কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঢুকে নারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও গুলিতে বাংলাদেশী এক নাগরিকের ঘরের চাল ফুটো হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউন
গত রোববার বিকেলে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলারকুটি সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৩১-এর পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিজিবির কড়া প্রতিবাদের পর সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম মিয়া ও আব্দুল কুদ্দুসসহ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা কয়েকজন নারী কেটে নেয়া ধান গাছের আড়া (গোড়ায় অবশিষ্ট খড়) সংগ্রহের জন্য নোম্যানসল্যান্ডে প্রবেশ করেন। এ সময় ভারতীয় নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের টহলরত এক বিএসএফ সদস্য তাদের ধাওয়া করেন। ধাওয়া খেয়ে ওই নারীরা দৌড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে বিএসএফ সদস্যও তাদের পিছু নেয়। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রায় ২০ থেকে ৩০ গজ ভেতরে ঢুকে পড়েন ভারতীয় ওই সীমান্তরক্ষী। একপর্যায়ে রাইফেল উঁচিয়ে বাংলাদেশী নারীদের লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছুড়ে দ্রুত ভারতের অভ্যন্তরে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, গুলিতে কারো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও তা লক্ষ্যচ্যুত হয়ে ধুলারকুটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা নুর আলম বাচ্চুর বাড়ির রান্নাঘরের চালে আঘাত করে। এতে ঘরের চালের টিন ফুটো হয়ে গুলিটি মেঝেতে পড়ে। এ সময় রান্নাঘরে থাকা বাচ্চুর পুত্রবধূ ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। গুলির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নুর আলম বাচ্চু বলেন, ‘ওই সময় আমার পুত্রবধূ রান্নাঘরেই ছিল। ভাগ্যিস গুলিটা তার গায়ে লাগেনি। মাঝে-মধ্যেই বিএসএফ এভাবে বাংলাদেশে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর অত্যাচার চালায়। আমরা আতঙ্কে থাকি।’
খবর পেয়ে গোরকমণ্ডল ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার নজরুল ইসলামসহ বিজিবির একটি দল রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নুর আলম বাচ্চুর বাড়ি পরিদর্শন করে গুলিটি নিয়ে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সোমবার সকালে বিএসএফকে কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। পরে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ কোম্পানি পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের শিমুলবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার নরেশ চন্দ্র রায় এবং বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ৯০ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের নারায়ণগঞ্জ কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর রমন সিং। বৈঠকে বিনা উসকানিতে সীমান্তে গুলিবর্ষণের কারণ জানতে চেয়ে কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। তবে এ ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বিএসএফ। এ ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার গতকাল সকালে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের দাফতরিক মোবাইল নম্বরে ফোন ও খুদেবার্তা দিয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।