মধ্য-গ্রীষ্মে এসে জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হতেই দিনভর প্রখর সূর্যের তেজ যেন আগুনে ঝলসে দিচ্ছে। রাতেও অসহনীয় উত্তাপ। ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। স্বস্তির বৃষ্টির আর দেখা নেই। দিন দিন ক্রমেই বাড়ছে গরমের দাপট। গতকাল বুধবার আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) দুই দিনের হিট হিট এলার্ট জারি করেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়ে উঠে গেছে দিনাজপুরে, ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত মঙ্গলবার সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সে.। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা গতকাল আরও বেড়ে গিয়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৬.৩ এবং সর্বনিম্ন ২৭.৮ ডিগ্রি সে.। গতকাল দেশের অন্যান্য জায়গায় উল্লেখযোগ্য উচ্চ তাপমাত্রা ছিলÑ রাঙ্গামাটিতে ৩৮.৭, পাবনা ও সৈয়দপুরে ৩৮.৫, রাজশাহী ও রাজারহাটে ৩৮, ডিমলায় ৩৭.৯, রংপুরে ৩৭.৭, ফেনীতে ৩৭.৩, মোংলায় ৩৭.১, টাঙ্গাইল ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সে.। দিনের তাপমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে রাতের ‘সর্বনিম্ন’ তাপমাত্রাও ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রির ঘরে উঠে গেছে। তাপপ্রবাহের সাথে বিদ্যুতের বিভ্রাট ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে নানামুখী জনদুর্ভোগ দুঃসহ।
ক্রমেই দেশের অধিকাংশ জায়গায় তাপপ্রবাহ বিস্তার লাভ করেছে। আবহাওয়া বিভাগের জারি করা দুই দিনের হিট এলার্ট সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ গতকাল থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে গরমে-ঘামে জনজীবনে অস্বস্তি অব্যাহত থাকবে। গেল এপ্রিল মাসে দেশে পর পর ৭ দফায় হিট এলার্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে আবহাওয়া বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান, পাবনা, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রাঙ্গামাটি জেলাসমূহের উপর দিয়ে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, সিলেট বিভাগসমূহ; রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত এবং আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে নতুন করে দেশের অধিকাংশ জায়গায় তাপপ্রবাহ বিস্তারের সঙ্গে অনেক জেলা-উপজেলায় জ¦র-সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ^াসকষ্টসহ মৌসুমী রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পুকুর, দীঘি, কূয়াসহ পানির উৎসগুলো আবারও শুকিয়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানির অভাবে ফল-ফলাদি, ফসল-শস্যক্ষেত, শাক-সবজি তীব্র গরমে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করবে।
আগামী শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রা: সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করবে।
এর পরের ৫ দিনের শুরুর দিকে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।