অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা কিংবা তালেবান শাসিত আফগানিস্তান খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে। এ ছাড়া নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতিও এক অঙ্কের ঘরে রয়েছে। তবে বিপরীত চিত্র বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের। দেশ দুটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বিশ্বব্যাংকের ফুড সিকিউরিটি আপডেট প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে। গত মার্চে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। যা গত ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ছিল ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেশটিতে উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি থাকলেও ক্রমান্বয়ে কমছে। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি রয়েছে বাংলাদেশে। বিবিএসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।
যা গত মার্চে ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ আর ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ভারতে। দেশটির পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। মার্চে ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ গত চার মাস ধরে ভারতের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
ভারতের পরেই ভুটানের অবস্থান। দেশটিতে মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যা ফেব্রুয়ারিতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। নেপালের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারির তুলনায় কমেছে। ফুড সিকিউরিটি আপডেট প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত মার্চে দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৯। যা ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৫ দশমিক ৮ এবং গত বছরের ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ ছিল।
মালদ্বীপের খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক। দেশটিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ যা মার্চে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতিও অনেক কম। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ শতাংশ। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে মার্চে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে তালেবান শাসিত আফগানিস্তান। দেশটি সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় ওই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল। মূল্যস্ফীতি ঋণাত্মক থাকার অর্থ হলো কোনো পণ্য ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যদি ১০০ টাকা দাম হয়ে থাকে সেই একই ধরনের পণ্য ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ৮৫ টাকা ৬ পয়সা। অর্থাৎ ১৪ টাকা ৪ পয়সা দাম কমেছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সুদের হারকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। এটি করে অনেক দেশ তাদের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে গত জুনের মুদ্রানীতিতে সুদের হার কিছুটা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হলেও তা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করা হলেও পরোক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, টাকার বিনিময় হারের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ে-কমে। অর্থাৎ টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধি পেলে তখন মূল্যস্ফীতি বাড়ে। যেসব দেশের এক্সচেঞ্জ রেট স্থির আছে, সেসব দেশে সমস্যা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের কৃষি পরিসংখ্যানের তথ্য নিয়ে আমরা সন্দিহান। সরকারিভাবে উৎপাদনের তথ্য ঠিক থাকে না। এজন্য প্রতি বছরই বাইরে থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়। ভুল পরিসংখ্যানের কারণে আমদানির অনুমতি দিতেও দেরি হয়। এসব কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।