টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরও আওয়ামী লীগ সরকার মোটেই নির্ভার হতে পারেনি বরং তাদেরকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমী শক্তির অব্যাহত উদ্বেগ-উৎকন্ঠার ও তাগিদের মধ্যেই সরকার দেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন একতরফাই সেরে নিয়েছে। বিরোধীদলসহ আন্তর্জাতিক মহলের কোন কথায় তারা কর্ণপাত করেনি। অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূক নির্বাচনকে তারা কোনভাবে আমলেই নেয়নি বরং বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আদলেই তারা নিজেদের খেয়ালখুশীকেই প্রাধান্য দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা নীতি-নৈতিকতা, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মোটেই পাত্তা দেয়নি। ফলে দেশে নির্বাচনী সংস্কৃতির অপমৃত্যু হয়েছে বলেই মনে করেন দেশের আত্মসচেতন মানুষ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র শক্তি বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগাদা দিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিয্ক্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে অতিমাত্রায় তৎপর দেখা গেছে। মার্কিন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা এ উপলক্ষে ঘনঘন বাংলাদেশ সফর করেছেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে তারা দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষেই কথা বলেছেন। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার এসব তৎপরতাকে মোটেই পাত্তা দেইনি বরং কঠোর ভাষায় এসবের সমালোচনা করে এসেছে। ধরে নেয়া হয়েছিল সরকার মুখে যত কথা বলুক শেষ পর্যন্ত মার্কিন পরামর্শ ও উদ্বেগ মাথায় নিয়ে তাদেরকে একটা সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। কিন্তু সে আশায় গুঁড়ে বালি পড়েছে। বিশ্ব পরাশক্তিকে একহাত নিয়েই তারা দেশে নিজস্ব মডেলের নির্বাচন দিব্বি করে ফেলেছে। বাজারে এমন কথা চালু আছে যে, আওয়ামী লীগের পক্ষে রাশিয়া, চীন ও বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত দৃঢ় অবস্থান নেয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে একটা বাজে নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতার মেয়াদ পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করে নিয়েছে বলেই সাধারণ মানুষের ধারণা।
অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র সফর নিয়ে নতুন করে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন এই শীর্ষ কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রীর কিছু কথা সে জ¦ালানো আগুনেই ঘি ঢেলে দিয়েছে। তিনি এই মার্কিন কর্মকর্তার সফর নিয়ে বলেছেন, ‘কোন স্যাংশন বা ভিসানীতির তারা কোন পরওয়া করেন না’। তার কথায় ধরে নেয়া হয়েছিল যে, মার্কিন এ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি নতুন মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। যা সরকারের জন্য কিছুটা হলেও বিব্রত হওয়ার মত। কিন্তু ডোনান্ড লু তার সফরকালে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে সফরে এসেছেন তিনি। গত বছর বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে অনেক ‘অস্বস্তিকর’ ছিল স্বীকার করে ডোনাল্ড লু বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজ করে গেছে। আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না। দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী আমরা’। গত ১৫ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন তিনি। সেদিন বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়েছিল। ডোনাল্ড লু’র ভাষায়, ‘আমরা এখন সামনের দিকে তাকাতে চাই, পেছনের দিকে নয়। গেল দুই দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও আস্থা নতুন করে তৈরি করতে এসেছি’। এ সময় আগামীতে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা, শ্রম আইন সংশোধন, মানবাধিকার, দুর্নীতি দমনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
এর আগে ১৪ মে রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে এবং পরে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীসহ সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডোনাল্ড লু। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বক্তব্যও বেশ চমকপ্রদ। তার ভাষায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যেই ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন লু। এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বৈঠকে ভিসানীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয় বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে শ্রমনীতি সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছেন ডোনাল্ড লু। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং সহিংসতা মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই, পেছনের দিকে নয়। আমাদের সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য উপায় বের করতে চাই। এজন্য আমি মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে। যেমন র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম আইনের সংস্কার, মানবাধিকার এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার। এ সম্পর্ক জোরদার করার জন্য আমাদের ইতিবাচক দিক নিয়ে সহযোগিতা বাড়াতে হবে’।
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডোনাল্ড লু’র স্বীকারোক্তি যতটা সরল বাস্তবতা কিন্তু ততটা সরল নয়। তিনি কূটনৈতিক মারপ্যাচে অনেক কথা বললেও বিষয়টি নিয়ে রহস্য এখনো কেটে যায়নি। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যে একটি দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অবলীলায় স্বীকার করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরে দিতে চাইলেও তা শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ। তবে কথার অভ্যন্তরে আরো কথা আছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাই এক্ষেত্রে সরকারের একেবারে নির্ভার হওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তাই সব ক্ষেত্রেই তাদেরকে বেশ হিসেবী হতে হচ্ছে।
