কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে মসলার বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তাপ। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচ, গোলমরিচ ও লবঙ্গসহ নানা মসলা পণ্যের দাম বেড়েছে ২০ থেকে দশ টাকা পর্যন্ত। অসাধু ব্যবসায়ীরা সি-িকেটের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করছে মসলার বাজার। এতে বিপাকে পড়েছে ভোক্তা সাধারণ। প্রতিবছর কুরবানির ঈদের আগে মসলার বাজারে দামবাড়ে কয়েকগুন। সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নজরদারির অভাবে বাজার থেকে কয়েকগুন অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে দুয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারে অভিযান চালিয়ে দায় সারেন। সি-িকেটের মূলহোতা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গত বছরের অক্টোবরে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। বর্তমানে সেই এলাচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। লবঙ্গের দাম মাঝে কিছুটা কমলেও বর্তমানে আবার ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লবঙ্গের দাম কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে মানভেদে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭০৫ টাকা। একইভাবে ৭৫০ টাকার গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দারুচিনি, হলুদ, কালোজিরা, তেজপাতা, মরিচসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্যের। চট্টগ্রাম কাস্টমস জানিয়েছে, কুরবানির ঈদ সামনে রেখে পর্যাপ্ত মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। কুরবানির আগে সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে আমদানি করা মসলাজাতীয় পণ্য দ্রুত খালাস করে দেওয়া হচ্ছে কাস্টমস থেকে। আমদানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে ভারত থেকে জিরা এবং এলাচ; ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম এবং গুয়েতেমালা থেকে লবঙ্গ, দারুচিনি এবং অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্য এসেছে। সর্বশেষ পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৪ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন এলাচ, ৪১ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন জিরা, ৩২ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন লবঙ্গ এবং ২৯ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন গোল মরিচ আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি।
চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস জানান, মসলার বাজার সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। দাম নির্ভর করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকটসহ একাধিক বিষয়ের ওপর। রপ্তানিকারক দেশেও মসলার দাম বেড়েছে। ফলে দেশের মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে দাবি তার।
এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে বেড়েছে আদা-কাঁচা মরিচের দাম। দাম কমেছে শসা, পটল, বরবটি, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গাসহ কিছু সবজির। আদা-কাঁচা মরিচের ঝাঁজে সবজির দাম কমার সুফল মলিন হয়েছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজ, তেল, ডালসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ-মাংসের দামও।
গতকাল শুক্রবার নগরীর কাজীর দেউড়ি, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে শসা, পটল, বরবটি, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ও বেগুনের। এরমধ্যে ১০ টাকা দাম কমে শসা ৫০, ২০ টাকা দাম কমে পটল এবং বরবটি ৪০, কাকরলের দাম ২০ টাকা কমে ৮০, ১০-১৫ টাকা দাম কমে চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়স ৫০ এবং বেগুন ২০ টাকা কমে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ৬০-৮০ টাকা বেড়েছে আদা ও কাঁচা মরিচের দাম।
বাজারে আদা ২৮০ এবং কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গাজরের দামও বেড়েছে ৪০ টাকা, বর্তমানে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সবজিটি। প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য সবজির দাম। বর্তমানে টমেটো ৫০, লাউ ৪০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, আলু ৬০, পেঁপে ৮০, করলা ৬০, ফুলকপি ৬০, ধুন্দল ৫০, কচুরমুখী ৮০, ঝিঙে ৬০ এবং লতি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে আকার ও জাত ভেদে দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮০, সয়াবিন তেল ১৫০, পাম তেল ১৩৪, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮০০, চিনি ১৩০ এবং মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে নগরে।
প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ-মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগি ২১০, সোনালি ৩৪০ এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে গরুর মাংস ৮০০ থেকে সাড়ে ৯শ এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১১’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আকার ভেদে রুই ২৬০ থেকে ৩৬০, কাতলা ৩২০ থেকে ৩৬০, মৃগেল ২০০-২৫০, আকার ভেদে পাঙ্গাস ১৮০-২০০, তেলাপিয়া ২০০-২২০, স্যালমন ফিশ ৪৫০, বাগদা চিংড়ি ৮০০, রূপচাঁদা জাত ও আকার ভেদে ৫৫০ থেকে ৬০০, পোয়া মাছ ২৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০, সুরমা ৩৫০ থেকে ৬৫০, টেংরা ৩৭০ এবং নারকেলি মাছ ২৫০টাকায় এবং পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০টাকা কেজি দরে।