বর্তমানে ৪ কোটি ৬৮ লাখ গ্রাহকের মাধ্যমে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের দুই কোটি ৭০ লাখের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আগেই ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকের সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। একই সঙ্গে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, গাছপালা ভেঙে তার ছিঁড়ে এবং সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১০০ কোটি টাকার মতো।
অনেক এলাকায় বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতি দুই দিন অতিক্রম করেছে। যেসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে এসেছে সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলোর কর্মীরা পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করে দিয়েছে বলেও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) কর্মকর্তারা জানান।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিচালক (কারিগরি) রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমাদের বিতরণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঝড় কমে যাওয়ার পর দ্রুতই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে দিতে আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। যেসব এলাকায় ঝড় কমে এসেছে সেসব এলাকায় আমাদের কর্মীরা কাজ শুরু করেছে।’
রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) দৈনিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র তিন হাজার ৭৫১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় চাহিদা কমে গেছে। যার ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধাপে ধাপে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে।
গতকাল রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির এলাকায় সব ধরনের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্রসহ কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঝড় কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বেশির ভাগ সমিতিতে গ্রাহক সংযোগ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ এলাকায় গতকাল রাত পর্যন্ত সার্বিকভাবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৯২ কোটি ২০ লাখ টাকা। বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৭১৮টি, ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৩৬৩টি, স্প্যান (তার ছেঁড়া) ৭১ হাজার ৮৬২টি, ইনস্যুলেটর ভেঙেছে ২২ হাজার ৮৮৬টি আর মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৬৫টি। পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ এলাকায় বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০।
গতকাল পর্যন্ত ওজোপাডিকোর প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫৫টি, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়েছে ২৪ কিলোমিটার, ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২টি, ইনস্যুলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩৪টি। বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহকসংখ্যা চার লাখ ৫৩ হাজার ৮১।
গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া বিআরইবির তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত রবিবার দুপুর থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, মেহেরপুর, মাগুরাসহ বেশ কিছু জেলার বেশির ভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, জেলায় চার লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান বলেন, রবিবার রাত থেকেই ঝোড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সোমবার সকাল ৮টা থেকে পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2024/05/28/1392070