বাজারে বেড়েই চলেছে অস্থিরতা। দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দাম ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। বাজারে ফার্মের লাল ডিম এখন ৫৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। এ ছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি। কাঁচা মরিচের দাম দেড়শ’ ছাড়িয়েছে। গতকাল সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ডিমের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১৫ দিন আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া ডিম এখন ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
এই হিসাবে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ২৫ পয়সার হিসাব বাদ দিলে প্রতিটি ডিম কিনতে পড়বে ১৪ টাকা। ডিমের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। এ বিষয়ে শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা নাহিন বলেন, গত ১৫ দিন আগেও ১২০ টাকা ডজন দরে ডিম কিনেছি। এখন সেই ডিম ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরমের কথা বলে সিন্ডিকেটরা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের উচিত আরও ভালোভাবে বাজার তদারকি করা।
এদিকে অতিরিক্ত গরমে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বিধায় বাজারে সরবরাহ কমেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে কাজীপাড়াস্থ ব্যবসায়ী আবুল বাসার বলেন, তীব্র গরমে মুরগি মরে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে আগেভাগেই মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারি ব্যবসায়ীরা। এতে ডিমের উৎপাদন কম হচ্ছে বিধায় দাম বাড়ছে। অনেকে বলছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছে। আমাদের সঠিক কারণ জানা নেই। বাজারগুলোতে হাঁসের ডিম ২০০ টাকায় ও দেশি মুরগির ডিম ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে রাজধানীর মুরগির বাজারে চলছে অস্থিরতা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখনো বাড়তি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১৫ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। এদিকে প্রতি কেজি পাকস্তানি সোনালি মুরগি স্থানভেদে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৬০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা।
খাসির মাংস আগের মতোই ১ হাজার ১শ’ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কাজীপাড়ায় অবস্থিত শাহীন গোস্ত বিতানের স্বত্বাধিকারী মো. সোহাগ বলেন, কাঁচা পণ্যের দাম বাড়া-কমার মধ্যেই থাকে, এভাবেই আমাদের বিক্রি করতে হয়। অত্যধিক গরমে মুরগি মরে যাওয়ায় খামারিরা ক্ষতির মধ্যে আছেন। গরম কমলে দাম কমতে পারে। স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেড়শ’ টাকা ছাড়িয়েছে কাঁচা মরিচের কেজি। যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। এখন বেড়ে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। স্থানভেদে পাকা টমেটোর কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে ৮০-৯০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, শজনের ডাঁটা ১৬০ টাকা এবং কাঁচা আম প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লেবুর হালি ২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। বাজারে এখনো চড়া দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২৫০ টাকা ও পাঙাস ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। আকারভেদে ইলিশ মাছের কেজি ১২শ’ থেকে ২ হাজার টাকা, রুই মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চাষের কই মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, চাষের শিং মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর মাছ ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, মৃগেল মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, মলা মাছ ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।