দেশের পাঁচ বিভাগে আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল বুধবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। আবহওয়ার পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, দেশের ৬০ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তাপ প্রবাহ। মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের এই তাপ প্রবাহ শিগগিরই তীব্র হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি অঞ্চলে। কারণ আজ বৃহস্পতিবার দেশের সার্বিক তাপমাত্রা আবারো বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে এবং একই সাথে তাপ প্রবাহ আরো বিস্তৃত হতে পারে। এরই মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে গেছে, ফলে গরমটা এখনি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। গতকাল কেবল কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলিতে সামান্য বৃষ্টিপাত ছাড়া দেশের আর কোথাও বৃষ্টি হয়নি। তবে বর্তমান উচ্চ মাত্রার গরমটা এপ্রিল মাসের মতো দীর্ঘ সময় প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আগামী পাঁচ দিন পরই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে অথবা এর কিছু পরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করে থাকে। এর ফলে দেশে এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। আগামী পাঁচ দিন বা তার কিছু পর যে বৃষ্টিপাত শুরু হতে যাচ্ছে, এটা হয়তো মৌসুমী বায়ুর সাথে মিশে যেতে পারে যদিও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদরা মৌসুমী বায়ুর সাথে এটাকে সম্পর্কযুক্ত করতে চাচ্ছেন না।
এ দিকে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইতোমধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশান্ত মহাসাগরের এল নিনু অবস্থা পরিবর্তন হয়ে শিগগিরই লা নিনা অবস্থায় যাচ্ছে। লা নিনা অবস্থায় গেলে এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এবার হয়তো আগের বছরের চেয়ে বন্যার পরিধি একটু বেশি হবে। এই মতামত দিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. রাশেদ চৌধুরী। তিনি আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এল নিনু, লা নিনা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়ে গবেষণা করে আসছেন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ বৃহস্পতিবার পাবনা, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং রাঙ্গামাটি জেলাগুলোর উপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এই অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করতে পারে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, সিলেট বিভাগের সবগুলো জেলায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অন্য জেলাগুলোর উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ শুধু চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলায় তাপ প্রবাহ নেই। তবে এসব জেলায় যেকোনো সময় তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কারণ এর পাশের জেলাগুলোতেই উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। দেশে বিরাজমান মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তাপমাত্রা উঠেছিল দিনাজপুরে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কের্ড করা হয় ঠাণ্ডাপ্রবণ এলাকা তেঁতুলিয়ায় ২৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার রংপুর বিভাগের আরো কয়েকটি স্থানে বেশ উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিমলায় ৩৭.৯, সৈয়দপুরে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এপ্রিল মাসে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর তাপমাত্রা বেশ সহনীয় ছিল। অন্য দিকে গতকাল রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে ৩৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিলেট বিভাগে তাপ প্রবাহের পূর্বাভাস থাকলেও আজ কিন্তু সিলেট বিভাগে কিছু বৃষ্টিপাত বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়া অফিস বলেছে, আজ সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।