দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছেই না। অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিদিনই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার কোনো উপায় যেন খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। গত কয়েক কার্যদিবসের মতো সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবক’টি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা ১০ কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে।
মূল্যসূচকের অব্যাহত দরপতনের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন কমে তিনশ’ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এতে সাড়ে চার মাসের মধ্যে ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হলো।
রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই ঋণাত্মক হয়ে পড়ে সূচক। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রাও বাড়তে থাকে।
এতে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ৮৩ পয়েন্ট কমে যায়।
তবে লেনদেনের শেষদিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের দরপতনের মাত্রা কিছুটা কমে। এর ফলে দরপতনের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে কিছু প্রতিষ্ঠান। এতে সূচকের পতনের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। অবশ্য এরপরও বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সূচক।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৩১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২২ প্রতিষ্ঠানের। এ ছাড়া ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ১২ই এপ্রিলের পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেল। ২০২১ সালের ১২ই এপ্রিল ডিএসই’র প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ১৮৮ পয়েন্ট। এরপর সূচক আর এত নিচে নামেনি।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবক’টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫০৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে ১৮৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেন কমেছে। লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় কমেনি, চলতি বছরের ৩রা জানুয়ারির পর হয়েছে সর্বনিম্ন লেনদেন।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকার। ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, রিলায়েন্স ওয়ান দ্যা ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড, ওরিয়ন ইনফিউশন, বেস্ট হোল্ডিং, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং স্কয়ার ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৭০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৫টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৯ কোটি ১ লাখ টাকা।