তবে একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার খুব একটা স্বস্তিদায়ক সময় পার করছে না বরং নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তাদেরকে অগ্রসর হতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে যেমন কূটনৈতিক সমস্যা রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নানাবিধ চ্যালেঞ্জও। যা নতুন মেয়াদে সরকারের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না। টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের পাঁচ মাস পার হয়েছে। নবীন-প্রবীণদের নিয়ে গঠিত সরকারের সামনে অনেক বিষয়ে সতর্কতা রয়েছে। এর মধ্যে মোটা দাগে রয়েছে, ডলার সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফেরানো। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের এখন পর্যন্ত আহামরি কোন অর্জন নেই। নতুন মেয়াদে সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়নি। নানা অনিয়ম, দুর্নীতিও এখন প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাও এখন বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয়, বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সৃষ্ট টানাপোড়েন তথা সম্পর্কের বরফ গলানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎপর হওয়ার আবশ্যকতা থাকলেও সরকারকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে উদাসীনই মনে হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচনার সরকার কোন যৌক্তিক জবাব দিতে পারছে না বরং নিবর্তনের মাধ্যমেই তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। মূলত তারা ঘরে-বাইরের কোন চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করতে পারছে না।
গত ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদ থেকে গেল ১৫ বছরের বেশি সময়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে দেশের অর্থনীতি-এমনটিই দাবি সরকার সংশ্লিষ্টদের। তারা দাবি করছে, মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রপ্তানি-রেমিট্যান্স রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু তাদের এ দাবি শুধুই কল্পনাবিলাস ছাড়া কিছুই নয়। সরকার করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও সফলতার সাথে মোকাবেলা করতে পারেনি। তারা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের সাফল্যেও দাবি করলেও ডলারের বিপরীতে টাকার মান আশঙ্কাজনকভাবে নেমে গেছে। দেশে তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে ডলারের। অর্থনৈতিক সঙ্কটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। রিজার্ভ কমতে কমতে এখন প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। এর বাইরে নানা অব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। তাই সরকারকে নানা দিক ভেবেচিন্তে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এসব বিষয়ে সরকার কোন কূলকিনারাই করতে পারছে না বরং সরকার রয়েছে লেজেগোবরে অবস্থায়।
দেড় দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন সরকার প্রধান। কিন্তু বাস্তবতার সাথে তার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সময় এই স্বপ্ন দেখান তিনি। কিন্তু অর্জন যৎসামান্যই। বর্তমানে যেসব সঙ্কট রয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে সামনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে। সে কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনাকে সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা দরকার। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। বিশেষত রিজার্ভ সঙ্কট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে নতুন করে রিজার্ভ চুরির খবর প্রকাশিত হয়েছে। যা সরকারকে বড় ধরনের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।
দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়া নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এখন ডলার সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো এলসি খুলতে পারছেন না। কাজেই দ্রুতই এ সঙ্কট সমাধান করা খুবই জরুরি। ব্যাংক খাতেও নানা সঙ্কট চলছে। খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। অনেকে সঠিক কাগজপত্র দিয়েও ব্যাংকের ঋণ পায় না। আবার অনেকে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে কোটি কোটি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। সেগুলোও উদ্ধারে সঠিক পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বক্তব্য হলো, ‘ডলার সঙ্কট নিয়ে আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, অনেক দেরিতে হলেও সরকার সে পথেই হাঁটছে। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে দিচ্ছে। যদিও এতে টাকার অনেক অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে মার্কেটটা কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই নীতি ধরে রাখলে কিছুদিন পর মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে, ছেড়ে দিলে হবে না। ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। এই সমস্যা আইন করে সমাধান করা যাবে না। রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক একীভূতকরণের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেটাও বাস্তবায়ন করতে হবে।
মূলত, অর্থনীতিতে সঙ্কট এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই রিজার্ভ কমছে। চলছে তীব্র ডলার সঙ্কটও। মুদ্রাস্ফীতির কারণে রীতিমত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক থেকে যেসব টাকা চলে গেছে, সেগুলো উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মূলত, ভঙ্গুর গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দেশে দুর্নীতি ও অবক্ষয় প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উছেছে। দেশ এখন অপরাধ ও অপরাধীদের রীতিমত অভয়ারণ্য। সঙ্গত কারণেই নানাবিধ সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে প্রতিনিয়ত। দেশে আইনের শাসনও হয়ে পড়েছে রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ। তাই সরকার চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নিজেদেরকে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা মনে করলেও বাস্তবতা কিন্তু অনেকটাই আলাদা। তাদেরকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই অগ্রসর হতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য দাবি করা হলেও এর মধ্যেও রয়েছে অনেক কথা। ফলে খুব একটা স্বস্তিতে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী।
বর্তমান বিশ্ব গণতান্ত্রিক বিশ্ব। গণতন্ত্রে অনেক কুফলের কথা বলা হলেও সাম্প্রতিক গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য শাসন পদ্ধতি হিসাবে মেনে নিয়েছে। এমতাবস্থায় নানাবিধ অস্বস্তিতে থাকা সরকার স্বস্তিতে ফিরতে চাইলে তাদেরকে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ফিরে আসতে হবে। যেনতেনভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার মধ্যে কোন গৌরব নেই বরং গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারই পারে দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। বিষয়টি ক্ষমতাসীনরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে ততই মঙ্গল।