রাঙামাটির কাপ্তাই উচ্চবিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষকের পদ খালি তিন বছর ধরে। চার বছর ধরে খালি ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষকের পদটি। নেই ভৌতবিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি শিক্ষকও। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো শিক্ষকও যোগ দিচ্ছেন না। এতে ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
শুধু কাপ্তাই উচ্চবিদ্যালয়ে নয়, এ রকম চিত্র পুরো রাঙামাটি জেলায়। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নতুন নীতিমালা অনুযায়ী অন্য এলাকার নিবন্ধনধারী শিক্ষক পাহাড়ে পদায়ন করা হলেও তাঁরা বিদ্যালয়ে যোগ দিচ্ছেন না। অন্যদিকে অনেক শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় বছর বছর শূন্য পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষক-সংকটে পড়ছে বিদ্যালয়গুলো।
রাঙামাটি জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ৮ বছরে জেলায় প্রায় ২০০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও যোগদান করে মাত্র ৫০ শতাংশ। এ থেকে আরও ১৫ শতাংশ শিক্ষকতা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, জেলায় এমপিওভুক্ত উচ্চ ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৮। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের শূন্য পদ ৩৫৮টি। বছরের পর বছর ধরে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক নেই অনেক বিদ্যালয়ে।
এনটিআরসিএর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ চাইলে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারে না। শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, সমতল অঞ্চল থেকে নিবন্ধন পাস করা শিক্ষকদের পাহাড়ে পদায়ন করা, কম বেতন, ভৌগোলিক বাস্তবতা, সুযোগ-সুবিধার অভাবসহ নানা সমস্যার কারণে বিদ্যালয়ে যোগ দেন না শিক্ষকেরা। অন্যদিকে পাহাড়ে স্লাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা অনেকের নিবন্ধন সনদ না থাকায় এনটিআরসিএর পদায়নে শিক্ষক হতে পারছেন না। এ কারণে জটিল অবস্থায় পড়েছে পাহাড়ের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা।
কাপ্তাই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ‘একজন শিক্ষক না থাকলে যেখানে পাঠদান ব্যাহত হয়, সেখানে আমার বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। কেউ আসতে চায় না।’
মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় ও মোনঘর শিশুসদনের নির্বাহী পরিচালক অশোক কুমার চাকমা বলেন, এনটিআরসিএর নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পাহাড়ের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে। মোনঘর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দিয়ে পরিচালিত আশ্রম ও বিদ্যালয়। আগে এখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ছিলেন। এসব শিক্ষক অবসরে যেতে যেতে বাকি আছে মাত্র একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক।
অশোক কুমার বলেন, এনটিআরসিএ এখানে বাইরে থেকে শিক্ষক নিয়োগ করলে তাঁরা থাকেন না। পাহাড়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না করলে এখানে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে।
কাউখালীর ঘাগড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবৃর্শে মারমা বলেন, এনটিআরসিএ নীতিমালা পাহাড়ে খারাপ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। অনেক সমস্যা তো আছেই। ধর্ম শিক্ষককে ইংরেজি পড়াতে হচ্ছে। কৃষিশিক্ষার শিক্ষককে গণিত পড়াতে হচ্ছে। এভাবে তো শিক্ষাব্যবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।
রাঙামাটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মৃদুল কান্তি তালুকদার বলেন, জেলায় শিক্ষক-সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এটি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মে মাসের তথ্যমতে জেলায় ৩৫৮ জন শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এটি আগামীতে আরও বাড়বে। তা ছাড়া বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, লংগদু, কাপ্তাই ও জুরাছড়ি উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা নেই। নেই উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাও। পাহাড়ের এ করুণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উত্তরণে এনটিআরসিএর কিছু নীতিমালা শিথিল করা প্রয়োজন।
পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক জেলা মাধ্যমিক বিভাগটি জেলা পরিষদের অধীনে। এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, ‘দুর্গম এলাকার কথা বাদ দিলাম। আমার এলাকা বেতবুনিয়া চট্টগ্রাম শহরের পাশে। এ বিদ্যালয়েই এনটিআরসিএ নিয়োগ করা শিক্ষক যোগদান করে না। সেখানে বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়িতে কীভাবে যাবে? পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’