ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশের বড় একটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩ কোটির উপরে গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে।
গতকাল সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়, দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৫০ সংযোগ আবার দেয়া হয়েছে। আর বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১টি সংযোগ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আরইবি’র ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৬৫টি সমিতির আওতায় আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩০টি সমিতির আওতায় বিদ্যুতের ২ হাজার ৭১৮টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ হাজার ৩৬৩টি ট্রান্সফরমার বিনষ্ট হয়েছে, ইনসুলেটর ভেঙে গেছে ২১ হাজার ৮৪৮টি, মিটার বিনষ্ট হয়েছে ৪৬ হাজার ৩১৮টি। ওজোপাডিকো’র ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার। বিদ্যুতের খুঁটি নষ্ট হয়েছে ২০টি, হেলে পড়েছে ১৩৫টি, তার ছিঁড়ে গেছে প্রায় ২৪ কিলোমিটার।
এ ছাড়া ট্রান্সফরমার বিনষ্টসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এখানে কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আরইবি ও ওজোপাডিকো’র সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আরইবি ও ওজোপাডিকো’র লোকজন প্রয়োজনীয় মালামালসহ প্রস্তুত রয়েছেন। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি ৭৯ কোটি ২ লাখ টাকা বলে ধারণা করা হয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আরইবি’র বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে প্রায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহক ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০। বেলা ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহক সংখ্যা ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১।
মন্ত্রণালয় জায়ায়, ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী ঋঝজট-এর অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থাপনাসমূহের কোনো ধরনের ক্ষতিসাধিত হয়নি। ঘূর্ণিঝড় চলমান থাকায় ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ সরজমিন পরিদর্শনপূর্বক নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাগণের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তদারকি করা হচ্ছে। জেলা পর্যায় ও সমিতিভিত্তিক কন্ট্রোল রুম রয়েছে। পরিবহন ঠিকাদারকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এলাকায় সকল ধরনের কর্মকর্তাগণের ছুটি বাতিল করে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)-এর লোকজন প্রয়োজনীয় মালামালসহ প্রস্তুত রয়েছে। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে বলে জানানো হয়। এদিকে, গতকাল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সিদ্ধিরগঞ্জ-উলন গ্রিড ট্রিপ করেছে। এতে রাজধানীতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। ডিপিডিসি সূত্র বলছে, মানিকনগর স্টেশন থেকে মাতুয়াইলে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে থাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আস্তে আস্তে ঠিক করা হচ্ছে। ডিপিডিসি সূত্র জানিয়েছে, দুপুর আড়াইটায়, উলন-সিদ্ধিরগঞ্জ লাইনে ট্রিপ করে। একই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ-হরিপুর লাইন ট্রিপ করেছে। এরপর থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে। বৃষ্টি এবং তাপমাত্রা কম থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। অন্যান্য সময়ে ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো চাহিদা হতো। বাংলামোটর, ধানমণ্ডিসহ অনেক এলাকা থেকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ডিপিডিসি’র বক্তব্য হচ্ছে, বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিতরণ লাইন এবং ট্রান্সফরমারে অনেক জায়গায় সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে সে সব এলাকায় কিছুটা সংকট হতে পারে।