ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন, এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবন, মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবন ও কার্জন হল এলাকায় ৩৫টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ থেকে ১০ হাজার। মোকাররম ভবনের পাশেই বিজ্ঞান লাইব্রেরি। এসব এলাকাজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যান্টিন আছে মাত্র একটি। সেটি মুজিবুর রহমান গণিত ভবনে।
এত বড় এলাকায় পর্যাপ্ত ক্যান্টিন-ক্যাফেটরিয়া না থাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস-ল্যাব চলাকালে খাবার খাওয়া নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অনেক শিক্ষার্থীকে না খেয়েই ক্লাস-ল্যাব (ব্যাবহারিক ক্লাস) করতে হচ্ছে। বিশেষ করে অসুবিধা হচ্ছে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে এলেও পর্যাপ্ত ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়া বা খাবারের দোকানের ব্যবস্থা করছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞান লাইব্রেরির পেছনে আগে কিছু দোকান ও কার্জন হল এলাকায় বিজ্ঞান কারখানার পাশে জহিরের ক্যান্টিন নামে একটি খাবারের দোকান ছিল। গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ‘অবৈধ ও অনুমোদনহীন’ খাবারের দোকান তুলে দেয়।
গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান লাইব্রেরির পেছনে খাবারের দোকানের কোনো অস্তিত্ব নেই। আর বিজ্ঞান কারখানার সঙ্গে ‘জহিরের ক্যান্টিন’টি বন্ধ আছে।
ক্যান্টিনের দরজায় সাঁটানো কাগজে লেখা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তালা/দোকান খোলা সম্পূর্ণ নিষেধ’।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোনো রকম বিকল্প ব্যবস্থা না করেই দোকানগুলো উচ্ছেদ করায় খাবারের জন্য তাঁদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মেডিক্যাল মোড়ে বা শহীদুল্লাহ হলের দোকানে খাবার থাকলেও মান ভালো না। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য এলাকায় গিয়েও খাবার খেয়ে আসতে বেশি সময় লাগে। এ জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা-৫টা পর্যন্ত অনেক সময় খাবার না খেয়েই ক্লাস-ল্যাব করতে হচ্ছে।
ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সাবেকুর নাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই একটা স্বাস্থ্যকর খাবারের জায়গার অভাব বোধ করছি। জহিরের ক্যান্টিন, শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপারের দোকানগুলোতে বসার জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বা বসেই খেতে হতো। বর্তমানে সেগুলোও কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। ফলে দুপুরের খাবার না খেয়েই বিকেল পর্যন্ত ক্লাস-ল্যাব চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বিজ্ঞান অনুষদের আশপাশে মেয়েদের সবচেয়ে নিকটবর্তী হল সুফিয়া কামাল হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাবার খেয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই না খেয়েই পার করতে হচ্ছে দিনের দীর্ঘ একটা সময়।’
মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মমতাজ জিন্নাত সাগর বলেন, ‘মোকাররম ভবনের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এখন খাবারের জন্য চানখাঁরপুল, মেডিক্যাল মোড় অথবা পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ক্যান্টিনে যায়। কার্জন হলের শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপারে খেতে যায়। কিন্তু এটা ছেলেদের আবাসিক হল, মেয়েরা অস্বস্তি বোধ করে এখানে খেতে যেতে। আবার সুফিয়া কামাল হলে অনাবাসিক মেয়েদের ঢুকতে দেয় না। এতে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা। ক্লাসের মাঝে গিয়ে এত দূরে খাবার খেয়ে আসা সম্ভব না দেখে না খেয়েই অনেকে ক্লাস-ল্যাব করছে।’
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন বলেন, বর্তমানে বিজ্ঞান লাইব্রেরির পেছনের দোকানগুলো ও জহিরের ক্যান্টিন বন্ধ করে দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা মেডিক্যালের ওদিকে ভ্যানের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিজ্ঞান, আইন বিভাগে প্রায়ই সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস-ল্যাব থাকায় দূরে গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার সুযোগটাও নেই। এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। প্রায়ই না খেয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কামোক্যাচা (কাজী মোতাহার হোসেনে ক্যান্টিন চাই) নামে আন্দোলন করছেন। গত বছর আগস্ট মাসে কার্জন হল-মোকাররম ভবনে ক্যাফেটরিয়া ও ক্যান্টিন চাওয়াসহ তিনটি দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন এসব দাবি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। তাই তারা বিকল্প ব্যবস্থা না করেই খাবারের দোকান উচ্ছেদ ও বন্ধ করে দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুস সামাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিজ্ঞান লাইব্রেরির পেছনে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবারের দোকানগুলো ছিল, সেগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নতুন করে উন্নতমানের একটি ক্যান্টিন স্থাপন করবে বিশ্ববিদ্যালয়। এই সময়ের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অতিদ্রুতই শক্তি ইনস্টিটিউটের পাশে একটি ক্যান্টিন চালু করা হবে।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/05/21/1389875