ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ১৬ জেলার উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এর মধ্যে দুইজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তাদের একজনের নাম শরিফুল ইসলাম অন্যজনের নাম শওকত মোড়ল। তাদের বাড়ি যথাক্রমে বরগুনা এবং সাতক্ষীরা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানও। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কার হাচ্ছে। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ডুবে বরগুনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পটুয়াখালী থেকে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মী জানান, ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে বাতাস এবং মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এই মুহূর্তে বাইরে কি হচ্ছে তা কেউ বলতে পারছে না। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ অমান্য করে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে এখন কেউ বলতে পারছেন না। উপকূলীয় এলাকার মানুষজন বিপদের মধ্যে আছেন। লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে গভীর রাতে রাজধানী ঢাকাতেও বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে তীব্র গতির বাতাস এবং জোয়ারের কারণে ফল-ফসল এবং মাছ ও গবাদিপশু ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন উপকূলবাসী। জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। শাক-সবজিসহ নানা ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের, কৃষকের সম্বল গবাদিপশু ও বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে বহুসংখ্যক গাছ-গাছালি। এসময় তীব্র বাতাস, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। অবশ্য আবহাওয়া অফিস থেকে আগেই জানানো হয়েছিল যে, ১৬ জেলার উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস বয়ে যাবে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচরে শরীফুল ইসলাম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শরীফুল কলাপাড়া উপজেলার অনন্তপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে।
অন্যদিকে সাতক্ষীরায় নিহত শওকত মোড়ল নাপিতখালি গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। নিহতের ভাতিজা নুর মোহাম্মদ জানান, বিকেলের পর থেকে প্রচণ্ড ঝড় ও নদীতে তুফান উঠলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। চাচা শওকত মোড়ল নাপিতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জামাকাপড়সহ স্ত্রীকে নিয়ে বের হন। বাসা থেকে বাঁধের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে মারা যান তিনি।
১২০ কিমি বেগে আঘাত
ঘূর্ণিঝড় রেমাল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে স্থলভাগে আঘাত হানে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় নেয়। পরবর্তী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল যতই এগিয়ে আসতে থাকে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বাতাসের গতিবেগ। এর ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিসহ ঝড়োহাওয়া বয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাসে পানি বেড়ে তলিয়ে যায় সুন্দরবন। পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। উপকূলীয় জেলাগুলোতে দমকা বাতাস ও বৃষ্টি ঝরতে শুরু করে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে জানা যায়, বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম শুরু করে। তখন আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় মধ্যরাত নাগাদ এর মূল অংশ অতিক্রম করতে পারে। একই সঙ্গে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদসংকেত বহাল রাখা হয়।
ঘূর্ণিঝড় গতিবিধি সম্পর্কে জানা যায়, বিকেলে এর গতিপথ ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার থাকলেও অতিক্রম শুরুর পর গতিপথ বেড়ে ঘণ্টায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার হয়। ঘূর্ণিঝড়ের পুরোটা অতিক্রম করবে মধ্য রাতের পর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
এছাড়াও উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রাখা হয়। এসব অঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কার কথা জানায় আবহাওয়া অফিস।
বরগুনা : পানির তোরে আমতলীর বালিয়াতলী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে আমতলী ও তালতলী উপজেলার ২৭ গ্রাম প্লাবিত হয়। দুই উপজেলার ২৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় আমতলী-বরগুনা রুটের ফেরি চলাচল। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ভেসে গেছে বোরো ধানের খেত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এ বাঁধ ভেঙে গেছে।
জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে আমতলীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের আরপাঙ্গাশিয়া, তারিকাটা, লোছা, বৈঠাকাটা, বাসুগি, নয়াভাঙ্গলী, ফেরিঘাট, খাদ্যগুদাম সংলগ্ন চর, ওয়াপদা চর, পশ্চিম ঘটখালী, আংগুলকাটা, গুলিশাখালীর জেলেপাড়া তলিয়ে গেছে। তালতলী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের মরানিদ্রা, আগাপাড়া, মেনিপাড়া, গোড়াপাড়া, অংকুজানপাড়া, মোয়াপাড়া, নামিশেপাড়া, ছোবাহাপাড়া, খোট্টারচর, জয়ালভাঙ্গা, আশারচর, তেতুল বআড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, সকিনা, আমখোলা গ্রামও প্লাবিত হয়েছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ এর প্রভাবে তেতুল বাড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এওছাড়া ‘রিমাল’ মোকাবিলায় উপজেলায় ৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পিরোজপুর : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জোয়ারে পানিতে পিরোজপুরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া জোয়ারে পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করে। কোনো কোনো জায়গায় পানির উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। পিরোজপুর জেলার নামাজপুর, ভাইজোড়া, শারিকতলা, পাড়েরহাটসহ কাউখালী, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকার লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। তুলনামূলক নীচু এলাকার ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। এসব এলাকার শাকসবজিসহ নানা ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুফু ও বোনকে বাঁচাতে গিয়ে পটুয়াখালী জেলার কাওয়ারচর এলাকায় শরীফ নামের এক যুবক সাগরে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন।রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর মহিপুর উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই যুবক অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে। মহিপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বার্তা২৪.কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুফু ও বোনকে বাঁচাতে গিয়ে পটুয়াখালী জেলার কাওয়ারচর এলাকায় শরীফ নামের এক যুবক সাগরে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন। তার লাশ নৌ পুলিশ উদ্ধার করেছে।
