যে কোনো সময় ঝড়ো হাওয়ায় ঘর ভেঙে এ ঘটনা ঘটে। বাউফল পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের কাছে এ ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ করিমের বাড়ি বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদি গ্রামে। তিনি ভিক্ষা করতেন।
এদিকে দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড নলদোয়ানি স্লুইসগেট এলাকায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার (৭০) এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নজরুল গাজী।
বরিশাল
নগরের রুপাতলী এলাকায় সোমবার ভোর ৪টার দিকে একটি ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবারের হোটেলের ওপর পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। এ ঘটনায় শাকিব নামে এক হোটেলকর্মী আহত হয়েছেন। তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, ঝড়ো বাতাসে তিনতলা ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন একটি দেয়াল ধসে পাশের টিনশেড খাবার হোটেলের ওপর পড়ে। ওই হোটেলের মালিকসহ দুই কর্মচারী তখন ঘুমিয়ে ছিল। তারা টিনের চাল ও দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাতক্ষীরা
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শওকাত মোড়ল গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কুমিল্লা
নগরীতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেওয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর শাকতলা এলাকায় নূর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্কুলছাত্র সাইফুল ইসলাম সাগর ওই প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে শাকতলা এলাকার অলী আহমেদের ছেলে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম
নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক যুবক মারা গেছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বায়েজিদের চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬)। তিনি নির্মাণাধীন ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ধসে পড়া দেয়ালে চাপা পড়েন। এতে তার মৃত্যু হয়। বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আতংক কাটেনি উপকূলে
নদীতে ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও আতঙ্ক কাটেনি উপকূলীয় জনপদে। বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানিতে জনপদ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ উপচে এবং প্রবল বর্ষণে শত শত মৎস্যঘের প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকার ৫৪১ কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ সাতক্ষীরা জেলা শহর বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এদিকে, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের একাধিক পয়েন্টে গাছগাছালি ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা ভেঙে পড়া গাছগাছালি সরিয়ে ফেলায় ভোর রাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। রোববার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলীয় অঞ্চলের মূল ভূখ-ে আঘাত হানে। এ সময় সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে ছিল ভাটার প্রবাহ। যার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওয়েজ কুরুনি বলেন, ‘রবিবারের মতো আজও সাতক্ষীরা উপকূলে ঝড় এবং বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। উপকূলে অবস্থান করা সাংবাদিক এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালে সাতক্ষীরা উপকূল এলাকায় খুব বেশি ক্ষতি না হলেও নদ-নদীগুলো এখনও উত্তাল। এর আগেও দেখা গেছে, সাতক্ষীরা উপকূলে ঝড়ের চেয়ে লবণাক্ত জলের কারণে বেশি ক্ষতি হয়। উপকূলের মাটির বাঁধগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এখনও বৃষ্টি এবং ঝড় হচ্ছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, এতে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এ জন্য আতঙ্ক কাটেনি সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রশাসন সেটি এখনও নিরূপণ করে আমাদের জানাতে পারেনি।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে। রাত ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি ও ঝড় বয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল বর্ষণে ৪০-এর অধিক মৎস্যঘের ভেসে গেছে। শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে। বাঁধ না ভাঙলেও কোথাও কোথাও বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বৃষ্টিতে বাঁধগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সোমবার দুপুর থেকে আবারও বৃষ্টি এবং ঝড় শুরু হয়েছে। কী হবে আল্লাহ ভালো জানেন।’
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজিবুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়াসহ বারোটি ইউনিয়নে ৫৪১টি কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩টি সম্পূর্ণ এবং ৪৪৮টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল জোয়ারে নদীর পানি ছাপিয়ে কোথাও কোথাও লোকালয়ে প্রবেশ করলেও বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গতকালের টানা বর্ষণে কিছু মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মহাবিপদ সংকেত কমে আসলেও উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার গাছপালা উপড়ে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের। রোববার (২৬ মে) রাত ৯টা থেকে শুরু হওয়া তা-ব অব্যাহত রয়েছে। যার বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। উপকূলবাসী বলছে ঘূর্ণিঝড় সিডরকেও হার মানিয়েছে এ রেমাল।
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, সোমবার সকালে পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়েছ। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম করে খুলনার কয়রার কাছে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে পরে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রিমালের তা-বে এখন পর্যন্ত ৭৬০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে আংশিক ৬২০ ও সম্পূর্ণ ১৪০টি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম।
বৃষ্টি থাকবে বুধবার পর্যন্ত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলজুড়ে তা-ব চালানোর পর দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও দুর্বল হয়ে যাবে। তবে এর প্রভাবে সারাদেশে তিন দিন ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর মধ্যে দুই দিন কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। সোমবার আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সব বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টি মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ঝড়বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে আগামী বুধবার পর্যন্ত।
তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোমবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই পাঁচ দিন তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ২ কোটি ২২ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। সংস্থাটি বলেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তা-বের সময় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে অনেক এলাকা ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা যাবৎ বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। ঝড় পুরোপুরি থেমে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় আছেন পল্লীবিদ্যুতের কর্মীরা।
১০ ফুট পানির নিচে সুন্দরবন
রেমালের ব্যাপক তা-বে এবারও বুক চিতিয়ে লড়েছে সুন্দরবন। ঝড়ের সামনে লড়াই করে বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই বন। ঘূর্ণিঝড় রেমাল এগিয়ে আসার আগমুহূর্তে আবারও আলোচনায় বাংলাদেশ অংশে ছয় হাজারের বেশি বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান, ইয়াসের মতো এবারও সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড় রেমালকে মোকাবিলা করেছে।
যদিও ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে বন্যপ্রাণীর বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে বন বিভাগ।
রোববার দুপুরের পর থেকেই সুন্দরবনে পানির চাপ বাড়তে থাকে। বিকেল নাগাদ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে যায়। বিশেষ করে কটকা, কচিখালি, নীলকমল, মান্দারবারি, হলদিবুনিয়া এলাকা সবচেয়ে বেশি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব এলাকা হরিণ, বানর, শুকরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এসব প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন বিভাগ। এছাড়া সুন্দরবনের ভেতরে সবগুলো মিঠা পানির উৎস পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণী, বনজীবী ও বনকর্মীদের খাবার পানি নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
সুন্দরবন বন বিভাগের বনসংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি সেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি, সুন্দরবনের যে মিঠা পানির পুকুরগুলো রয়েছে যা বন্যপ্রাণী, বনজীবী এবং বনকর্মীদের খাবার পানির একমাত্র উৎস; প্রতিটি পুকুরই লোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া পানির উচ্চতা সেখানে ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হয়েছে। বনে বাঘ শাবক, হরিণ শাবক কিংবা শকুন শাবক এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী আছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্যপ্রাণীরা এখানে হয়তো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে গাছপালার খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কটকা, কচিখালি, নীলকমল, মান্দারবারি, হলদিবুনিয়া- যে সমস্ত বন্যপ্রাণীর অভায়ারণ্য এলাকা সেগুলো এবং সুন্দরবনের একদম দক্ষিণে সব জায়গা ৭ থেকে ১০ ফুটের মতো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। কাজেই এসব স্থানে পানির যে উচ্চতা, পানির যে তীব্র স্রোত হচ্ছে তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, বন্যপ্রাণীদের যথেষ্ট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।