তিনি আরও জানান, শরীফের ফুফু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ার চর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর একটার
দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যান। এ সময় সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানি উঠে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ ভেসে যান। এক ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন : মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে সর্বাত্মকভাবে কাজ হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি আঘাত হানার আগে আমরা সকল মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে আসতে পারবো। ঝড় পরবর্তী সময়ে কাজ করার জন্য আমাদের মেডিক্যাল টিমগুলো প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানেও আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর লোক যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে তৈরি হয়ে আছে। ঝড়ের পর যেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে অন্য এলাকার কর্মকর্তারা কাজ করতে পারেন সেজন্য টিম গঠনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই আমরা প্রস্তুত রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি কার্যক্রম করছেন জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার নেতৃত্ব এবং পরামর্শে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।
তিনি বলেন, শহর-গ্রাম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যানজট হতে পারে, স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লঞ্চ-স্টিমার যেগুলো চলাচল করছে সেগুলো বন্ধ থাকবে। রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তলিয়ে গেছে সুন্দরবন : ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে পুরো সুন্দরবন। রবিবার দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের ওসি আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। তবে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুরো সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে থাকা বনরক্ষীদের এরইমধ্যে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এরইমধ্যে মোংলা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পৌর মেয়র শেখ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি কাজ ও রোগীদের কথা চিন্তা করে মোংলা নদীতে ফেরি চালু রাখা হয়েছে।’ পৌর শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনকে আনতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নোয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় টানা বর্ষণ ও জোয়ারে পানিতে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের শতাধিক ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। অনেকে ঘেরের পাড় মাটি দিয়ে উঁচু এবং জাল দিয়েও শেষ পর্যন্ত মাছ রক্ষা করতে পারেনি। চাষিরা দাবি করছেন, এতে কোটি টাকার অধিক মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে।
রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া জোয়ার শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এতে পুরো নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। নিঝুমদ্বীপের চারপাশে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়।
বরিশালে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত : ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত হানায় বরিশাল বিভাগের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর প্রভাবে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। আবহাওয়া অফিস থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় প্লাবিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে বরিশালের বুড়িশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝালকাঠির বিশখালী ২৬ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখান উপজেলার সুরা-মেঘনা নদীর পানি ৬৪ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিনের মেঘনা ১ মিটার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ভোলার তেঁতুলিয়া ১৪ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বুড়িশ্বর ৩৫ সেন্টিমিটার, বরগুনার আমতলী উপজেলার বুড়িশ্বর নদীর পানি ৩৩ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বিশখালী ৬৭ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বিশখালী ৭২ সেন্টিমিটার, পিরোজপুরের বলেশ্বর নদী ৩৩ সেন্টিমিটার ও পিরোজপুরের কঁচা নদী ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পানি বৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের, ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানি নেমে গেলে ভাঙন দেখা দেবে। আগামী দু-একদিন এভাবে পানি থাকতে পারে। বরগুনার পশরবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আফজাল সিকদার বলেন, আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধ আগে থেকেই দুর্বল ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে বেড়িবাঁধ ভিজে নরম হয়ে যায়। পরে জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের এলাকায় পানি প্রবেশ করে।
ভোলার মনপুরা উপজেলার সাঁকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সেকান্দর হোসেন বলেন, মনপুরার প্রায় সব জায়গায় পানি উঠেছে। আমাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হলেও গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বিপদে আছি। বিপৎসীমার ওপরে বরিশাল বিভাগের সব নদীর পানি, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, রাঙ্গাবালীতে এক ঘণ্টা টিকে থাকা দায়। প্রবল বাতাসে ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, এ ছাড়া পানি ঢুকে পড়েছে সবখানে। আমরা ভাসছি। কলাপাড়ার খেপুপাড়া রাডার স্টেশন কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল জব্বার শরীফ বলেন, সন্ধ্যায় উপকূলে অগ্রভাগ আছড়ে পড়েছে। বুলেটিন অনুসারে ৪/৫ ঘণ্টায় উপকূল অতিক্রম করবে। পানির উচ্চতা ইতোমধ্যে বেড়েছে। বাতাসের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহমেদ বলেন, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পরপরই নদীর পাড় ও অনিরাপদ স্থানের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। রাত ১২টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে উপকূল অতিক্রমে।